টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে নোয়াখালী জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৬৩ হাজার ৮৬০টি পরিবার। অতিবৃষ্টির ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়ি, রাস্তা ও ফসলের মাঠ পানির নিচে চলে গেছে। তবে, বুধবার (৯ জুলাই) রাতে বৃষ্টি থামায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে মোট ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ২৬৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। 

কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা আবু নাসের বলেছেন, “বৃষ্টির কারণে আমাদের বাড়িসহ আশপাশের এলাকা পানিতে সয়লাব হয়েছে। আমরা পানিবন্দি অবস্থায় আছি। গত বছর বন্যায় আমরা অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছিলাম।”

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, “গত বারের বন্যায় এ উপজেলায় তেমন বেশি ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, এবার পার্শ্ববর্তী জেলা ফেনীর মুহুরী নদীর পানি উপচে পড়ায় আমাদের উপজেলা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।” 

সুবর্ণচর উপজেলার চর কচ্চপিয়ার কৃষক সিরাজ উদ্দিন বলেছেন, “কিছুদিন আগে আমন ধানের বীজ রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণে মাঠে হাঁটুপরিমাণ পানি জমে গেছে। লোকসানে পড়ে গেলাম।” 

জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো.

রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরো ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে প্রায় ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং ১০১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে। ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার ৭৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ১৮ লাখ টাকা সংরক্ষিত আছে। জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/সুজন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গোমতীর চরে ১১ হাজার হেক্টর সবজিক্ষেত পানির নিচে

হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর দুই পাশের চরের ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে চরের বিস্তীর্ণ এলাকার সবজির ক্ষেত। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই এবার হঠাৎ বন্যায় ডুবছে তাদের ফসল। কষ্টের ফসল হারিয়ে যাওয়ায় কাঁদছেন চরের কৃষকরা। অনেককেই ডুবন্ত জমি থেকে নানা জাতের সবজি তুলে নিতে দেখা গেছে। 

কৃষি বিভাগ বলছে, হঠাৎ গোমতীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী ও কাচিয়াতলীসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চরের যেসব জমিতে করলা, মুলা, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছিল, তা এখন পানিতে ডুবে আছে। কৃষকের অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে নদীর কিনারায় বসে আছেন। কৃষকরা বলছেন, আর মাত্র দুই দিন সময় পেলেই এসব সবজি বাজারে তোলা যেত।

আমতলী এলাকার কৃষক সুজন মিয়া জানান, গোমতী নদীর এ চরে প্রায় ৩ একর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। আর দুই দিন পরই এসব ফসল বাজারে বিক্রি করা যেত। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে সব ফসল তলিয়ে গেছে। তার ভাষ্য, তিনি ব্যাংক ঋণ ও কিস্তি নিয়ে দুই বছর আগে কৃষিকাজ শুরু করেছেন। তার প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। 

কাচিয়াতলী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এবারের বন্যায় আমাদের সব ফসল পানিতে ডুবে গেল। পানিতে নেমে কিছু করলা সংগ্রহ করেছি, বাকি সব নষ্ট হয়ে গেছে।’ বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবীদ্বারের বেশ কিছু এলাকার চিত্র একই।

পাঁচথুবী এলাকার কৃষক আবদুল কাদের ও আবদুস সালাম জানান, ৩-৪ দিন সময় পেলেই সবজি বিক্রি করতে পারতেন তারা। কিন্তু পানিতে সব ফসল ডুবে গেছে। মাচায় কিছু করলা আছে, সেগুলো নৌকায় করে গিয়ে সংগ্রহ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, গোমতী নদীর চরে চলতি বন্যায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সব উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে তারা পাবেন।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, গোমতী নদীর বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পরিমাপ ১১ দশমিক ৩০ মিটার হলেও পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার হলেই চরের অনেক কৃষিজমি ডুবে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই নদীর পানি ৯ দশমিক ৪৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ