শৈশবে কখনও ফুটবল আবার কখনওবা ক্রিকেটের ব্যাট-বল নিয়ে খেলার আনন্দে মেতে উঠতেন। স্কুল পর্যায়ে ভলিবল, হ্যান্ডবল এবং অ্যাথলেটিকসে পুরস্কার আছে তাঁর। তবে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বেড়ে ওঠা স্বপ্না রানী বেছে নিয়েছেন ফুটবলকে। তিনি এখন নারী দলের মধ্য মাঠের শিল্পী। এএফসি বাছাই পর্বে দলের পারফরম্যান্স, দলীয় সমন্বয় নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন স্বপ্না রানী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাসে ভাসছেন সবাই। মিয়ানমারে যাওয়ার আগে কি ভেবেছিলেন এশিয়ান কাপে খেলতে পারবেন?
স্বপ্না রানী: যাওয়ার আগে এমনটা ভাবিনি। তবে সবার মধ্যে চেষ্টা ছিল। যেহেতু এবার সুযোগ আসছে, সেটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের সবার টার্গেট ছিল যেভাবে হোক, এবার এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করতে হবে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, আমরা এশিয়ান কাপে খেলব। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। যে অনূভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে আমরা এখন এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে– এটা ভাবতেই মনে রোমাঞ্চিত অনুভব করছি।
সমকাল: এশিয়ান কাপে খেলবেন– এই বিশ্বাসটা কখন এসেছিল সবার মধ্যে?
স্বপ্না: প্রথম ম্যাচে (বাহরাইনের বিপক্ষে) আমরা যখন জিতি, তখন সবার আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা বেড়ে যায়। মিয়ানমারের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সবার মধ্যে বিশ্বাস ছিল, আমরা জিতব। যেভাবে হোক জিততেই হবে। দেশের জন্য আর নিজের জন্য। সেই ম্যাচে জেতার পরের গল্পটা তো সবারই জানা।
সমকাল: মিয়ানমার ম্যাচ নিয়ে আপনাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছিল?
স্বপ্না: মিয়ানমার ম্যাচে কোচ যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, সেভাবে আমরা খেলেছিলাম। প্রথমে টার্গেট ছিল যে কোনোভাবেই হোক গোল হজম করা যাবে না, বরং আমরা গোল দেব। সবাই জানত, এই ম্যাচ জিতলে এশিয়ান কাপে খেলাটা আমাদের প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। টিম মিটিংয়েও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাই মিয়ানমার ম্যাচটা পাখির চোখ ছিল আমাদের মধ্যে।
সমকাল: তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে প্রথমার্ধে সাত গোল দিয়েছিলেন; কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোলও দেননি। আপনারা কি ইচ্ছাকৃতভাবে আর গোল দেননি?
স্বপ্না: বিষয়টি এমন না। খেলার মধ্যে আমরা কেউ কাউকে ছাড় দিই না। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ওদের গোলরক্ষক ভালো খেলেছেন। যার জন্য গোল হয়নি।
সমকাল: ফুটবলটা বেছে নেওয়ার কারণ কী?
স্বপ্না: আমি খেলার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম। আন্তঃস্কুল পর্যায়ে খেলেছি। ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিকস– সব খেলাই খেলতাম আমি। সব খেলায়ই আমার পুরস্কার আছে।
সমকাল: ফুটবলার না হলে কী হতেন?
স্বপ্না: ফুটবলার না হলে অবশ্যই ক্রিকেটার হতাম। ক্রিকেটও আমি ভালো খেলতাম। আন্তঃস্কুল এবং বিভাগীয় পর্যায়ে পর্যন্ত খেলেছিলাম। ঠাকুরগাঁওয়ে রাঙ্গাটুঙ্গি স্কুলের হয়ে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে খেলেছিলাম।
সমকাল: মেয়েরা যারা ফুটবলে আসতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশে কী বলবেন?
স্বপ্না: অনেকে মেয়েই ভাবে খেলাধুলায় এলে পড়াশোনা হয় না। আমি বলব, পড়াশোনা এবং খেলাধুলা দুটিই নিজের কাছে। কারণ, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। তো মেয়েরা সবকিছুই পারে। যদি আপনি পড়াশোনা ঠিক রেখে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চান, সেটা অবশ্যই সম্ভব।
সমকাল: ফুটবলে শুরুর গল্পটা একটু বলুন?
স্বপ্না: আমার ফুটবলের শুরুটা অনেক কষ্টের ছিল। বলতে পারেন, জার্নিটা অনেক কষ্টের ছিল। আমি গ্রাম থেকে উঠে আসা। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে আমার বাড়ি। শুরুটা কঠিন ছিল। আপনারা জানেন, গ্রামের লোকের কথাবার্তা কেমন হয়। শুরুতে যখন খেলতাম, তখন অনেকে অনেক কথা বলত। তবে আমি সেসবে কান দিতাম না। আমার পরিবার সব সময় সাপোর্ট দিয়ে বলত, মানুষের কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই। আমি ২০১৭ সালের শুরুর দিকে ফুটবল খেলা শুরু করি। শেষে ঠাকুরগাঁও জেলায় বিকেএসপির হয়ে ট্রায়াল দিই। সেখানে উত্তীর্ণ হই। এর পর বিকেএসপিতে ট্রেনিংয়ে সফল হই। সংস্থাটির হয়ে ভারতে সুব্রত কাপে খেলেছি। ২০১৯ কিংবা ২০২০ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ পাই। সেটা ছিল আমার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর পর বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলার পর ২০২২ সালে নারী জাতীয় দলে আসা। ওই বছরই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দলের সদস্য ছিলাম।
সমকাল: পরিবরাকে কতটা আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারেন ?
স্বপ্না: পরিবারের অন্য কেউ কিছু করতে পারে না। আমার ওপরই সবাই নির্ভরশীল। আমাদের বেতন, ম্যাচ ফি– এগুলো যদি আরও বাড়ানো হয়, তাহলে পরিবারকে আরও ভালো সাপোর্ট দিতে পারব। নিজের কাছে ভালো লাগবে।
সমকাল: বিশ্বকাপের কথা সবাই বলছে। আপনি কতটা আশাবাদী?
স্বপ্না: আমরা আশাবাদী। যেহেতু এবার এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি। বিশ্বকাপে খেলার ভালো সুযোগ এবার। একই সঙ্গে অলিম্পিকে খেলারও হাতছানি। সব মিলিয়ে এই সুযোগ আমরা নষ্ট করতে চাই না। এতদূর উঠে আসা যেমন এক দিনে হয়নি, তেমনি করে চেষ্টা করব আস্তে আস্তে ওপরে উঠতে।
সমকাল: ঘরোয়া লিগ নিয়মিত হয় না। এটা নিয়ে কিছু বলবেন?
স্বপ্না: এই লিগটাই আমাদের ধারাবাহিকভাবে করা উচিত। কারণ, লিগ থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় বের হয়। নিজেদের পারফরম্যান্সের উন্নতি করতে পারি। আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল ফ টবল র আম দ র ঠ ক রগ পর য য় প রথম সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শরৎ উৎসব উদ্যাপন
নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব-১৪৩২ উদ্যাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ অনুষ্ঠান হয়। চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহযোগিতায় এ উৎসব হয়।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখের সভাপতিত্বে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরৎ উৎসব। পরে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, ‘চারুকলার প্রাঙ্গণে যখনই আমরা আসি, যেকোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে আমরা একত্র হই, তখন সব সময় একধরনের ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়। এখানে আমরা আমাদের লোকজ ও বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি সুন্দর প্রকাশ দেখতে পাই।’
অধ্যাপক সায়মা হক আরও বলেন, ‘আজকের শরৎ উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ ধরনের উৎসব মানুষে-মানুষে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। এই উৎসবগুলো আমাদের পুনরায় একত্র করে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
এরপর চারুকলা অনুষদ, সংগীত, নৃত্যকলা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে চিত্রকলা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের ফারিয়া নওশিন আহমেদ ও সাজ্জাদুল ইসলাম এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ফরহাদ আলী।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যময় ঋতুপ্রবাহ আমাদের মনোজগৎকে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুই এই চারুকলা অনুষদ। এখন দেখা যায়, ফাল্গুনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাঙালিরা এই উৎসব উদ্যাপন করে।
চারুকলা অনুষদ ঐতিহ্যগতভাবেই সমৃদ্ধ। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই তিনের সমন্বিত ধারাকে আমরা সব সময়ই স্বাগত জানাই। আমাদের চিত্রকলা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, তেমনি সংগীত, নৃত্য ও নাটকেরও একই দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীল চেতনা রয়েছে।’
শরৎ উৎসব নিজস্ব উৎসব উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বহু বছর ধরে দেখেছি চারুকলার প্রাঙ্গণকে অনেক সময় বিভিন্ন মানুষের খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এখন আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না এবং আমরা সেটি হতে দিচ্ছি না।’
সাদা দলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম সরকার দেশের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তামান্না রহমান।