শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ বছরের পুরোনো অভিযোগ পুনর্যাচাই
Published: 23rd, May 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈধ সম্পদ অর্জনের ২০০৭ সালের একটি অভিযোগ পুনর্যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালে অভিযোগটির পরিসমাপ্তি (প্রমাণিত হয়নি) হয়েছিল।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার হলফনামা সম্প্রতি খতিয়ে দেখা হলে তাতে সম্পদ নিয়ে অসত্য তথ্য পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদক চেয়ারম্যান ড.
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনী হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে। হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদ ও তাঁর ২০০৮ সালের আয়কর বিবরণীর সম্পদ যাচাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি দুদকের নিয়মিত কাজের অংশ। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নেই। নির্বাচনী হলফনামায় দুদকে এমন তথ্য দেওয়া হলে সেটি আইন অনুযায়ী দুদক অনুসন্ধান করে।
ছয় মাস ধরে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো চাপ অনুভব করেননি বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কমিশনে সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েই অভিযোগ বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ওই সময়ের কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগটির পরিসমাপ্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার আয়কর আইনজীবী তৌফীক নাওয়াজের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।
২০০৭-০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি, মিগ-২৯ বিমান ক্রয় দুর্নীতি, বাড়ি সজ্জিতকরণে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, বড়পুকুরিয়া, নাইকো, গ্যাটকো দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল।
এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পর আদালতের রায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা সব মামলা একে একে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে দশম, ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করেছিল। এই দীর্ঘ সময়ে খালেদা জিয়ার কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এ সময়ে তাঁকে জেল-জুলুমসহ নানা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের মাধ্যমে মামলাগুলো করিয়াছিলেন।
ইসিতে দুদকের চিঠি
ইসিতে পাঠানো দুদকের চিঠিতে শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদ ঘোষণায় অসত্য তথ্য দেওয়ায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শেখ হাসিনার সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করা হয়।
ওই সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিল করা পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে তাঁর নিজ নামে অর্জিত কৃষিজমির পরিমাণ ৬.৫০ একর উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ক্রয় করা জমির অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সমসাময়িক সময়ে তাঁর দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনার নিজ নামে অর্জিত ২৮.৪১ একর জমির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে তাঁর ক্রয় করা জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। সে অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয় করা জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০ টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের সংসদ সদস্যপদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে গাড়ি আমদানির এলসির বিপরীতে ব্যাংক থেকে পরিশোধিত মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করেন। নিজ আবাসিক ঠিকানা ‘সুধা সদন’, বাড়ি নম্বর-৫৪, রোড নম্বর-৫, ধানমন্ডি, আবাসিক এলাকা, ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৩৬৪) করেন। নিজে তা ব্যবহার করেছেন। ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তাঁর হলফনামায় গাড়িটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হলফন ম য় ২০০৮ স ল দ খ ল কর সরক র র ব যবস থ অন য য় হ র কর হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত কেন যুদ্ধ করে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের সমাধান করতে পারবে না
সামরিক দিক বিবেচনায় চলতি মাসে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। এ সংঘাতে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের স্পর্শকাতর বিমানঘাঁটিগুলোর হ্যাঙ্গারে ফাটল এবং রানওয়েতে গর্ত তৈরি করতে সক্ষম হলেও দীর্ঘদিনের শত্রুর সঙ্গে তাদের আকাশযুদ্ধে কিছু যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে।
তবে কৌশলগত দিক বিবেচনা করলে, যুদ্ধক্ষেত্রের এ ফলাফলটা ভারতের জন্য স্পষ্টত একটি ধাক্কা। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উদীয়মান এই দেশ এখন নিজেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সমপর্যায়ের অবস্থানে দেখতে পাচ্ছে। সেই পাকিস্তান যেটি আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট, শক্তিতে দুর্বল এবং যাকে ভারতীয় কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
চার দিনের এ সংঘর্ষ আবারও বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ভারত তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ৭৮ বছর ধরে চলা সংঘাতের মীমাংসা করতে অক্ষম। সংঘাতপূর্ণ যেকোনো কর্মকাণ্ডই পাকিস্তানকে সুবিধা দেয়। কারণ, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংঘাত তাদের অন্যতম জীবনীশক্তি।
দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারকে বিবেচনা করলে, কোনো পক্ষের পূর্ণাঙ্গ সামরিক জয় প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।
ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা ভারতীয়রা যেটির জন্য এত সময় ও শ্রম নষ্ট করছি, তা আসলে কৌশলগত বিভ্রম: পাকিস্তান থেকে হওয়া সন্ত্রাস। তবে এটি একটি বাস্তবতা এবং আমাদের উচিত যতটা সম্ভব দক্ষতার সঙ্গে এটাকে সামাল দেওয়া।’
কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়, সে চিন্তাটি সেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় নেতাদের মাথায় ঘুরছে। কয়েকজন কূটনীতিক, বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ভারতের চিরস্থায়ী দুশ্চিন্তার একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরোধ মেটাতে কয়েকটি তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের সমস্যা ক্রমাগত জটিলতার দিকেই এগিয়েছে।
নয়াদিল্লিতে অবস্থানকারী পশ্চিমা কূটনীতিকদের মতে, ভারত এখন এতটাই কূটনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত হয়েছে যে দেশটি তাদের ভাবমূর্তি অনেকটা অক্ষুণ্ন রেখেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে।কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি প্রাণঘাতী হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে চলতি মাসে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। দুই দেশই প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে ড্রোন এবং অন্য আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করায় উত্তেজনা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। পাশাপাশি ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন এবং পাকিস্তানের পক্ষে চীনের অবস্থানের কারণে বিশ্বশক্তির রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মাত্রা পায়।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের নেতারাই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাকে আগলে রেখেছেন। দুই দেশই একে অপরের প্রতি অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। আর এ কারণে কোনো ধরনের আপস বা শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ভারতে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী শাসনের উত্থান হওয়ার পর দেখা গেছে যখনই উত্তেজনা তৈরি হয়, তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডানপন্থী সমর্থক গোষ্ঠী রক্তপাতের দাবি তোলে।
আর অভ্যন্তরীণ এই চাপের কারণে এবার ভারত ২০০৮ সালের মতো সংযম দেখাতে পারেনি। ওই বছর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। তখন ভারত দায়িত্বশীলতা ও সংযমের পরিচয় দিয়েছিল। ওই সময় তারা উপলব্ধি করেছিল, যুদ্ধ ভারতের উত্থানকে থামিয়ে দিতে পারে। আর এ উপলব্ধিটি ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার অভ্যন্তরীণ চাপের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় ভারত সরকার পাকিস্তানে সামরিক হামলার পথ নেয়নি। সেই সময় ভারতের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতার ওপর সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখা এবং সন্ত্রাসবাদে মদদদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা। তখন যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সমপর্যায়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখাতে চায়নি ভারত।
কাশ্মীরের ডাল লেক এলাকায় ভারতীয় সেনাদের অবস্থান