শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগিদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম
Published: 28th, May 2025 GMT
২০১৩ সালে ভারতের মদদে রাজধানীর শাহবাগে ‘ইসলামবিদ্বেষী গণশত্রুরা’ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়বিচার ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদ কায়েমে একাকাট্টা হয়েছিল বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম। ‘শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগিদেরও’ বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে এই দাবি জানিয়েছেন। তাতে ‘ইসলামবিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট শাহবাগিদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে’ জুলাইয়ের ছাত্র-জনতাকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০১৩ সালে ইন্ডিয়ার মদদে শাহবাগে ইসলামবিদ্বেষী গণশত্রুরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়বিচার ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদ কায়েমে এককাট্টা হয়েছিল। সেই শাহবাগ ঘিরে আধিপত্যবাদী ইন্ডিয়ার আগ্রাসী চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেয় হেফাজতে ইসলাম। এর চরম মূল্য হিসেবে হেফাজতের ৫ মে শাপলার গণজমায়েতকে রাতের আঁধারে নির্মম গণহত্যার শিকার হতে হয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, শাপলা চত্বরে ‘তাহাজ্জুদরত রাসুলপ্রেমিক নিরীহ তৌহিদি জনতার ওপর সেই রাষ্ট্রীয় হত্যালীলায়’ সমর্থন ও উসকানি দিয়েছিল একদল ‘ফ্যাসিস্ট শাহবাগি’ বাম ও উগ্র সেক্যুলার গোষ্ঠী।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিবৃতিতে আরও বলেন, শাপলা চত্বরের প্রতিরোধ চেতনায় অনুপ্রাণিত তৌহিদি জনতা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেছিল। ৮৪ জনেরও বেশি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক শহীদ হন। সেই গণ-অভ্যুত্থানে ‘ফ্যাসিবাদের জননী’ শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে আপামর ছাত্র-জনতা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিবৃতিতে বলা হয়, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা দেশের ইসলামপন্থী ও আলেম নেতাদের ‘মৌলবাদী’ বলে গত দেড় দশকের পুরোনো ভারতীয় ও আওয়ামী বয়ানে সুর মিলিয়ে কটাক্ষ করেছেন, যা উদ্বেগজনক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসসহ সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। এর আগে আজ সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারকে খালাস দেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, আলবদর–আলশামস বাহিনী গঠন করে খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের সবার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে, তাদের সবার রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি। গণ অভ্যুত্থানপরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন, বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে কি না।
দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে একাত্তরের গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে বাম জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এবং একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যেমন বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পুরে রাখা হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও–গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচারপ্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও গণমামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিগত আমলে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সবাইকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ করে বাম জোট বলেছে, এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে এক অশনিসংকেত।
সচিবালয়, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে জোটের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল দেশে গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতি দেখে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত এই ভেবে যে এত রক্তপাত ও আত্মত্যাগের পরেও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার অধরাই থেকে যাবে কি না।