ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কার্ড নিয়ে দুর্নীতি এবং এক নারীর সাথে মুঠোফোনে অশালীন ভাষায় কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আকরাম হোসেন পলাশ নামে এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতি কার্ডে তিনি দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে রেকর্ডকৃত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

অভিযোগ অস্বীকার করে ওই জামায়াত নেতার দাবি, ‘‘অডিওতে কণ্ঠ তার হলেও, কিছু কথা এডিট করে বানানো হয়েছে।’’ তবে, বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করে অডিওর সত্যতা মিলেছে। অডিওটি এই প্রতিনিধির মাধ্যমে রাইজিংবিডির কাছে সংরক্ষিত আছে।

সম্প্রতি পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড শ্রীকান্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) অডিওটি ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

অভিযুক্ত আকরাম হোসেন পলাশ শ্রীকান্তপুর গ্রামের মো.

আলাউদ্দিন খানের ছেলে এবং দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। ভুক্তভোগী নারীও একই গ্রামের বাসিন্দা।

ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়, এক নারী তার কার্ড করার জন্য জামায়াত নেতা আকরাম হোসেন পলাশকে ফোন দেন। প্রথমে ওই নারীর পরিচয় জানার পর পলাশ বলেন, ‘‘আরে, কী খবর, দেখা করার কথা বলছিলাম, সাঁজের বেলা দেখা করেন। কিন্তু দেখা করলেন না তো ভাবী।” এরপর জামায়াত নেতা পলাশ ওই নারীকে কিছু অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন।

ওই নারীর সাথে কথা বলার মাঝে তাকে লাইনে রেখেই অন্য একজনের সাথে কথা বলেন পলাশ। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যতই টাকি মাছ দেন আর যা দেন, দুই হাজার টাকার নিচে কাম হবে না।” তিনি কাউকে দুটি কার্ড করে দেবার কথা বলে চার হাজার টাকা দাবি করছেন। আবার এক কার্ডে দুই হাজার করে লাগবে বলে জানান।

এভাবে কথা শেষ করার পর আবার ওই নারীর সাথে কিছু সময় কথা বলেন। সেখানে ওই নারী কার্ডের জন্য ভোটার আইডির ফটোকপি পলাশের বাড়িতে দিয়ে আসছেন বলে তাকে জানান। পলাশ তাকে বলেন, “আমি তো সব কাগজ জমা দিয়ে আসছি। তারপরও চেষ্টা করবোনে, না হলে কিছু মনে কইরেন না।’’

এদিকে, এ ঘটনায় দেবোত্তর ইউনিয়নসহ পুরো আটঘরিয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এমন অনৈতিক ও দায়িত্বহীন আচরণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আকরাম হোসেন পলাশ বলেন, ‘‘বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ওই অডিওতে আমার কথা এডিট করে বানানো হয়েছে। যখন কথা হয়- তখন আমি বাজারের মধ্যে ছিলাম। আর ভরা বাজারে কেউ এসব কথা কি বলতে পারে?’’

ওই অডিওতে কথা বলা পুরুষ কণ্ঠটি আপনার কি না- এমন প্রশ্নে পলাশ বলেন, ‘‘হ্যা কণ্ঠ আমার। তবে প্রথম অংশটুকু এডিট করে বানানো। ওটা আমার কথা না। আমি তো ওইসব কথা বলিই নাই।” এসময় তিনি নিজে জামায়াতের কোনো পদে নাই বলেও দাবি করেন।

দেবোত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘পলাশ ইউনিয়ন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। তবে তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় অন্য একজনকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হচ্ছে। অডিও ভাইরালের বিষয়টি শুনেছি। যদি তিনি এমন কথা বলে থাকেন, তাহলে তার উচিত হয়নি। আর কার্ড নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে পলাশই ভাল বলতে পারবেন। কারণ আমরা যে ১৮টি কার্ড পেয়েছিলাম, প্যানেল চেয়ারম্যানের সাথে বসে তালিকা করে দিয়েছি। সুবিধাভোগীরা সেগুলো পেয়েছেন।’’

দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন মোল্লা বলেন, ‘‘দেবোত্তর ইউনিয়নে মোট ৩৪০টি ভিডব্লিউবি কার্ড বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশক্রমে জামায়াত নেতাদের ১৮টি কার্ড দেওয়া হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে জামায়াত নেতার অডিও ভাইরালের বিষয়টি জানতে পেরেছি। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।”

আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো. নকিবুল্লাহ বলেন, ‘‘মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাদ মাগরিব বিষয়টি জেনেছি। এখনও অডিও শুনি নাই। সম্ভবত পলাশ দলীয় কোনো পদে নাই। তবে সে আমাদের সাংগঠনিক কর্মী। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’


আটঘরিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘কেউ যদি এই কার্ডে দুর্নীতি করেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’ 

আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “গত ৭ জুলাই ওই নারী আমার কাছে এসে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে বিষয়টি জনিয়েছেন এবং জামায়াত নেতার ওই অডিওটি আমাকে শুনিয়েছেন। আমি তার ভিডব্লিউবি কার্ডটি করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর হ্যারাজমেন্টের বিষয়টি তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।”

অভিযুক্ত জামায়াত নেতা পলাশ কার্ড বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা না হয়েও কীভাবে টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দিচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে ইউএনও মিনহাজুল বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটঘর য় ওই ন র ব ষয়ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে বিএনপি নেতা ‘ইজারাদার’, দ্বিগুণ খাজনা আদায়

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী আটঘর-কুড়িয়ানা নৌকা ও সবজির হাটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হারে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নৌকা বেচাকেনায় খাজনা নির্ধারিত আছে মূল দামের ৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে প্রায় ১২ শতাংশ। নির্ধারিত টোলের তালিকা প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা কখনো টাঙানো হয়নি।

শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সরকারি হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইজারাদারদের লোকজন আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা যা ধার্য করেন, তা–ই দিই।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি হাটবাজার এখন রাজনৈতিক  দলের নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা সরকারি রেট চাইলে হুমকি দেন বা অপমানিত হই।’

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটটির মূল ইজারাদার আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। কিন্তু চলতি বছর তিনি নতুন করে হাটের ইজারা নেওয়ার পর আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা হাটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা তুলছেন।

ইজারাদার আবদুর রহিম মিয়ার অভিযোগ, ‘আমি ৩৮ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে হুমায়ুন মোল্লাসহ অন্যরা এক দিনের জন্যও খাজনা তুলতে দেননি। জোরজবরদস্তির পরে তাঁদের খাজনা আদায় করতে দিয়েছি। সরকার নির্ধারিত খাজনা ৫ শতাংশ হলেও বর্তমানে আমার ছাপানো রসিদ বাদ দিয়ে তাঁরা নিজেদের ছাপানো রসিদে দ্বিগুণ হারে খাজনা নিচ্ছেন। আমি ৩৮ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছি, তাঁরা আমাকে দিয়েছেন মাত্র ১৫ লাখ টাকা। শিগগিরই আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।’

ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন মোল্লা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছি না। আগের ইজারাদার যে হারে আদায় করেছেন, আমরাও সেই হারেই আদায় করছি।’ কত হারে খাজনা আদায় করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নৌকার হাট থেকে ৮ শতাংশ এবং সবজির বাজার থেকে নির্ধারিত ৫ শতাংশের কম আদায় করছি। আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।’

আমরা জোরজবরদস্তি করে হাটের দখল নিইনি। তাঁকে (ইজারাদার) আমরা ইজারার টাকা দিয়ে দিয়েছি এবং সেটা থানায় বসে ফয়সালা হয়েছে, এর লিখিতও রয়েছে।হুমায়ুন মোল্লা, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক

এ প্রসঙ্গে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইজারা নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল, যা আপাতত সমাধান হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত হারের বাইরে খাজনা আদায় আইনগতভাবে অপরাধ। কেউ অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, আটঘর-কুড়িয়ানা বাজারটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি ও নৌকার বাজার। এ এলাকায় প্রচুর আমড়া, লেবু, পেয়ারা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদন হয়। পাইকারেরা এ হাটে এসব পণ্য কেনেন এবং দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জোরজবরদস্তি করে বিএনপি নেতা ‘ইজারাদার’, দ্বিগুণ খাজনা আদায়