দেশের স্টার্টআপের জন্য এটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
Published: 10th, July 2025 GMT
স্টার্টআপ খাতের অর্থায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রগতিশীল। এটি কেবল অর্থায়নের সুযোগই তৈরি করবে না; স্টার্টআপ খাতের তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের জন্য একধরনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এর ফলে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধন জোগান আরও সহজ হয়ে যাবে।
এই নীতিমালার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দূরদর্শিতা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বাস্তবতায় প্রথাগত ব্যাংকিং কাঠামো ও অর্থায়নব্যবস্থার মধ্যে বড় ব্যবধান ছিল, যা স্টার্টআপগুলোর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল ও মূলধন বিনিয়োগ তহবিল দেশের অর্থনীতির ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এই তহবিলের আওতায় একটি স্টার্টআপ প্রাথমিক পর্যায়সহ চারটি শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ ও মূলধন; দুই ধরনের পুঁজি পাবে। এটি আমাদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাস জোগাবে ও টেকসই প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন ব্যাংকগুলো স্টার্টআপকে নিজের মতো করে মূল্যায়ন করতে পারবে। কোন স্টার্টআপ ঋণ পাবে, কোনটা পাবে না, সেটাও ব্যাংক এখন নিজেরা বিশ্লেষণ করতে পারবে।
এই নীতিমালা প্রণয়নের প্রক্রিয়াতে স্টার্টআপ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (এসএবি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ধারাবাহিক বৈঠক, খসড়া প্রস্তাব ও বাস্তবভিত্তিক সুপারিশের ফলাফল হিসেবেই পূর্ণাঙ্গ নীতিমালাটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
এখন আমাদের দৃষ্টি থাকবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দিকে। এই নীতির বাস্তবায়নের জন্য তারা যেন দ্রুততম সময়ে তাদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় পরিবর্তন আনে।
শাহীর চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), শিখো
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তাবনায় নয়, তপশিলে চায় বিএনপি
মূল সংবিধান নয়, চতুর্থ তপশিলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে অন্তর্ভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায় বিএনপি। ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত এ তপশিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকেও অন্তর্ভূক্ত চায় দলটি। যদিও এনসিপির দাবি ‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তবনায় রাখতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ দাবি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধান সাহিত্য নয়, আইন। একাত্তরের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই সংবিধানের মূল অংশে ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সপ্তম তপশিলে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তা সাংবিধানিক নয়। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক মূল্য রয়েছে। বিএনপি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে মর্যাদা ও গুরুত্ব ধারণ করে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের এগারতম দিনের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এনসিপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে। কয়েকদিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা ঘোষণাপত্রের খসড়া বিএনপি মহাসচিবকে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারকে দিয়েছিল। এরপর আর অগ্রগতি ছিল না। এবারের খসড়ায় বিএনপির আগে দেওয়া মতামতের কিছু প্রতিফলন রয়েছে। গত বুধবার রাতে সরকারকে এবারের খসড়ায় মতামত জানানো হয়েছে।
জুলাই ঘোষণার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করছে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। চতুর্থ তপশিলে রাখা যেতে পারে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।’
মূল সংবিধানে জুলাই ঘোষণাকে অর্ন্তর্ভূক্ত করতে বিএনপির আপত্তি কেন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে রাখলে, প্রশ্ন আসবে পচাত্তরের ৭ নভেম্বর বিপ্লব, নব্বইয়ের অভ্যুত্থান- কোথায় রাখা হবে?।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম তপশিলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাই, অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত জুলাই ঘোষণা চতুর্থ তপশিলে একটি প্যারায় রেখে, স্বীকৃতি দেওয়া যৌক্তিক হবে। আরেকটি প্যারায় বর্তমান সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে।
তবে এ ধারণাকে নাকচ করে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণা রাখাত হবে। তা রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়। জুলাই ঘোষণার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সংবিধানই সংস্কার হলে, জুলাই ঘোষণাকে কীভাবে প্রস্তাবনায় রাখা যাবে-প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেছেন, সংবিধান নতুন বা পুরাতন যাই হোক, জুলাইয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। সংবিধানের বাইরে তপশিলে যোগ করা গ্রহণযোগ্য হবে না।