Samakal:
2025-05-28@20:26:54 GMT

পরবাসী নিজ বাসভূমে

Published: 27th, May 2025 GMT

পরবাসী নিজ বাসভূমে

দেশ থেকে দেশান্তরে মানুষের চলনকে, মানুষ যখন আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে, তখন সাধারণত সে ব্যাপারটি আখ্যায়িত করা হয় ‘আন্তর্জাতিক পরিযান’ হিসেবে। কিন্তু মানুষের বিচলন নিজের দেশের মধ্যেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হতে পারে। তারা নানা কারণে স্থান থেকে স্থানান্তরে সরে যেতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়ায় মানুষ তার শিকড় থেকে উৎখাত হয়; সে তখন উদ্বাস্তু। এমন বিষয়কে আমরা বলি ‘অভ্যন্তরীণ উৎখাত’ বা ‘অন্ত্যজ উদ্বাস্তুতা’। যুদ্ধ, সংঘাত, সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অন্যান্য সংকটের কারণে মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এরাই অভ্যন্তরীণ উৎখাতের শিকার। যেহেতু প্রতিবছর সংঘাত-সংকট ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাচ্ছে, তাই আরও বেশি সংখ্যক লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা বিশ্বে বেড়েই চলেছে। এসব উদ্বাস্তুর একটা বড় অংশ বছরের পর বছর, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বিচলন করে যাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত তাদের সমস্যার কোনো স্থায়ী বজায়ক্ষম টেকসই সমাধান খুঁজে পায়নি।

অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতার পেছনে দুটো বড় কারণ কাজ করে– সংঘাত-সহিংসতা এবং বিবিধ দুর্যোগ। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করছিল। এর মধ্যে ৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ছিল সংঘাত ও সহিংসতার শিকার এবং ৯০ লাখ লোক দুর্যোগের কারণে উদ্বাস্তু। গত এক দশকে বিশ্বে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ। ২০২৪ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখে। অর্থাৎ এই সময়ে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর আঞ্চলিক বিভাজনে দেখা যায়, এ জাতীয় উদ্বাস্তুর সংখ্যা উপ-সাহারীয় আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি। সে অঞ্চলে ৩ কোটি ৯০ লাখ লোক বাস করে, যার মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ লোক সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। উপ-সাহারীয় আফ্রিকার পরেই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল, যেখানে ১ কোটি ৭০  লাখ উদ্বাস্তুর বাস। এর মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষই সংঘাত ও সহিংসতার শিকার। 

এর সামগ্রিক চালচিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু গত বছরের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতার দিকে তাকানো যাক। এই এক বছরেই বিশ্বে ৬ কোটি ৬০ লাখ লোক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিচলন করেছে। এর মধ্যে ২ কোটি সংঘাত ও সহিংসতার কারণে এবং ৪ কোটি ৬০ লাখ দুর্যোগের কারণে।

সত্যিকার অর্থে, এক অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ঘটনার কারণে বিচলনে বাধ্য হয়। এবং একজন মানুষ একই বছরে একাধিকবার তার অধিষ্ঠান বদলাতে পারে এবং প্রতিটি স্থানান্তরকে উদ্বাস্তু-উপাত্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ধরা যাক, সংঘাতের কারণে একজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠল। তারপর সেই কেন্দ্রের ওপরে আক্রমণের কারণে কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগের ফলে তাকে যদি আবারও পালাতে হয়, তখন সে আবার একজন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে বিবেচিত হবে। গাজা কিংবা অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ স্থানে আক্রান্ত মানুষদের প্রতিবছর একাধিকবার পালাতে হয়। কারণ সংঘাতের ক্ষেত্র বারবার স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর নাজুকতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনকে নতুন করে গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

যেখানে সংঘাত, দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন খুব তীব্র, সেখানে অভ্যন্তরীণ উৎখাত ঘটে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দরিদ্র ও প্রান্তিকতম জনগোষ্ঠীই এতে আক্রান্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে লেবানন, গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো, ফিলিস্তিন, সুদান ও ইউক্রেনের মতো দেশ এবং ভূখণ্ডে সংঘাত ও সহিংসতার আপাতন বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যাও বেড়েছে। এ সংখ্যা বর্তমানে আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে যে বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তু রয়েছে, সেই সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি অকল্পনীয় বিরাট সংখ্যার জন্ম দিয়েছে।

নানা দুর্যোগ মানুষের আবাসন ও জীবিকার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে বহু লোক এখনও সেসব ক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান পায়নি এবং বছরের শেষে তারা এখনও উদ্বাস্তু। 
বাংলাদেশে অন্ত্যজ বিচলন দুটো বিষয় দ্বারা প্রভাবিত– আকর্ষিক শক্তি ও বিকর্ষিক শক্তি। আকর্ষিক শক্তির কারণে মানুষ শহরে চলে যায়– হয় উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগের কারণে, না-হয় নগরজীবনের চাকচিক্য আবহের মোহে। নগরে সন্তানের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিবারের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা কিংবা নগরজীবনে সুরক্ষিত নিরাপত্তার ধারণা মানুষকে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসার প্রণোদনা জোগায়। এসব ক্ষেত্রে তাদের পরিযানে কেউ বাধ্য করে না; কেউ তাদের বল প্রয়োগে  উৎখাত করে না। ইচ্ছানুযায়ীই তারা স্থানান্তরিত হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বিচলনের ক্ষেত্রে বহু বিকর্ষিত শক্তিও কাজ করে। যেমন তীব্র ঋতুভিত্তিক বেকারত্ব, জীবিকার নাজুকতা, দারিদ্র্যের সংকটজনক আপাতন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটা ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন এবং ফসলি জমির বিলুপ্তি ও বাড়িঘরের ক্ষতি। এসব বিষয়ই মানুষকে তার শিকড় থেকে উৎখাত করে। যেমন বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রায়ই বন্যা হয়; দেখা যায় নদীভাঙন। প্রতিবছর বহু মানুষ কাজ ও জীবিকার জন্য ঢাকা শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ঋতুভিত্তিক খাদ্যে অনিরাপত্তা দেখা দেয়। কখনও কখনও সে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব প্রায় দুর্ভিক্ষে রূপ নেয়। 

একনাগাড়ে চার বছর বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশে দুর্যোগ-সম্পৃক্ত অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা গত বছর ২৪ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ। গত বছর যত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, তার অর্ধেকই বর্ষার সময়ে বন্যার প্রকোপের কারণে। ২০২৪ সালের বর্ষাকালীন বন্যার সময় বাংলাদেশে, বিশেষত সিলেট বিভাগে ১৪ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে সে বছরের শুধু জুন মাসেই সিলেট বিভাগে ৭ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। দেখা গেছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভূমির ওপর স্তরের মাটির ক্ষয় এবং জল নির্গমন খালের বদ্ধতা বন্যার তীব্রতাকে গভীরতর করেছে।
পুরো ব্যাপারটির বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়েছে গত বছরের ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বর্ষার জল বেড়ে গেলে নদীপ্রবাহ সেই অতিরিক্ত জল বের করে দিতে পারেনি। ঘণ্টায় প্রায় ১১১ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার কারণে দেশের ভেতরের দিকে ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস এবং প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় কর্তৃপক্ষ পূর্বসতর্ক বাণী প্রচার করেছে এবং ৯ হাজার ত্রাণকেন্দ্র স্থাপন করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে স্থানান্তরিত ১১ লাখ মানুষের চার-পঞ্চমাংশের স্থানান্তর দুর্যোগ-পূর্বকালে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঘটেছে। বাকি মানুষের স্থানান্তর ঘটেছে দুর্যোগের সময়েই বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও এ দুর্যোগে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। পুরো দেশে ১ লাখ ৫০ হাজার বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। এর ফলে বছরের শেষেও ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হিসেবে দিন কাটাচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতা শুধু একটি মানবিক সংকট নয়। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি উন্নয়ন রাজনৈতিক সমস্যাও বটে। ফলে বর্তমানে এ বিষয়ের ওপর যতখানি নজর দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি দেওয়া দরকার। শুধু মানবিক ত্রাণ উদ্বাস্তুতার মাত্রা ও ব্যাপ্তিকে কমিয়ে আনতে পারবে না। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের অবস্থার একটি বজায়ক্ষম সমাধানের জন্য রাষ্ট্রকে এমন সব নীতিমালা ও ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সংঘাত বন্ধ হয়ে শান্তি স্থাপিত হয়; দারিদ্র্য ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে ও পুনর্বাসিত হতে পারে। ফেরত না যেতে পারলেও যে জায়গায় তারা স্থানান্তরিত হয়েছে, সেই লোকালয়ে যাতে সম্পৃক্ত হতে পারে। এ জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎখাতের ব্যাপ্তি এবং তার সমাধানে সংগৃহীত উপাত্ত বিরাট ভূমিকা পালন করবে। সংক্ষেপে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে তিন ধরনের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্ববহ হবে– নীতিমালার সমন্বয়, যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রাসঙ্গিক; অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতার জন্য অর্থায়ন এবং একটি উপাত্ত কাঠামো বজায় রাখা। আমাদের মনে রাখা দরকার, নিষ্ক্রিয়তার মূল্য দিন দিন বাড়ছে এবং উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীই সেই মূল্য দিচ্ছে। 

সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক,
মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন
কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘ ত ও সহ ব ধ য হয় ব যবস থ গত বছর র জন য ঘর ছ ড র সময় র ওপর বছর র ব চলন উৎখ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনের তথ্য নাকচ চীনা রাষ্ট্রদূতের

বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেছেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতির তথ্য ‘সত্য নয়’।

বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রথমবারের মতো পাঠানো আমের চালান নিয়ে বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ইয়াও ওয়েন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনের তথ্য সত্য নয়। আমাদের এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুত্বের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছি।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনের সামরিক উপস্থিতি থাকার কোনো প্রয়োজন আমি দেখি না। আর এটার জন্য আমাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আমি জানি না এ প্রতিবেদনের উৎস কী। তবে আমি বলতে চাই, এটি সত্য নয়।’

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে কিছু এমওইউ সই হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

এদিকে আগামী শনিবার চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ে ঢাকায় আসছেন। চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে দেশটির সঙ্গে কিছু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী একটি বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রতিনিধি নিয়ে আগামী শনিবার বাংলাদেশ সফর আসছেন। তাঁরা বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করবেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর সঙ্গেও চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক হবে। এ সময় কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসার সঙ্গে চীনের ব্যবসার একটা সংযোগ সৃষ্টি হবে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে, বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে আমরা বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা এমওইউ স্বাক্ষর করব।’

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে দেশটির পক্ষ থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন—জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘চীন কত বিনিয়োগ করবে, সেটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। কারণ, সিদ্ধান্তটা তারা নেবে। তবে আমরা আশা করি চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী একটা প্রতিনিধিদল নিয়ে আসছেন। আশা করি তাদের এ সফর বিফলে যাবে না।’
গত মার্চে চীন সফর করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরের পর দেশটি থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে, জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আপনি যখন কোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা এক সপ্তাহে ঘটে না।’

চলতি বছরে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির পরিমাণ ১০ গুণ বাড়বে বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। এ সুবিধার আওতায় এবারই প্রথম দেশটিতে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। আম রপ্তানি বহুগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।’

চলতি বছর চীনে ৫০ টন আম রপ্তানির কথা রয়েছে। বুধবার প্রথম চালানে চীনে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের আম রপ্তানি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের বাজারে বাংলাদেশের আম রপ্তানিতে উভয় দেশ লাভবান হবে। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আসবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ