পাঁচ দিন চেষ্টার পর ভাঙা হলো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
Published: 20th, May 2025 GMT
রাঙামাটি শহরের জেলা সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। পাঁচ দিনের চেষ্টার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাস্কর্যটি সম্পূর্ণ রূপে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফ্যাসিবাবিরোধী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ক ইমাম হোসেন ইমু জানান, চার থেকে পাঁচ দিন ধরে চেষ্টা চালানোর পর ভাস্কর্যটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়েছে।
গত ১৩ মে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে রাঙামাটিতে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে। তা না হলে শুক্রবার থেকে ছাত্র-জনতা নিজেরাই বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয ভাঙবে বলে আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার বিকেল থেকে ১০-১৫ জনের শ্রমিক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলতে অসুবিধায় পড়েন স্থানীয় শ্রমিকরা। পরে চট্টগ্রাম থেকে হ্যামার এক্সক্যাভেটর নিয়ে আসার পর ভাস্কর্যটি পুরোপুরি ভাঙার কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৩১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের দাঁড়ানো ভাস্কর্যটি বিকট শব্দে নিচে পড়ে যায়। ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখতে শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হন। অনেকেই মোবাইল ফোনে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে নির্বাচন কার্যালয় সামনে ও সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পাশে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী খন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। আজকে (মঙ্গলবার) ওই এলাকায় (ভাস্কর্যস্থল) তিনি যাননি।
একই ভাষ্য রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঈদ উদ্দীনের। তিনি জানান, ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।