শেকড়ে ফেরাল ফুটবল, ট্রায়ালের ফলাফল কবে
Published: 1st, July 2025 GMT
তারা কেউ তারকা নন। সোমবার গোধূলিলগ্নে জাতীয় স্টেডিয়ামে তাদের নিয়ে দর্শকদের কাড়াকাড়ি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একঝাঁক ফুটবলার নিয়ে কৌতূহলের কমতি নেই ফুটবল অনুরাগীদের। গ্যালারি থেকে সবুজগালিচায় নেমে বিতোশক চাকমা-ইমান আলমদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত তারা। বড় কোনো নামি খেলোয়াড় এখনও হয়ে ওঠেননি ইকরামুল-তোফায়েলরা, তবে বাংলাদেশের মানুষের চোখে তারাই এখন সময়ের সেরা তারকা!
এই ফুটবলারদের নিয়ে বাফুফের ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ যেভাবে সাড়া ফেলেছে, তাতে দেশের ফুটবলে যোগ হয়েছে নতুন উন্মাদনা। ইউরোপ-আমেরিকান অঞ্চলের ৪৮ ফুটবলার নিয়ে তিন দিন হয়ে গেল ট্রায়াল। এর শেষটা হয়েছে গতকাল দুটি প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে। যেখানে দুই ভাগে নিজেদের ফুটবলশৈলী দেখিয়েছেন এই খেলোয়াড়রা। যে ম্যাচে জয়-পরাজয় কোনো মুখ্য ছিল না। তাই ছিল উৎসবের আমেজ।
শুধু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা নন, সঙ্গে এসেছিলেন তাদের আত্মীয়স্বজনও। অনেকের হাতে খেলোয়াড়ের নামসংবলিত ব্যানার। উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা আর ভালোবাসার মুহূর্তগুলো বন্দি করতে ব্যস্ত এই ফুটবলারদের পরিবার। ম্যাচ শেষে সার্টিফিকেট পেয়ে সে কী উচ্ছ্বাস সঞ্জয় করিম-ইজাজ রহমানদের।
যুক্তরাজ্যের মারগেট এফসিতে খেলা ১৯ বছর বয়সী ইমান আলমের কাছে এ মুহূর্তটি সারাজীবন মনে থাকবে, ‘আমি চার-পাঁচ মাস আগে একবার এসেছিলাম বাংলাদেশে। সিলেট আর গুলশানে ট্রেনিং করি। তবে আমার এবারের আসাটা একজন ফুটবলার হিসেবে, যা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। সে জন্যই এখানে আসা।’
তাঁর মতো স্বপ্ন ইকরামুলেরও। ইংল্যান্ড থেকে আসা এ খেলোয়াড় তিন দিনের ট্রায়ালে মুগ্ধ, ‘প্রথম দিন মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। আজকের (সোমবার) দিনটি তো মনে রাখার মতো। যে মানের পারফরম্যান্স করার কথা, সেটি করতে পারিনি। কারণ প্রচণ্ড গরম ছিল। তার পরও আমি আশাবাদী নির্বাচকরা আমাকে বিবেচনা করবেন। আমার পরিবারের স্বপ্ন, আমি যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলি।’
ইকরামের মতো স্বপ্ন সবার। তবে সবাইকে যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নেবে না, তা অনুমেয়। প্রথম দু’দিন এই খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও স্কিল দেখেছিলেন ট্রায়ালে নিয়োজিত কোচরা। এ দিন ৪৮ জনকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ম্যাচের আয়োজন করে বাফুফে। অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সী ফুটবলারদের দুটি গ্রুপে এবং সিনিয়র পর্যায়ের খেলোয়াড়দের দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিকেল ৪টায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রীতি ম্যাচে প্রবাসীরা সবুজ এবং নীল দলে ভাগ হয়ে খেলে। যে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। যেখানে আলাদাভাবে নজর কাড়েন বিতোশক চাকমা।
যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় সারির ক্লাব ব্রটলিন এফসিতে খেলা বিতোশক দেখিয়েছেন তাঁর পায়ের শৈলী। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং এবং নিঁখুত ফিনিশিংয়ে সবাইকে মোহিত করা এ প্রবাসী দারুণ একটি গোলও করেছেন। বিশোতক চাকমা হলেন সাবেক ফুটবলার বরুণ বিকাশ দেওয়ানের ভাগ্নে। এরপর সিনিয়র দলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেখানে কোনো দলই গোল করতে পারেনি।
এই একটি ম্যাচেই প্রবাসী ফুটবলারদের মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ ম্যাচ খেললেও তাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা এখনও হয়ে ওঠেনি। যে কারণে কতজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে তা এখনও প্রকাশ করেনি বাফুফে। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু থেকে বাকি কোচিং স্টাফের কেউই তাদের পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমকে জানাননি। তবে যতটুকু জানা গেছে, এসব প্রবাসীর সঙ্গে আলাদা মিটিং করেছেন বাফুফের অফিসিয়ালরা। তাদের সঙ্গে খোলামেলা অনেক কথাই বলেছেন তারা। দু’একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা হয়তো জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পূজার ছুটির পর গকসুর অভিষেক
৭ বছরের বিরতির পর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) অনুষ্ঠিত হলো চতুর্থ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নতুন নেতৃত্ব।
তবে পূজার ছুটি শেষ না হওয়ায় এখনও হয়নি অভিষেক ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। ফলে দায়িত্বভার নিতে পারছেন না নবনির্বাচিতরা।
আরো পড়ুন:
গকসুর জিএস, এজিএসের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আপত্তি, পুনর্নির্বাচন দাবি
চাকসু নির্বাচন: দুই নারী প্রার্থীকে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপূজার পর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের অভিষেক। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। এতে নির্বাচনের পর যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তা এখন রূপ নিয়েছে অপেক্ষার আবহে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ২৫ সেপ্টেম্বর দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৭ বছরের ব্যবধান ঘুচিয়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বেছে নেন। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, প্রার্থীদের প্রচারণা আর ভোটের দিন ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে তোলে।
ভোট শেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলেও আনুষ্ঠানিক অভিষেক না হওয়ায় এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি তারা।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেশমা আক্তার বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলেও নির্বাচিত সদস্যরা এখনও শপথ গ্রহণ করেননি। এই বিলম্বের সুযোগে কিছু মহল নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে সফল করতে এবং অপপ্রচার রোধে নির্বাচিত সদস্যদের দ্রুত শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারেন।”
সদ্য নির্বাচিত সহ-সভাপতি ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ান বলেন, “নির্বাচনের পরের দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল এবং দুর্গাপূজার ছুটির কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন পূজার ছুটির পর যতদ্রুত সম্ভব অভিষেক ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, “ছুটি শেষে শপথ গ্রহণ ও অভিষেক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি।”
২০১৩ সালে প্রথমবার গকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর চতুর্থ নির্বাচনে সম্পাদকীয় ও অনুষদ প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট ১২টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৫৮ জন প্রার্থী। ভোটার ছিলেন ৪ হাজার ৭৬১ জন।
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী