সিরাজগঞ্জে সবজি ব্যবসায়ী হত্যায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
Published: 20th, May 2025 GMT
সিরাজগঞ্জে সবজি ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম (২৫) হত্যা মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ এম আলী আহমেদ মঙ্গলবার সকালে আসামিদের অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পেশকার মো. মনোয়ার হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার রায়ের সময় সরকারি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিক সরকার ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পারধুন্দিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খাজা মিয়া ও অপর ছেলে বসু মিয়া, হরিনাথপুর গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক, দরগাপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে মুজাহিদ শেখ, মাদারদহ পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান প্রধানের ছেলে সাইফুল ইসলাম এবং সাঘাটা উপজেলার রামনগর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মিলন সরকার।
মামলার ৭ নম্বর আসামি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাইফুল ইসলাম মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের কেউ আদালতে ছিলেন না। সকলেই পলাতক।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, নওগাঁ জেলা সদরের বলিহার ইউনিয়নের কিসমত-কসবা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে নাজমুল ইসলাম সবজি বিক্রেতা। নওগাঁর চক গৌরিহাট থেকে সবজি কিনে তিনি ঢাকায় বিক্রি করতেন।
২০১৭ সালের ১০ আগস্ট সবজি বিক্রেতা নাজমুল সবজি বিক্রি করে ঢাকার বাইপাইল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পরে তাকে পথে অপহরণ করা হয়। নাজমুলকে অপহরণের পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এরপর মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা না পেয়ে সবজি ব্যবসায়ী নাজমুলকে হত্যা করে তারা। অপহরণের ২দিন পর সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানাধীন ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন রুপসি বাংলা হোটেলের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় সলঙ্গা থানায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অপহরণের পর ভুক্তভোগীর পরিবারের নিকট অপহরণকারীদের ফোনের কল লিস্ট এর সূত্র ধরে তদন্ত করা হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ছেলেকে নিয়ে বাড়ি তো যেতে পারিই না, তার বাবার কবরও দেখাতে পারি না’
একমাত্র ছেলে নীলাভের (ছদ্মনাম) বয়স যখন আট মাস, তখন স্বামীকে হারান আফসানা খাতুন (ছদ্মনাম)। এরপর জীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন তিনি। চাকরি, লেখালিখি আর ছেলেকে নিয়েই পথ চলতে চেয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্তে সব সময়ই তাঁর পাশে ছিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। মেয়ের মতোই ভালোবাসা ও আস্থা দিয়ে পাশে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের নিজেদের দুটি বাড়ির মধ্যে একটি নীলাভকে লিখে দিয়ে গেছেন, করে যান অসিয়তনামাও।
বিপত্তি বাধে শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যুর পর। তখন এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে একমাত্র ছেলের নিরাপত্তার শঙ্কায় গত তিন বছর স্বামীর কবর জিয়ারত করতেও শ্বশুরবাড়ির এলাকায় যেতে পারছেন না আফসানা। কারণ, তিন বছর আগে এক ঈদের রাতে প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তাঁর দেবর।
আফসানা বলছিলেন, ঠাকুরগাঁও শহরে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির দুটি বাড়ি ছিল। একতলা দালানে তাঁরা থাকতেন। এর পাশেই আছে আরেকটি টিনশেড বাড়ি, যেটা ভাড়া দেওয়া ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর টিনশেড বাড়িটি তাঁর ছেলের নামে এবং একতলা বাড়িটি তাঁর দেবরের নামে লিখে দেন শ্বশুর-শাশুড়ি। তাঁদের মৃত্যুর পর অন্য একটি জমি বিক্রির কথা বলে দেবর তাঁর সই চান। কিন্তু বৃত্তান্ত না জেনে তিনি সই করতে চাননি। যেহেতু তাঁর ছেলে নাবালক, তাই কোনো জমি সম্পর্কে না জেনে তো তিনি আর সই করতে পারেন না।
তখন সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে এক ঈদের রাতে আফসানা ও তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। এরপর তিন বছর পেরিয়েছে, আর শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেননি আফসানা। করতে পারেননি স্বামীর কবর জিয়ারত। কেবল যে বাড়িটির দলিল আছে, সেখান থেকে অনলাইনে ভাড়া তুলে নেন।
কেবল আফসানাই ননআমাদের দেশে স্বামী বা বাবার মৃত্যুর পর দাদাবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, সম্পদে অধিকার না দেওয়া, বাড়িতে প্রবেশের অধিকার হরণসহ নানা ঘটনা অহরহই ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নাবালক সন্তান, মেয়েসন্তান ও স্ত্রী এ ধরনের দুর্ভোগের মুখে পড়েন। আইন না জানা, যথাযথ আইনজীবীর পরামর্শ নিতে না পারা এবং আদালত নিয়ে একধরনের নেতিবাচক ধারণা থাকায় তাঁরা অধিকারবঞ্চিত থাকেন।
তবে বাংলাদেশের আইনে এসব ঘটনার সুস্পষ্ট বিধান আছে। কেউ চাইলেই কারও অধিকার কেড়ে নিতে বা নষ্ট করতে পারে না বলে জানালেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা আফরিন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন খুবই নির্দিষ্ট। প্রথমেই যেটা করতে হবে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদ বের করতে হবে। সেখানে লেখা থাকবে যে কে কে তার বৈধ ওয়ারিশ। আর এই বৈধ ওয়ারিশকে কোনোভাবেই তাঁর অধিকার থেকে বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
আরও পড়ুনমেয়ের কবরের পাশে থাকতে বাবা তৈরি করলেন এই বাড়ি০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আইনজীবীর পরামর্শএ ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনজীবী ফারজানা আফরিনের পরামর্শ হলো, স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে সম্পত্তির দাগ ও খতিয়ান নম্বর খুঁজে মূল দলিল বের করতে হবে। যদি সেসবের মধ্যে কোনোটি তাঁদের না জানিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়, তাহলে দেওয়ানি মামলা করা যাবে। যদি অন্য ওয়ারিশ কোনো জমি বিক্রিও করে থাকেন, তাহলে নতুন আইন অনুযায়ী, তাঁর নিজের সম্পদ বিক্রি করে হলেও বাকি ওয়ারিশদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
ফারজানা আফরিন বলেন, সন্তানকে তার দাদার বাড়িতে যেতে না দেওয়া, সন্তানের মাকে সেখানে যেতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে সিভিল কোর্টে মামলা করা যেতে পারে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মামলার আরজিটা কত ভালোভাবে লেখা হলো। আরজি ঠিকঠাক লেখা হলে অবশ্যই বাড়ি যাওয়ার অধিকার ফিরে পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
যথাযথভাবে আদালতের শরণাপন্ন হলে প্রতিকার মেলে জানিয়ে ফারজানা আফরিন বলেন, ‘কারও আইনি অধিকার অন্য কেউ চাইলেই খর্ব করতে পারে না। আদালতে সবকিছুরই প্রতিকার মেলে। আপনাকে শুধু ভালো একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে এবং আপনার পক্ষের সব কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।’
আরও পড়ুনসবার চেয়ে এগিয়ে থাকতে যে ৯টি এআই দক্ষতা আপনার এখনই অর্জন করা উচিত০৩ জুলাই ২০২৫