Samakal:
2025-10-16@00:52:33 GMT

ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি

Published: 23rd, May 2025 GMT

ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি

ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রাবেয়া বসরির নাম। তাই যখন আমার দোভাষী রাবেয়া বলখি নামটা উচ্চারণ করল, ভাবলাম সে হয়তো ‘বসরি’ বলতে ‘বলখি’ বলে ফেলেছে। পরে বুঝলাম ভুলটা আমারই। রাবেয়া বসরি আর রাবেয়া বলখি দু’জন আলাদা মানুষ। তাদের বিচরণের ক্ষেত্রও আলাদা। সময়টা এপ্রিল ২০০৪। জাতিসংঘের অধীনে চাকরি নিয়ে প্রথমবারের মতো পা রাখলাম আফগানিস্তানের মাটিতে। প্রথম এক সপ্তাহ রাজধানী কাবুলে ওরিয়েন্টেশনের পর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফে। এটি বালখ প্রদেশের রাজধানী। মূলত ঐতিহাসিক ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদের জন্যই মাজার-ই-শরিফ বিখ্যাত। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন এখানেই রয়েছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলি (রা.

)-এর কবর। এই মসজিদ প্রাঙ্গণটি অনেকটা পার্কের মতো। প্রতিদিন শতশত তরুণ-তরুণী এই প্রাঙ্গণে এসে ভিড় জমায়। নওরোজ বা নতুন বছরে এটি হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের মিলনক্ষেত্র। ক’দিন মাজার শরিফে থাকার পর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের সামাঙ্গান প্রদেশে, যার রাজধানী আইবাক। এই আইবাক আবার মহাকবি ফেরদৌসির শাহনামায় উল্লিখিত সোহরাব-রুস্তমের কাহিনির জন্য বিখ্যাত। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত ‘তখত-ই-রুস্তম’। বিশ্বাস করা হয় এই তখত-ই-রুস্তমেই পিতা রুস্তমের সাথে পুত্র সোহরাবের শেষ মল্লযুদ্ধটি হয়েছিল। যাক, বালখের ব্লু মসজিদ বা আইবাকের তখত-ই-রুস্তম নিয়ে অন্য একসময় লেখার ইচ্ছে আছে। ফিরে আসি মূল বিষয়ে।

সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসেবে আমি যেখানেই যাই, প্রথমেই খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি সেই জায়গার কবি-সাহিত্যিকের। কিন্তু আফগানিস্তানের মতো একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে, যেখানে কোনো লাইব্রেরি নেই, এসব খবর পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। এ কাজে আমাকে সাহায্য করলেন আমারই দোভাষী আব্দুল মতিন আমিন। (সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মতিন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। ২০১৪-এর দিকে একবার বাংলাদেশেও এসেছিল।) মতিন আমাকে সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকের সম্বন্ধে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে মধ্যযুগের ক’জন কবির সন্ধান দিল। তার মাধ্যমেই জানলাম এবং পরে আরও অনেকের সাথেই মিলিয়ে নিলাম, যাকে আমরা বাংলাদেশিরা একজন ধর্মীয় গুরু হিসেবে জানি সেই মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি আসলে একজন মরমি কবি। স্থানীয়রা তাঁকে কবি জালালুদ্দিন বলখি হিসেবেই জানে। ফার্সি সাহিত্যের তিনি অন্যতম প্রধান কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশে। মতিনই আমাকে ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি, রাবেয়া বলখির সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। প্রথমে অবশ্য আমি তাঁকে রাবেয়া বসরির সাথে মিলিয়ে ফেলেছিলাম, যে কথাটা এই লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। 

রাবেয়া বলখির জীবৎকাল নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। কেউ বলছেন তিনি খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে, কেউ বলছেন দশম শতাব্দীর শুরুতে জন্মেছিলেন, বর্তমান আফগানিস্তানের বালখ বা বলখ শহরে। সে সময়ে দেশটির নাম অবশ্য আফগানিস্তান ছিল না। অনেকেই বলে খোরাসান, আবার কারও কারও মতে ‘তুরান’। রাবেয়ার পিতা ছিলেন বলখের আমির। অনেকটা আমাদের দেশের ছোট রাজা বা জমিদারের মতো। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর ভাই হারিস রাজ্যের ভার গ্রহণ করলেন। রাবেয়া তখন কিশোরী। সে সময়েই তিনি বড় ভাইয়ের দেহরক্ষী তুর্কি বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস বাকতাসের প্রেমে পড়ে যান। অল্প বয়স থেকেই রাবেয়া কবিতা লিখতেন। বাকতাসের প্রেমে পড়ার পর যেন তাঁর কবিতায় বান ডেকে গেল। এক পর্যায়ে বিষয়টি তাঁর বড় ভাইয়ের নজরে পড়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই নিজের দেহরক্ষীর, যে কিনা আবার একজন ক্রীতদাস, তার সাথে বোনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রথমে তিনি বোনকে এ ব্যাপারে নিরস্ত করতে চাইলেন। রাবেয়া কিছুতেই তা মানতে রাজি হলেন না। অতঃপর হারিসের মাঝে চিরন্তন আফগান শৌর্য জেগে উঠল। তিনি রাবেয়া এবং তার প্রেমিক– দুজনকেই বন্দি করে রাবেয়াকে একটা হাম্মামখানায় এবং বাকতাসকে একটা শুকনো কুয়ায় নিক্ষেপ করলেন– যেখান থেকে কারও সাহায্য ছাড়া উঠে আসা সম্ভব ছিল না। হাম্মামে বন্দি থাকা অবস্থাতেই রাবেয়ার মৃত্যু ঘটে। সেখানে থেকেই নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে লিখে যান কিছু অমর কবিতা। 

রাবেয়ার কবিতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে অনেকেই অনেক গবেষণা করেছেন, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয়। এখনও অনেকেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বালখ শহরেই রয়েছে রাবেয়ার মাজার। এ ছাড়া রাজধানী কাবুলে তার নামে একটা স্কুলও রয়েছে– রাবেয়া বলখি উচ্চ বিদ্যালয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র র স তম প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রীনগরে চার যুবকের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে চার যুবকের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর কলেজ এলাকার বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ভিডিওটি গত মে মাসের। ভিডিওতে থাকা যুবকেরা ‘রাসেল-ফয়সাল বাহিনী’ নামের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য এবং শ্রীনগর উপজেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁদের নাম ফয়সাল, রাসেল, অর্পণ, আহির। তাঁদের সবার বয়স ২৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, জনশূন্য একটি স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন চার যুবক। তাঁদের মধ্যে দুজনের হাতে দুটি পিস্তল। একজনকে পিস্তল দেখিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘দামি কিন্তু এইডা, দুইডা দিয়া শট করমু।’ জবাবে অন্যজন বলেন, ‘দুইডা দিয়া শট করা যাইব না, একটা দিয়া শট করতে হইব। গুল্লি রেয়ার, পাওয়া যায় না।’ একজন বলেন, ‘লকটা খুলে টিপ দিলেই গুলি বের হইব।’ এ সময় পিস্তল হাতে নিয়ে আকাশের দিকে গুলি করার চেষ্টা করেন একজন। কীভাবে গুলি করতে হবে, পাশ থেকে বলছিলেন আরেক যুবক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা যুবকদের মধ্যে রাসেলের বাড়ি উপজেলার বাঘরা এলাকায়। ফয়সালের বাড়ি কামারখোলা। আর সাদা টি–শার্ট, কালো প্যান্ট ও টুপি পরা আহিরের বাড়ি শ্রীনগর ইউনিয়নের মথুরা পাড়ায় এবং অন্যজন একই এলাকার কালো পাঞ্জাবি পরা অর্পণ।

শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমূল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিওটি গত মে মাসের। এটি শ্রীনগর কলেজের পেছনের পুকুরপাড় এলাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। শ্রীনগরের পরিবেশ এখন শান্ত। পরিবেশ ঘোলাটে করতে পাঁচ মাস আগের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের ইতিমধ্যে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাঁরা সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা আছে। সবাই আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মধ্যে রাসেলের দুটি চোখ প্রতিপক্ষের লোকজন উপড়ে ফেলেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজী মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে: যুব সংহতি
  • বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু
  • কিশোরগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • মুসলিম জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ৯ উপায়
  • ১৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসুর ফল প্রকাশ: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
  • গুগল ম্যাপে দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে পড়লেন খালে
  • অ্যানথ্রাক্স ঝুঁকি: ঝালকাঠিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই চলছে পশু জব
  • ‘৯৫ শতাংশ পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান’
  • শ্রীনগরে চার যুবকের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের ভিডিও ভাইরাল