ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য প্রধান বলেছেন, ২৭ সদস্যের এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে এর ভিত্তি হবে ‘সম্মান’, ‘হুমকি’ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়ার পর সংস্থাটির দিক থেকে এমন বক্তব্য এলো। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়নি, এমন সব আইফোনে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারেন। পরে তিনি বলেন, সব স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

এ ব্যাপারে ইইউ ট্রেড কমিশনার মারোস সেফকভিস বলেছেন, উভয়পক্ষের জন্য কার্যকর একটি চুক্তি করতে ইইউ পুরোপুরি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির ও বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। 

তিনি বলেন, ইইউ-ইউএস বাণিজ্য পরিচালিত হতে পারস্পারিক সম্মানের ভিত্তিতে, হুমকি নয়। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত আছি।

এর আগে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনার ধীরগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার পরিকল্পনা হলো ১ জুন থেকেই শুল্ক কার্যকর করা।

সামাজিক মাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথ এ ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা কোনো দিক অগ্রসর হচ্ছে না’। গত মাসে ট্রাম্প ইইউ-এর অধিকাংশ পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। তবে পরে আলোচনার জন্য সময় দিতে এর অর্ধেক আটই জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে ১০ শতাংশ বহাল রাখেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হওয়া বা নির্মিত পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না।

তিনি বলেন, আমি কোনো চুক্তির সন্ধান করছি না। আমরা চুক্তিটি তৈরি করেছি। ইউরোপের কোনো কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ হলে তিনি এ নিয়ে বিলম্ব করতে রাজি আছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হিসেবে ইইউ বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠায় আর ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে। ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের সরকারগুলো সতর্ক করে বলেছে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ হলে তাতে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, ‘আমাদের এই পথে যাওয়া উচিত হবে না। এগিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনাই সর্বোত্তম ও টেকসই পথ। 

ফ্যান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা একই পথে আছি; উত্তেজনা কমানো, আবার আমরা জবাব দিতেও প্রস্তুত আছি। 

জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথেরিনা ঘাইচা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সমাধানে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে আমাদের সবকিছুই করতে হবে।

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ সাংবাদিকদের বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনায় ইইউ যে কৌশল নিয়েছে তাকে তিনি সমর্থন করছেন। "যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগেও আমরা শুল্ক কমতে ও বাড়তে দেখেছি।

ট্রাম্পের অভিযোগ হলো- ইউরোপ অসম বাণিজ্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায় কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে। তিনি বলেন, এই বাণিজ্য ঘাটতি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য অন্যায্য। বিশেষ করে তিনি গাড়ী ও কৃষিপণ্যের বিষয়ে থাকা নীতিগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্প অ্যাপলকেও সতর্ক করে বলেছেন আইফোন আমেরিকায় তৈরি না হলে আরও ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে এটি অন্য স্মার্টফোনের জন্যও প্রযোজ্য হবে বলে জানান। অন্যদিকে ট্রাম্পের হুমকির পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে শেয়ার বাজারের দরপতন হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর বল ছ ন র জন য আম দ র ইউর প আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালানোর আর কোনো পথ নেই’

গত বছর দেশের শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার একটি ফোনালাপের অডিও যাচাই করে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মন্তব্য করেছেন প্রেসসচিব, আইন উপদেষ্টাসহ অনেকে। বলেছেন তার (শেখ হাসিনা) বিচার অবশ্যেই হবে। এবার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এমন মন্তব্য করেছেন। 

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এনিয়ে কথা বলেন তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, “গত বছরও বলেছিলাম, আজ আবার বলছি—
এত রক্ত যাঁর হাতে, সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালানোর আর কোনো পথ নেই।” 

“তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বাকী আলাপের শুরু এর পর থেকে।” 

বুধবার বিবিসির অনুসন্ধানমূলক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন। 

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং যাচাই করে তারা জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের দেখা মাত্র গুলি করার।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ