ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের নদীবন্দরগুলোতে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বুধবার (৪ জুন) থেকে ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল, ভোলা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন ঘাটে বাড়তে শুরু করেছে যাত্রীর চাপ। ঈদের আনন্দে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই লক্ষ্যে সরকার নিয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও তদারকি ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাম্প্রতিক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানানো হয়, এবারের ঈদযাত্রায় নৌপথে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ, মাঝ নদীতে যাত্রী ওঠানো, লঞ্চের ছাদে যাত্রী পরিবহন এবং জুয়া খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভাড়া নিয়ে অনিয়ম হলে রুট পারমিট বাতিল ও মোবাইল কোর্টে জরিমানা হবে বলেও স্পষ্ট জানানো হয়েছে।

ভাড়ায় অনিয়মে জরিমানা ও পারমিট বাতিল
ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নৈমিত্তিক হলেও এবার তা ঠেকাতে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকার। প্রতিটি লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা স্পষ্টভাবে প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন:

ঈদযাত্রায় প্রস্তুত পাটুরিয়া-আরিচা নৌরুট

সদরঘাটে টিকিটে নেই টান, ৭০ শতাংশ কেবিন খালি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌ পরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এক টাকাও অতিরিক্ত আদায় বরদাশত করা হবে না। ভাড়ায় অনিয়ম ধরা পড়লে মালিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে জরিমানা এবং প্রয়োজনে রুট পারমিট বাতিল করা হবে।”

ফিটনেস সনদ ও মাঝনদীতে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ
এবার ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ ঈদযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। পাশাপাশি ঈদের আগের তিনদিন ও পরবর্তী সাতদিন নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিবারের মতো এবারো মাঝনদীতে যাত্রী ওঠানোর প্রবণতা বন্ধে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

উপদেষ্টা বলেন,“মাঝনদীতে যাত্রী ওঠা মানেই জীবনের ঝুঁকি। এবার কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল, জরিমানা এবং লাইসেন্স বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

টহলে আনসার, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশ
নৌবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার আনসার, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টহল দল মোতায়েন থাকবে।

ঢাকার সদরঘাট, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটকে ‘উচ্চ নজরদারির এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ঘাটে থাকবে অতিরিক্ত টহল, মোবাইল কোর্ট এবং ফায়ার সার্ভিসের ভাসমান ইউনিট।

প্রতিটি লঞ্চে ন্যূনতম চারজন আনসার সদস্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ঘাট এলাকায় স্টাফদের সুনির্দিষ্ট পোশাক ও আইডি কার্ড পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ইজারাদারদের কঠোর বার্তা
নৌযাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের বার্তা হলো- অতিরিক্ত চার্জ বা ফি নেওয়া যাবে না। নির্ধারিত কর্মীদের ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র পরিধান বাধ্যতামূলক।

লঞ্চে ছাদে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ, জুয়া খেলার ওপর জিরো টলারেন্স
লঞ্চের ছাদে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ, জুয়া খেলার ওপর জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে। লঞ্চের ছাদে যাত্রী তোলা এবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ছাদে ওঠার সিঁড়িগুলো খুলে ফেলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীপথে চলাচলকারী যেকোনো লঞ্চে জুয়া খেলার আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মাস্টার, ড্রাইভারসহ লঞ্চের প্রত্যেক কর্মীকে নাম ট্যাগসহ ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক।

সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাটে প্রস্তুত ৪৬টি ফেরি
ঈদের সময় জরুরি পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে পাটুরিয়া, আরিচা, চাঁদপুর, ভোলা, লাহারহাট, চিলমারী ও ধাওয়াপাড়া ঘাটে সর্বমোট ৪৬টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসময় সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ, কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পচনশীল পণ্যের যানবাহন চলতে পারবে। চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের জন্য থাকছে ছয়টি বেসরকারি লঞ্চ এবং দুইটি সরকারি স্টিমার।

নতুন রুট চালু ও রাজধানীর রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ
সম্প্রতি চিলমারী-রৌমারী রুটে ড্রেজিং শেষে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়া ঈদের যানজট কমাতে ৩০ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোনো বাস দাঁড় করালে রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।

আবহাওয়া ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা
ঈদের সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় আবহাওয়া অধিদপ্তরকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যেকোনো অনিয়ম, হয়রানি বা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যাত্রীরা সরাসরি জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ কিংবা নৌ পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর আলম বলেন, ঈদ যেন আনন্দ বয়ে আনে, দুর্ঘটনা নয় এই লক্ষ্যেই সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীকে মানবিকতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।


ঢাকা/এএএম/মাসুদ
 

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পথ ঈদ ঈদয ত র য় প রস ত ত ব যবস থ পর বহন সদরঘ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার

ঈদের ছুটিতে পরিবার ও প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরমুখো মানুষ গ্রামের বাড়িতে যেতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকলেও কোথাও কোন যানজট নেই।

মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে র‌্যাব-১১, জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করছে। রাজধানী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ আশে-পাশের জেলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩৩ টি রুটে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরবে পূর্বাঞ্চলের ১৮ জেলার মানুষ।

এ মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও ডাকাতি মুক্ত নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

এদিকে, র‌্যাব-১১ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে। র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, মহাসড়কে কোন যানজট নেই।

গাড়ির চাপ একটু বাড়তি। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা ও যানজট মুক্ত এবং নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। মহাসড়কে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদ পরবর্তী সময়েও এ কার্যক্রম চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। শহর কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতেও গোয়েন্দা নজরদারি ও পেট্রোল ডিউটি চলমান থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সদরঘাটে স্বস্তির ঈদযাত্রা
  • মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার
  • লঞ্চে উঠতে গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ে গেলেন ৫ যাত্রী
  • সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড়
  • আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম নজরদারি করছে র‌্যাব
  • কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরার জাহাজ থেকে ছিটকে পড়ে দুই নাবিকের মৃত্যু
  • ঈদে পশুরহাট, বাসা-বাড়িতে র‌্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা