সকাল থেকে ঘরে পানি উঠতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা কামরুন নাহারকে (২৩) নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তাঁর মা ও চাচি। দুপুর পর্যন্ত ঘরে হাঁটুপানি। বাধ্য হয়ে কলাগাছের ভেলায় করে কামরুন নাহারকে নিয়ে রওনা হন তাঁরা।

গতকাল বুধবার দুপুরে ভেলাটি যখন বুকসমান পানি মাড়িয়ে ফুলগাজী উপজেলা বাজারের সামনে পৌঁছে, তখন আশপাশে কোনো যানবাহন ছিল না। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফেনী থেকে আসা এক সাংবাদিক একটি পিকআপ ভাড়া করে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যায় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন কামরুন নাহার। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম হয়েছে। নবজাতক ও মা দুজনেই সুস্থ আছেন।

গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে ইউসুফের সঙ্গে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, স্ত্রীর প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। তাই তাঁকে ফুলগাজী উপজেলার পূর্ব ঘনিয়ামোড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি নিজে কর্মস্থল রাঙামাটিতে চলে যান। গত মঙ্গলবার রাত থেকে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করলে রাঙামাটি থেকে স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। একপর্যায়ে স্ত্রীর প্রসবব্যথা ওঠে। তখন তাঁর শাশুড়ি ও চাচিশাশুড়ি কলাগাছের ভেলায় করে কামরুনকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন। প্রথমে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলেও সেখান থেকে তাঁকে সরাসরি ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বেলা দেড়টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আরও পড়ুনফেনীর ২ নদী বইছে বিপৎসীমার ওপরে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে কাল থেকে১৭ ঘণ্টা আগে

হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স রত্না রানী বসাক বলেন, কামরুন নাহার স্বাভাবিকভাবে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। নবজাতক ও মা উভয়েই সুস্থ আছেন, তবে রাতের দিকে মায়ের বুকের দুধ না পাওয়ায় শিশুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

পানি থেকে ভেলায় তুলে হাসপাতালে পাঠানোর সময় সহযোগিতা করা স্বেচ্ছাসেবক ও গণমাধ্যমকর্মী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, মুঠোফোনে বন্যার ভিডিও ধারণ করার সময় দেখতে পান, দুজন বয়স্ক নারী এক প্রসূতিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তিনি দ্রুত নিজের মোটরসাইকেলে গিয়ে একটি পিকআপ ভাড়া করেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে প্রসূতি তখন একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

আরও পড়ুন‘চোখের পলকে ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল, এক কাপড়ে বের হয়েছি’ ২২ ঘণ্টা আগে

ফেনীর সিভিল সার্জন মোহাম্মাদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও এসব টিম কাজ করে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কীটনাশকে বিলুপ্তির মুখে পোকামাকড়

ফল-ফসল ও এসব থেকে তৈরি খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে এসব ফল-ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। আর এতে মারা যায় পোকামাকড়। অনেকটা নির্বিচারেই তাদের প্রাণ যায়। এগুলোর মধ্যে অনেক ভালো পোকামাকড়ও থাকে, যারা প্রকৃতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী পোকামাকড়ের অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির মুখে।

নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ফল ও সবজিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। নিরাপদ বলে বিবেচিত মাত্রায় ব্যবহার কীটনাশকও বড় ক্ষতির কারণ হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্লোরোথ্যালোনিল পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধির ক্ষমতা নষ্ট করছে ও মেরে ফেলছে। 

ম্যাককোয়ারির স্কুল অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসের গবেষকরা ল্যাবে ব্যবহৃত সাধারণ পোকামাকড়ের মডেল, ফলের মাছিগুলোয় ক্লোরোথ্যালোনিলের প্রভাব পরীক্ষা করেছেন। ফলের মাছি বন্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক অনুরূপ পোকামাকড়ের প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলো সাধারণ ফলের মাছি বা ভিনেগার মাছি নামে পরিচিত। ফসলের ক্ষতি করা পোকামাকড়ের বিপরীতে এগুলো পচা ফল খায়। খামার ও বাগানে বর্জ্য ভেঙে ফেলা ও পুষ্টির পুনর্ব্যবহারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক পিএইচডি প্রার্থী দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ডি. মেলানোগাস্টার (সাধারণ ফলের মাছি) খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। তারা অন্য অনেক প্রজাতির খাদ্য।

পরীক্ষায় ফলের মাছি লার্ভা ক্লোরোথ্যালোনিলের সংস্পর্শে আসে, যা প্রকৃত কৃষিজাত পণ্য যেমন– ক্র্যানবেরি ও ওয়াইন গ্রেপে পাওয়া যায়। দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ‘আমরা যেসব মাছি পরীক্ষা করেছি, তার প্রজননের ওপর খুব কম ঘনত্বের কীটনাশকেরও বিশাল প্রভাব পড়ে। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট সংখ্যার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এটি স্ত্রী-পুরুষ– উভয়ের উর্বরতাকেই প্রভাবিত করে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মাছি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসেনি, তাদের তুলনায় রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা মাছিগুলোর ডিম উৎপাদন ৩৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অধ্যাপক ফ্লেউর পন্টন বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, বেশি মাত্রার কীটনাশক মাছির ডিম উৎপাদনের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, খুব কম পরিমাণও তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

ছত্রাকনাশক ক্লোরোথ্যালোনিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নিষিদ্ধ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ছত্রাকজনিত রোগ ও পাতার ঝলসানো ঠেকাতে এটি ব্যাপকভাবে স্প্রে করা হয়। এ ছত্রাকনাশকের অবশিষ্টাংশ খামারের কাছাকাছি মাটি ও পানিতে পাওয়া যায়। খাবারের প্রতি কিলোগ্রামে এর মাত্রা প্রায় শূন্য থেকে ৪৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। অধ্যাপক পন্টন বলেন, ক্লোরোথ্যালোনিল প্রায়ই কোনো রোগ না থাকলেও প্রতিরোধমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। মানুষ ধরে নেয় ক্লোরোথ্যালোনিলের মতো ছত্রাকনাশক শুধু ছত্রাকজনিত রোগের ওপর প্রভাব ফেলে। এগুলো অন্যান্য প্রজাতির জন্যও ধ্বংসাত্মক।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ