বেশিরভাগ শিশুই শাকসবজি খেতে চায় না। তাদেরকে সবজি খাওয়ানো একটা কঠিন লড়াইয়ের মতো। অনেক বাবা-মা খাওয়াতে না পেরে এক সময় অধৈর্য হয়ে শিশুদের আর শাকসবজি খাওয়ার ব্যাপারে জোরাজুরি করেন না । তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ধৈর্য ও সৃজনশীলতা দিয়ে সবজি শিশুদের প্রিয় খাবারে পরিণত করা সম্ভব। যেমন-

কার্টুনের মাধ্যমে সবজি মজাদার করে তুলুন: ভারতীয় পুষ্টিবিদ ডা.

রবি মালিক বলেন, শিশুকে বকাঝকা করলে উল্টো নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। তাদের সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। শিশুদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রের সাথে সবজির সম্পর্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। শিশুদের বলা যেতে পারে, পালংশাক খেলে পপাইয়ের মতো শক্তিশালী হবে বা ঢেঁড়শ খেলে আয়রন ম্যানের মতো সুপারপাওয়ার পাবে।

আকৃতি ও রঙে আনুন ভিন্নতা: বিভিন্ন আকৃতি যেমন- তারা, হৃৎপিণ্ড কিংবা হাসিমুখের মতো আকৃতিতে সবজি কেটে পরিবেশন করতে পারেন। তাহলে শিশুর চোখে তা আকর্ষণীয় হবে। এছাড়াও সবজির মাধ্যমে পশু-পাখির বা মানুষের মুখের মতো প্লেট সাজিয়ে তুলুন আনন্দদায়ক ও পুষ্টিকর।

প্রিয় খাবারে লুকিয়ে দিন সবজি: অনেক সময় শিশুরা সরাসরি সবজি খেতে চায় না। সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার যেমন কাটলেট, স্যান্ডউইচের মতো খাবারে সবজি কেটে মিশিয়ে দিতে পারেন। 

স্প্রিং রোল, র‍্যাপ ও রুটি রোল: সবজি র‍্যাপ বা রোল বানিয়ে পরিবেশন করলে শিশুরা তা অনেক বেশি উপভোগ করে। এমন ফরম্যাটে খাবার তাদের কাছে মজাদার মনে হয় । এমনিতে না খেলে এভাবে শিশুদের সবজি খেতে দিতে পারেন।

রান্নায় অংশগ্রহণ করান শিশুকে: সবজি ধোয়া, সালাদ মেশানো, বা স্যান্ডউইচ তৈরি—এমন ছোট কাজগুলোতে শিশুকে অংশ নিতে দিন। এতে তাদের আগ্রহ বাড়ে এবং খাবারের প্রতি কৌতূহল গড়ে ওঠে।

গল্প বলুন ও ইতিবাচক বার্তা দিন: শিশুরা গল্প শুনতে ভালোবাসে। সবজির উপকারিতা নিয়ে ছোট গল্প বলুন। 

নিজের উদাহরণ দিন: শিশুরা বাবা-মার অনুকরণ করে। আপনি যদি আনন্দের সাথে নিয়মিত সবজি খান, তবে শিশুও তা অনুসরণ করবে। একসাথে পরিবারের সকলে বসে খেলে এই অভ্যাস আরও শক্ত হয়।

জাঙ্ক ফুড নির্ভরতা কমান: চিপস, চকোলেট, ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। ছোট থেকেই তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

থাইরয়েডের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক 

খাবার থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুভাবেই প্রভাবিত করে। থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান অপরিহার্য।

থাইরয়েড হরমোন (টি৪ ও টি৩) সংশ্লেষণে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব হাইপোথাইরয়েডিজম ও গলগণ্ড রোগের কারণ হতে পারে। আবার অতিরিক্ত গ্রহণ থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের থাইরয়েডের রোগ আছে। 

টি৪ হরমোনকে আরও সক্রিয় টি৩-তে রূপান্তর করতে সহায়তা করে সেলেনিয়াম। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে থাইরয়েডকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেলেনিয়ামের ঘাটতি বা বাড়তি দুটিই ক্ষতিকর।

জিংক হরমোন সংশ্লেষণ ও রূপান্তরে ভূমিকা পালন করে এবং ঘাটতি হাইপোথাইরয়েডিজমে অবদান রাখতে পারে। হরমোন উৎপাদনে সরাসরি যুক্ত না হলেও আয়রন থাইরয়েডের কার্যকারিতা সমর্থন করে। এটির ঘাটতি হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে।

খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক

কিছু খাদ্য উপাদান থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রুসিফেরাস শাকসবজি (যেমন বাঁধাকপি, ব্রকলি ও কেল) হলো গয়টারোজেনিক, যা গলগণ্ড বাড়ায়। তবে এগুলো রান্না করলে তাঁদের গলগণ্ডের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সয়া প্রচুর পরিমাণে খেলে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও শোষণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের আয়োডিনের মাত্রা কম বা থাইরয়েডের সমস্যা আছে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার লেভোথাইরক্সিন শোষণকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের আগে আলাদাভাবে খালি পেটে ওষুধ খাওয়া উচিত।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বি ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা অটোইমিউন থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এ ছাড়া সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছে, এমন ব্যক্তিরা গ্লুটেনমুক্ত খাবার থেকে উপকৃত হতে পারেন। কারণ, এটি হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিসের মতো অটোইমিউন থাইরয়েড রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।

কেউ কেউ অটোইমিউন প্রোটোকল খাবার গ্রহণ করেন, তবে এ জন্য পেশাদার তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। নিরামিষাশীদের খাদ্য নিয়ে যখন পরিকল্পনা করা হয়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন গ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত। 

পরামর্শ 

● আয়োডিনযুক্ত লবণ ও আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিতভাবে খান।

● সেলেনিয়াম, জিংক ও আয়রন–সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

● বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যদানা খেতে হবে।

● সবজি রান্না করে খেতে হবে। সয়া পরিমিত খাবেন।

● থাইরয়েড ওষুধের জন্য সঠিক সময় অনুসরণ করুন।

● বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে খাবারের তালিকা তৈরি করুন।

ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)

আগামীকাল পড়ুন: নবজাতকের হাইপোথাইরয়েডিজম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থাইরয়েডের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক