ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও রাতভর ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এতে কমপক্ষে ২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ হামলায় শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছে।

কিয়েভের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের কেন্দ্রীয় শেভচেনকিভস্কি জেলায় একটি আবাসিক ভবনের ছাদে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে রাতের আকাশে বিস্ফোরণের চিত্র দেখা গেছে। তবে বিবিসি ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করেনি এখনো। তবে সেসব ছবিতে দেখা গেছে, বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে।

গত মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেন জানিয়েছে, এটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আকাশপথে হামলা-৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্রুজ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ধাপে দেশের বিভিন্ন শহরে আঘাত হানে।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানায়, শহরের ছয়টি জেলায় রাশিয়ার ড্রোন হামলা হয়েছে।

টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো বলেন, আবাসিক ভবন, যানবাহন, গুদামঘর, অফিস ও অনাবাসিক ভবনে আগুন লেগেছে।

তিমুর তকাচেঙ্কো পরে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দুজন মারা গেছে, এই মানুষগুলোকে রুশরা হত্যা করেছে। এটি একটি ভয়াবহ ক্ষতি।’

কিয়েভের পডিলস্কি জেলায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ‘প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছেন মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো।

শহরের বাসিন্দাদের এয়ার রেইড সাইরেন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বাড়িতে ফিরে জানালা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে, কারণ কিয়েভে ‘অনেক ধোঁয়া’ রয়েছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, একাধিক অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন হামলার হুমকি রয়েছে। তবে কিয়েভের বাইরের কোনো জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে গোমতীপারের মানুষের, বাঁধে খুপরি বানাচ্ছেন কেউ কেউ

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ এলাকা। দুপুরে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের ভিন্ন রকম ব্যস্ততা দেখা গেল। কেউ সড়কের পাশে বেড়িবাঁধের ওপর মাটিতে বাঁশ গাড়ছেন। কেউ আবার সেই বাঁশে পলিথিন বা ত্রিপল দিয়ে খুপরি ঘর বানাচ্ছেন। নদীর পানি বাড়ায় নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম। বেড়িবাঁধের ভেতরে গোমতী নদীর চরে ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন। গোমতী নদীর পানি ঘরের কাছাকাছি চলে আসায় উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। আনোয়ারা বলেন, ‘তিন দিন ধইরা নদীর পানি বাড়তাছে। গত বছর এক রাইতের মইধ্যে আমার সবকিছু ভাসাইয়া লইয়্যা গেছে। তহন কয়েকটা পোলাপাইন আমারে উদ্ধার কইরা একটা স্কুলে নিয়া গেসিল। বন্যা যাওনের পর মাইনষের কাছ থাইক্যা সাহায্য লইয়া ঘরটা ঠিক করছিলাম। এহন আবার হুনতাছি বন্যা আইতাছে। কালকা রাইতে এক মিনিটও ঘুমাইছি না।’

পাশে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে খুপরি ঘর বানাচ্ছিলেন বাবুল মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের মতোই পানি বাড়তেছে। পানি এখন যে অবস্থায় আছে, আরেকটু বাড়লেই চরের বাসিন্দাদের ঘরে প্রবেশ করবে। এ জন্য বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে এটি নির্মাণ করেছি যেন মালপত্র এনে রাখা যায়।’

বৃহস্পতিবার উপজেলার টিক্কারচর, জগন্নাথপুর, সংরাইশ, বানাসুয়া, অরণ্যপুরসহ গোমতী নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে অন্তত ২০টি স্থানে এমন খুপরি নির্মাণ করতে দেখা গেছে। নদীতে পানি বাড়ায় কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মালামাল বেড়িবাঁধে এনে রাখছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ধীরগতিতে হলেও ইতিমধ্যে গোমতী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে গোমতীর ভয়াবহ রূপ দেখেছিলেন কুমিল্লাবাসী। ২২ আগস্ট রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলা। স্মরণকালের সেই বন্যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গোমতী নদীর পানি বাড়ছে। যদিও আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। এরপরও পানি বাড়তে থাকায় চারদিকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

গোমতী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে বাঁশ, পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ