নারীকে কুপ্রস্তাব জামায়াত নেতার, অডিও ভাইরাল
Published: 10th, July 2025 GMT
ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কার্ড নিয়ে দুর্নীতি এবং এক নারীর সাথে মুঠোফোনে অশালীন ভাষায় কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আকরাম হোসেন পলাশ নামে এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি কার্ডে তিনি দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে রেকর্ডকৃত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওই জামায়াত নেতার দাবি, ‘‘অডিওতে কণ্ঠ তার হলেও, কিছু কথা এডিট করে বানানো হয়েছে।’’ তবে, বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করে অডিওর সত্যতা মিলেছে। অডিওটি এই প্রতিনিধির মাধ্যমে রাইজিংবিডির কাছে সংরক্ষিত আছে।
সম্প্রতি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড শ্রীকান্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) অডিওটি ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অভিযুক্ত আকরাম হোসেন পলাশ শ্রীকান্তপুর গ্রামের মো.
ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, এক নারী তার কার্ড করার জন্য জামায়াত নেতা আকরাম হোসেন পলাশকে ফোন দেন। প্রথমে ওই নারীর পরিচয় জানার পর পলাশ বলেন, ‘‘আরে, কী খবর, দেখা করার কথা বলছিলাম, সাঁজের বেলা দেখা করেন। কিন্তু দেখা করলেন না তো ভাবী।” এরপর জামায়াত নেতা পলাশ ওই নারীকে কিছু অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন।
ওই নারীর সাথে কথা বলার মাঝে তাকে লাইনে রেখেই অন্য একজনের সাথে কথা বলেন পলাশ। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যতই টাকি মাছ দেন আর যা দেন, দুই হাজার টাকার নিচে কাম হবে না।” তিনি কাউকে দুটি কার্ড করে দেবার কথা বলে চার হাজার টাকা দাবি করছেন। আবার এক কার্ডে দুই হাজার করে লাগবে বলে জানান।
এভাবে কথা শেষ করার পর আবার ওই নারীর সাথে কিছু সময় কথা বলেন। সেখানে ওই নারী কার্ডের জন্য ভোটার আইডির ফটোকপি পলাশের বাড়িতে দিয়ে আসছেন বলে তাকে জানান। পলাশ তাকে বলেন, “আমি তো সব কাগজ জমা দিয়ে আসছি। তারপরও চেষ্টা করবোনে, না হলে কিছু মনে কইরেন না।’’
এদিকে, এ ঘটনায় দেবোত্তর ইউনিয়নসহ পুরো আটঘরিয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এমন অনৈতিক ও দায়িত্বহীন আচরণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আকরাম হোসেন পলাশ বলেন, ‘‘বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ওই অডিওতে আমার কথা এডিট করে বানানো হয়েছে। যখন কথা হয়- তখন আমি বাজারের মধ্যে ছিলাম। আর ভরা বাজারে কেউ এসব কথা কি বলতে পারে?’’
ওই অডিওতে কথা বলা পুরুষ কণ্ঠটি আপনার কি না- এমন প্রশ্নে পলাশ বলেন, ‘‘হ্যা কণ্ঠ আমার। তবে প্রথম অংশটুকু এডিট করে বানানো। ওটা আমার কথা না। আমি তো ওইসব কথা বলিই নাই।” এসময় তিনি নিজে জামায়াতের কোনো পদে নাই বলেও দাবি করেন।
দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘পলাশ ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। তবে তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় অন্য একজনকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হচ্ছে। অডিও ভাইরালের বিষয়টি শুনেছি। যদি তিনি এমন কথা বলে থাকেন, তাহলে তার উচিত হয়নি। আর কার্ড নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে পলাশই ভাল বলতে পারবেন। কারণ আমরা যে ১৮টি কার্ড পেয়েছিলাম, প্যানেল চেয়ারম্যানের সাথে বসে তালিকা করে দিয়েছি। সুবিধাভোগীরা সেগুলো পেয়েছেন।’’
দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন মোল্লা বলেন, ‘‘দেবোত্তর ইউনিয়নে মোট ৩৪০টি ভিডব্লিউবি কার্ড বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশক্রমে জামায়াত নেতাদের ১৮টি কার্ড দেওয়া হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে জামায়াত নেতার অডিও ভাইরালের বিষয়টি জানতে পেরেছি। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।”
আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. নকিবুল্লাহ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাদ মাগরিব বিষয়টি জেনেছি। এখনও অডিও শুনি নাই। সম্ভবত পলাশ দলীয় কোনো পদে নাই। তবে সে আমাদের সাংগঠনিক কর্মী। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আটঘরিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘কেউ যদি এই কার্ডে দুর্নীতি করেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “গত ৭ জুলাই ওই নারী আমার কাছে এসে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে বিষয়টি জনিয়েছেন এবং জামায়াত নেতার ওই অডিওটি আমাকে শুনিয়েছেন। আমি তার ভিডব্লিউবি কার্ডটি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর হ্যারাজমেন্টের বিষয়টি তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।”
অভিযুক্ত জামায়াত নেতা পলাশ কার্ড বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা না হয়েও কীভাবে টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দিচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে ইউএনও মিনহাজুল বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
ঢাকা/শাহীন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটঘর য় ওই ন র ব ষয়ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিপ্রবিসহ রাঙামাটিতে কেউ যেন পাহাড় কাটতে না পারে: আদালতের নির্দেশনা
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাঙামাটিতে কেউ যাতে পাহাড় কাটতে না পারে, সে জন্য মনিটরিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ভবন নির্মাণে পাহাড় কাটা নিয়ে করা রিট শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজি এবং বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের আদালত আজ বুধবার এ নির্দেশনা দেন। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এই রিট করে।
গত ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আদালত রাঙামাটি জেলার পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; রাঙামাটি জেলার পাহাড় কাটা বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং যে পাহাড় কাটা হয়েছে, সেগুলোকে মাটি ভরাট করার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই মর্মে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে কৌঁসুলি মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে। রাঙামাটিতে প্রশাসনের সামনে এ কার্যক্রম চললেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
আরও পড়ুনরাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ভবন নির্মাণের জন্য চলছে পাহাড় কাটা২৫ নভেম্বর ২০২৫রিটের পক্ষে ছিলেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মোহাম্মদ সারোয়ার আহাদ চৌধুরী এবং একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। বিবাদী করা হয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান কেউ পাহাড় কাটতে পারে না। রাঙামাটিতে প্রশাসনের সামনে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটা হচ্ছে, যা দুঃখজনক।