বেশিরভাগ শিশুই শাকসবজি খেতে চায় না। তাদেরকে সবজি খাওয়ানো একটা কঠিন লড়াইয়ের মতো। অনেক বাবা-মা খাওয়াতে না পেরে এক সময় অধৈর্য হয়ে শিশুদের আর শাকসবজি খাওয়ার ব্যাপারে জোরাজুরি করেন না । তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ধৈর্য ও সৃজনশীলতা দিয়ে সবজি শিশুদের প্রিয় খাবারে পরিণত করা সম্ভব। যেমন-
কার্টুনের মাধ্যমে সবজি মজাদার করে তুলুন: ভারতীয় পুষ্টিবিদ ডা.
আকৃতি ও রঙে আনুন ভিন্নতা: বিভিন্ন আকৃতি যেমন- তারা, হৃৎপিণ্ড কিংবা হাসিমুখের মতো আকৃতিতে সবজি কেটে পরিবেশন করতে পারেন। তাহলে শিশুর চোখে তা আকর্ষণীয় হবে। এছাড়াও সবজির মাধ্যমে পশু-পাখির বা মানুষের মুখের মতো প্লেট সাজিয়ে তুলুন আনন্দদায়ক ও পুষ্টিকর।
প্রিয় খাবারে লুকিয়ে দিন সবজি: অনেক সময় শিশুরা সরাসরি সবজি খেতে চায় না। সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার যেমন কাটলেট, স্যান্ডউইচের মতো খাবারে সবজি কেটে মিশিয়ে দিতে পারেন।
স্প্রিং রোল, র্যাপ ও রুটি রোল: সবজি র্যাপ বা রোল বানিয়ে পরিবেশন করলে শিশুরা তা অনেক বেশি উপভোগ করে। এমন ফরম্যাটে খাবার তাদের কাছে মজাদার মনে হয় । এমনিতে না খেলে এভাবে শিশুদের সবজি খেতে দিতে পারেন।
রান্নায় অংশগ্রহণ করান শিশুকে: সবজি ধোয়া, সালাদ মেশানো, বা স্যান্ডউইচ তৈরি—এমন ছোট কাজগুলোতে শিশুকে অংশ নিতে দিন। এতে তাদের আগ্রহ বাড়ে এবং খাবারের প্রতি কৌতূহল গড়ে ওঠে।
গল্প বলুন ও ইতিবাচক বার্তা দিন: শিশুরা গল্প শুনতে ভালোবাসে। সবজির উপকারিতা নিয়ে ছোট গল্প বলুন।
নিজের উদাহরণ দিন: শিশুরা বাবা-মার অনুকরণ করে। আপনি যদি আনন্দের সাথে নিয়মিত সবজি খান, তবে শিশুও তা অনুসরণ করবে। একসাথে পরিবারের সকলে বসে খেলে এই অভ্যাস আরও শক্ত হয়।
জাঙ্ক ফুড নির্ভরতা কমান: চিপস, চকোলেট, ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। ছোট থেকেই তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।