ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রাবেয়া বসরির নাম। তাই যখন আমার দোভাষী রাবেয়া বলখি নামটা উচ্চারণ করল, ভাবলাম সে হয়তো ‘বসরি’ বলতে ‘বলখি’ বলে ফেলেছে। পরে বুঝলাম ভুলটা আমারই। রাবেয়া বসরি আর রাবেয়া বলখি দু’জন আলাদা মানুষ। তাদের বিচরণের ক্ষেত্রও আলাদা। সময়টা এপ্রিল ২০০৪। জাতিসংঘের অধীনে চাকরি নিয়ে প্রথমবারের মতো পা রাখলাম আফগানিস্তানের মাটিতে। প্রথম এক সপ্তাহ রাজধানী কাবুলে ওরিয়েন্টেশনের পর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফে। এটি বালখ প্রদেশের রাজধানী। মূলত ঐতিহাসিক ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদের জন্যই মাজার-ই-শরিফ বিখ্যাত। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন এখানেই রয়েছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলি (রা.
সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসেবে আমি যেখানেই যাই, প্রথমেই খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি সেই জায়গার কবি-সাহিত্যিকের। কিন্তু আফগানিস্তানের মতো একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে, যেখানে কোনো লাইব্রেরি নেই, এসব খবর পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। এ কাজে আমাকে সাহায্য করলেন আমারই দোভাষী আব্দুল মতিন আমিন। (সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মতিন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। ২০১৪-এর দিকে একবার বাংলাদেশেও এসেছিল।) মতিন আমাকে সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকের সম্বন্ধে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে মধ্যযুগের ক’জন কবির সন্ধান দিল। তার মাধ্যমেই জানলাম এবং পরে আরও অনেকের সাথেই মিলিয়ে নিলাম, যাকে আমরা বাংলাদেশিরা একজন ধর্মীয় গুরু হিসেবে জানি সেই মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি আসলে একজন মরমি কবি। স্থানীয়রা তাঁকে কবি জালালুদ্দিন বলখি হিসেবেই জানে। ফার্সি সাহিত্যের তিনি অন্যতম প্রধান কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশে। মতিনই আমাকে ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি, রাবেয়া বলখির সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। প্রথমে অবশ্য আমি তাঁকে রাবেয়া বসরির সাথে মিলিয়ে ফেলেছিলাম, যে কথাটা এই লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি।
রাবেয়া বলখির জীবৎকাল নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। কেউ বলছেন তিনি খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে, কেউ বলছেন দশম শতাব্দীর শুরুতে জন্মেছিলেন, বর্তমান আফগানিস্তানের বালখ বা বলখ শহরে। সে সময়ে দেশটির নাম অবশ্য আফগানিস্তান ছিল না। অনেকেই বলে খোরাসান, আবার কারও কারও মতে ‘তুরান’। রাবেয়ার পিতা ছিলেন বলখের আমির। অনেকটা আমাদের দেশের ছোট রাজা বা জমিদারের মতো। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর ভাই হারিস রাজ্যের ভার গ্রহণ করলেন। রাবেয়া তখন কিশোরী। সে সময়েই তিনি বড় ভাইয়ের দেহরক্ষী তুর্কি বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস বাকতাসের প্রেমে পড়ে যান। অল্প বয়স থেকেই রাবেয়া কবিতা লিখতেন। বাকতাসের প্রেমে পড়ার পর যেন তাঁর কবিতায় বান ডেকে গেল। এক পর্যায়ে বিষয়টি তাঁর বড় ভাইয়ের নজরে পড়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই নিজের দেহরক্ষীর, যে কিনা আবার একজন ক্রীতদাস, তার সাথে বোনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রথমে তিনি বোনকে এ ব্যাপারে নিরস্ত করতে চাইলেন। রাবেয়া কিছুতেই তা মানতে রাজি হলেন না। অতঃপর হারিসের মাঝে চিরন্তন আফগান শৌর্য জেগে উঠল। তিনি রাবেয়া এবং তার প্রেমিক– দুজনকেই বন্দি করে রাবেয়াকে একটা হাম্মামখানায় এবং বাকতাসকে একটা শুকনো কুয়ায় নিক্ষেপ করলেন– যেখান থেকে কারও সাহায্য ছাড়া উঠে আসা সম্ভব ছিল না। হাম্মামে বন্দি থাকা অবস্থাতেই রাবেয়ার মৃত্যু ঘটে। সেখানে থেকেই নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে লিখে যান কিছু অমর কবিতা।
রাবেয়ার কবিতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে অনেকেই অনেক গবেষণা করেছেন, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয়। এখনও অনেকেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বালখ শহরেই রয়েছে রাবেয়ার মাজার। এ ছাড়া রাজধানী কাবুলে তার নামে একটা স্কুলও রয়েছে– রাবেয়া বলখি উচ্চ বিদ্যালয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র র স তম প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনায় ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব, দেশে ফেরার নির্দেশ
দ্য হেগে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (স্থানীয়) শাবাব বিন আহমেদকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছিল।
যোগদান করার আগেই তিনি কলকাতা মিশনে কোরবানি দেওয়ার প্রথা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনার মুখে তাকে কলকাতা মিশনে বদলির আদেশ বাতিল করে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে আসাদ আলম সিয়ামের নাম শোনা যাচ্ছে
দুই দিন পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ উদ্ধার
কোরবানি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে শাবাব নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জানান, হোস্ট কান্ট্রির (ভারত) আস্থা অর্জন করাটা আমাদের জন্য জরুরি। এই আস্থা অর্জনের জন্যই তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কলকাতা মিশনে কোরবানি করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতা মিশনে কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতি বছরই পাঁচ থেকে সাতটি গরু এবং ছাগল কোরবানি করা হয়। এই কোরবানির গোশতের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এতিমখানায় পাঠানো হয়। এছাড়া মিশনের চারপাশে বসবাসকারী মুসলিমদের মাঝেও কোরবানির গোশত বিতরণ করা হয়।
শাবাব বিন আহমেদ একজন কূটনীতিক হিসেবে নেদারল্যান্ডসে ১ বছর ৯ মাস কর্মরত ছিলেন। তার বাবা ১৯৭৩ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা এবং কট্টর আওয়ামী সমর্থক।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী