ভাইরাস জ্বর হলে কী করবেন, কী করবেন না
Published: 10th, July 2025 GMT
ভাইরাস জ্বর সাধারণত তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের নানা অঙ্গে প্রদাহ তৈরি হয়। অনেকে জ্বর থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করেন।
ডা. হাসিনা নাসরিন, ইনফেকশাস ডিজিজ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ভাইরাস জ্বর বেশির ভাগ সময় নাক, কান, গলা এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এই অঙ্গগুলোতে প্রদাহ হয়। সাথে সাথে জ্বরটাও থাকে। যখনই দেখবেন যে সর্দি, কাঁশি, হাঁচি এবং নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে শুকনা কাঁশি হচ্ছে এবং গলা একটু বসে যাচ্ছে তখনই ভাববেন যে আপনি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
প্রথম তিন থেকে চারদিন আমরা জ্বরটাকে ভাইরাস জ্বর হিসেবে ডায়াগোনোসিস করে থাকি। কিন্তু চারদিনের পরেও যদি দেখা যায় যে, জ্বরটা কমছে না, তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে এবং সাথে সাথে কাঁশিটা আরও গাঢ় হয়ে যাচ্ছে-কফ আসছে কাঁশির সঙ্গে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ওষুধ সেবন করতে হবে।
আরো পড়ুন:
সাইনাসের সমস্যা দূর করতে যে কাজটি করা দরকার
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে কী করবেন, কী করবেন না
এর আগে প্যারাসিটামল ওষুধ ছাড়া আর কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না। জ্বর হয়ে মেটামোলিজম বেড়ে যায়। যার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ যুক্ত খাবার খেতে হবে। লিকুইড খাবার এবং ফলও খেতে হবে।
ভাইরাস জ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ যকর জ বন যত ন করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)