মালিক: রাজকুমার রাওয়ের রূপান্তরের গল্প
Published: 10th, July 2025 GMT
লক্ষ্ণৌর এক কুয়াশাময় সকাল। নিস্তব্ধতা ভেঙে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে একটি কালো রঙের এসইউভি। গাড়ি থেকে নামেন একজন। চোখে কালো চশমা, হাতে একটি পুরোনো রিভলবার। চারপাশের গলি যেন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তাঁর চলার অপেক্ষায়। তাঁর নাম ‘মালিক’। এ শুধু একটি নাম নয়– এক সময়ের চিহ্ন, এক নির্ধারিত বাস্তবতার প্রতীক। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজকুমার রাও; যিনি তাঁর ক্যারিয়ারে এতদিন প্রেমিক, নিঃস্ব, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এবার সেই চেনা রূপ ভেঙে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর, অথচ মানবিক গ্যাংস্টারের চেহারায়।
‘মালিক’ সিনেমা তাই কেবল একটি অ্যাকশনধর্মী থ্রিলার নয়, বরং এটি এক অভিনেতার রূপান্তরের গল্প। এক সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে গড়ে ওঠা একটি চরিত্রের গভীর অভ্যুত্থান। ‘কপালে যদি না লেখা থাকে, আমি নিজেই লিখে নেব’– রাজকুমারের কণ্ঠে উচ্চারিত এই সংলাপ যেন হয়ে ওঠে সিনেমাটির সারকথা। সিনেমায় তাঁকে শুধুই অস্ত্রধারী গ্যাংস্টার হিসেবে দেখানো হয়নি। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে, শরীরী ভাষায়, সংলাপে ফুটে ওঠে এক চাপা ক্ষোভ, অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের কাহিনি। চরিত্রটি নিয়ে রাজকুমার রাও জানিয়েছেন, এটি তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে আবার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি অ্যাকশন দৃশ্য তিনি নিজে করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন মাসের পর মাস।
‘মালিক’ ছবিতে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন রাজকুমার রাও ও মানুষি চিল্লার। পুলকিত পরিচালিত এ অ্যাকশনধর্মী ছবিতে তারা হাজির হয়েছেন একেবারে নতুন রূপে। সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানুষি এতদিন গ্ল্যামারাস চরিত্রেই বেশি পরিচিত ছিলেন। এ ছবিতে তিনি হাজির হয়েছেন সম্পূর্ণ গ্ল্যামারহীন, এক বাস্তব ও মানবিক স্ত্রীর ভূমিকায়।
রাজকুমারের স্ত্রী ‘শালিনী’ চরিত্র প্রসঙ্গে মানুষি বলেন, ‘এ চরিত্রের কথা যখন পরিচালক ও লেখক প্রথম কল্পনা করেন, তখন আমি তাদের ভাবনায়ও ছিলাম না। এর আগে কেউ আমাকে এমন চরিত্রে দেখেননি। সৌভাগ্যবশত আমি এ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, হয়তো পেরেছি।’ মানুষি প্রসঙ্গে রাজকুমার রাও বলেন, ‘মানুষির মুখে রয়েছে এক অপার ভারতীয় সৌন্দর্য। এমন চরিত্রে ওর আরও কাজ করা উচিত। মানুষি শুধু চরিত্রকে ধারণ করেননি, বরং তাঁর সরলতা, ভাষা ও চাহনির মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।’
এ সিনেমায় আরেকটি চমক হচ্ছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। টলিউডে বহুবার পুলিশ চরিত্রে অভিনয়ের পর এবার তাঁকে দেখা যাবে বলিউডের ‘মালিক’ ছবিতে এক দুঁদে পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায়। ছবিতে রাজকুমার ও প্রসেনজিৎ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াবেন, যা সিনেমার গতি ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। শুটিং সেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজকুমার বলেন, “আমাদের ‘বং কানেকশন’ তো সবারই জানা। পত্র লেখা আমাদের সেই যোগসূত্র। এ ছবিতে আমাদের চরিত্রগুলো এমন, যেখানে একসঙ্গে বসে খাওয়ার সুযোগই ছিল না (হেসে)।
বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি খুব ভালো মানুষ। কোনো শিল্পীর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছবিতে তাঁকে একদম আলাদা রূপে দেখা যাবে। তাঁর অভিনয়ে একটি বিশেষ দিক আছে, যা দর্শকদের চমকে দেবে।”
সিনেমার প্রচারে এসে অনুজ রাজকুমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন প্রসেনজিৎ। প্রশংসা করেন পরিচালক পুলকিতেরও। তিনি বলেন, ‘আমি তখন মুম্বাইতে একটি অন্য ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন এ ছবির জন্য ফোন আসে। এরপর পুলকিতের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর গল্প বলার ধরন, কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে বুঝেছিলাম। এ ছেলেটি একদিন নিজেকে প্রমাণ করবেই। ৩০ মিনিট আলাপচারিতার পর বলি, আমি কাজটা করছি।’
রাজকুমার রাও প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ও দারুণ ভালো একজন অভিনেতা। সে বরাবর তার অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছে। এবারও নিজের চরিত্রে ও মন দিয়ে অভিনয় করেছে।’ নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইশে শ্রাবণ আর দশম অবতার-এর মতো পুলিশের চরিত্র আমি অনেক করেছি। এ চরিত্রটায় একদম আলাদা একটা চমক আছে।’
সিনেমাটির পটভূমি আশির দশকের এলাহাবাদ। যেখানে ধর্ম, রাজনীতি এবং অপরাধ এক নতুন সমাজের ভিত্তি তৈরি করছিল। সে সময়েই মালিকের মতো এক চরিত্রের জন্ম। যিনি প্রথমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান; পরে সময়ের চাপে নিজেই হয়ে ওঠেন নিয়ন্ত্রক, বিচারক এবং শাসক।
‘মালিক’ একটি প্রশ্ন তোলেন– নায়ক কে? আর খলনায়কই বা কে? সবশেষে দর্শক বুঝতে পারেন, এটি কেবল একজন অপরাধীর গল্প নয়। বরং এটি সময়, অবিচার, ব্যর্থতা ও প্রতিশোধের গল্প।
রাজকুমার রাওয়ের অনবদ্য অভিনয়, মানুষি ও প্রসেনজিতের সপ্রাণ উপস্থিতি এবং পুলকিতের দক্ষ পরিচালনায় ‘মালিক’ হয়ে উঠেছে এক পূর্ণাঙ্গ, আবেগঘন এবং থ্রিলিং চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পেলে পর্দায় ধরা পড়বে শুধু রক্ত, বন্দুক আর সংঘর্ষ নয়, ধরা পড়বে এক মানুষের অন্তরাত্মা, এক অভিনেতার নতুন জন্ম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র চর ত র আম দ র র গল প পর চ ল প লক ত
এছাড়াও পড়ুন:
এক কলেজে তিন অধ্যক্ষ
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ার একটি। কিন্তু সেখানে অধ্যক্ষ তিনজন। একজন মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। অপর দু’জন ভারপ্রাপ্ত। এর মধ্যে একজন উচ্চ আদালত থেকে স্বপদে পুনর্বহাল হওয়ার রায় পেয়েছেন। এভাবে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে তিনজনের মধ্যে।
২০২১ সালের ৮ আগস্ট শিমুলবাড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ হয়। তখন থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখা-২-এর আদেশে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান অধ্যাপক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর পদায়নের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। এর পর তিন মাসের জন্য উচ্চ আদালত থেকে স্বপদে পুনর্বহাল হওয়ার রায় পেয়েছেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান আদালতের আদেশ অমান্য করে কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু নিয়মিত কলেজে আসছেন এবং অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন সিদ্দিকুর রহমান। বর্তমানে ওই তিন অধ্যক্ষই কর্মরত আছেন কলেজটিতে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। তাঁর অভিযোগ, কলেজটি জাতীয়করণের পর থেকে তিনি বিধি অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর পদায়ন যৌক্তিক। এর পরও বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ১৩৫ কলেজের সঙ্গে শিমুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজে ক্যাডারভুক্ত এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত ২৭ মে আদালতে রিট পিটিশন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১ জুন অধ্যক্ষ পদায়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং তাঁকে অধ্যক্ষ পদোন্নতি দিয়ে রায় দেন। ওই আদেশের পর এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে অবৈধভাবে সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী অশোক কুমার রায়ের মোবাইল ফোনে একাধিকার কল দেওয়া হয়। তিনি সাড়া দেননি।
অধ্যক্ষ এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তাঁর পদায়নের আদেশটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। এ অবস্থায় কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অশোক কুমার রায়কে দায়িত্ব দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান অনুপস্থিত থাকায় অশোক কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।