ইমরান খানের মুক্তির পক্ষে কেন সোচ্চার হচ্ছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা
Published: 11th, January 2025 GMT
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে তখন তুমুল বিক্ষোভ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী রিচার্ড গ্রেনেল সে সময় পাকিস্তানি সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দী ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানান। গত নভেম্বরে এ দাবিসংবলিত তাঁর একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
একই দিন আরেকটি টুইট বার্তায় গ্রেনেল লেখেন, ‘পাকিস্তানের দিকে তাকান। দেশটিতে ট্রাম্পের মতো একজন নেতা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাল ঢেউয়ে (লাল রং ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে যুক্ত) অনুপ্রাণিত হয়েছেন সেখানকার জনগণ। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমা বন্ধ করুন।’ পরে এই টুইট মুছে ফেলা হয়।
গ্রেনেলের দুটি টুইটেই হাজার হাজার ভিউ হয়েছে। ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প ১৫ ডিসেম্বর গ্রেনেলকে বিশেষ মিশনের দায়িত্ব দিয়ে প্রেসিডেনশিয়াল দূত মনোনীত করেন। এর পরের দিন ১৬ ডিসেম্বর ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠ মিত্র আবারও ইমরানের মুক্তি চান। ওই সময় তাঁর পোস্টে ভিউয়ের সংখ্যা ছিল কোটির বেশি।
অনেক ভাষ্যকার বলছেন, ইমরান খানকে নিয়ে ট্রাম্পঘনিষ্ঠদের এত আগ্রহের কারণ নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। ট্রাম্পমিত্ররা বিষয়টিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির ক্ষেত্রে এক অর্থপূর্ণ চাপ সৃষ্টি বলে দেখাচ্ছেন। কেউ কেউ একে পিটিআইয়ের ভাগ্যের পরিহাস হিসেবে চিহ্নিত করছেন। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে তদবিরের চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ তিন বছরের কম সময় আগেও দলটি ইমরানকে অপসারণের পেছনে ওয়াশিংটনের ভূমিকা থাকার অভিযোগ করে।গ্রেনেলের বার্তা আরও গুরুত্ব পায়, যখন রিপাবলিকান দলের আরেক নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের সাবেক মনোনীত ব্যক্তি ম্যাট গেটজও লেখেন, ‘ইমরান খানকে মুক্তি দিন।’
এক্সের (সাবেক টুইটার) এসব পোস্ট ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে সমর্থন জোরালো হওয়ার ইঙ্গিত। নিজেদের নেতার মুক্তির দাবিতে সেই ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে দলটি।
তবে অনেক ভাষ্যকার বলছেন, ইমরান খানকে নিয়ে ট্রাম্পঘনিষ্ঠদের এত আগ্রহের কারণ নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। ট্রাম্পের মিত্ররা বিষয়টিকে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির ক্ষেত্রে এক অর্থপূর্ণ চাপ সৃষ্টি বলে দেখাচ্ছেন। কেউ কেউ একে পিটিআইয়ের ভাগ্যের পরিহাস হিসেবে চিহ্নিত করছেন। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে তদবিরের চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ তিন বছরের কম সময় আগেও দলটি ইমরানকে অপসারণের পেছনে ওয়াশিংটনের ভূমিকা থাকার অভিযোগ করে।
পাকিস্তানের দিকে তাকান। দেশটিতে ট্রাম্পের মতো একজন নেতা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাল ঢেউয়ে (লাল রং ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে যুক্ত) অনুপ্রাণিত হয়েছেন সেখানকার জনগণ। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমা বন্ধ করুন।রিচার্ড গ্রেনেল, ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল দূতজটিল সম্পর্কপ্রায় চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে অপসারণ করা হয় ইমরান খানের সরকারকে।
ক্ষমতাচ্যুতির কারণ হিসেবে ওই সময় ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হওয়া এক ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। একই সঙ্গে তিনি সমর্থকদের দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আয়োজনের আহ্বান জানান। ইমরানের ওই অভিযোগ জোরালভাবে নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান—দুই দেশই।
এ ঘটনার পর থেকে ইমরান ও তাঁর নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের দমন–পীড়নের শিকার হয়ে চলেছেন। কয়েক ডজন অভিযোগে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে তাঁকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর দলের প্রতীক ক্রিকেট ব্যাটকে দেশের জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে দলটির মনোনীত ব্যক্তিরা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
ইমরান খান ও তাঁর দলের ওপর দমন–পীড়ন চলার পুরো সময়ে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোনো রকম মন্তব্য করা থেকে অনেকটাই চুপ থেকেছেন। তাঁরা বলছেন, এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রভাবশালী বিভিন্ন পাকিস্তানি গোষ্ঠী, যাদের বেশির ভাগ ইমরান ও পিটিআইয়ের সমর্থক, তারা তাঁর মুক্তির জন্য মার্কিন রাজনীতিবিদদের মধ্যে জোর প্রচার চালাচ্ছে।ইতিমধ্যে ইমরানের অপসারণের ঘটনার পর পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ২০২২ সালের মে মাসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডোনাল্ড ব্লমকে পাকিস্তানে নিয়োগ দেয়। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে পদটি খালি পড়ে ছিল।
ইমরান খান ও তাঁর দলের ওপর দমন–পীড়ন চলার পুরো সময়ে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোনো রকম মন্তব্য করা থেকে অনেকটাই চুপ থেকেছেন। তাঁরা বলছেন, এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রভাবশালী বিভিন্ন পাকিস্তানি গোষ্ঠী, যাদের বেশির ভাগ ইমরান ও পিটিআইয়ের সমর্থক, তারা তাঁর মুক্তির জন্য মার্কিন রাজনীতিবিদদের মধ্যে জোর প্রচার চালাচ্ছে।
হাসান আব্বাস ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি গোষ্ঠীগুলোর বিশেষ করে ইমরান খানের মুক্তির দাবিকে ঘিরে সোচ্চার প্রচার-প্রচারণা দুই দেশের সম্পর্কে জটিলতার মাত্রা যুক্ত করেছে।’
পাকিস্তানি ওই গোষ্ঠীগুলোর প্রচেষ্টায় গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ‘পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এক শুনানি। সেখানে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি—উভয় দল থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের প্রতি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানানো হয়।
কয়েক মাস পর গত বছরের অক্টোবরে বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির ৬০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা ইমরান খানের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ইসলামাবাদের ওপর ওয়াশিংটনের প্রভাব খাটাতে বাইডেনকে আহ্বান জানান। পরে গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা আতিফ খান ট্রাম্পের পুত্রবধূ লারা ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইমরানের বন্দিজীবন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।
ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এর দুই দিন পর ২২ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে পাকিস্তানে গত নভেম্বরের বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে কংগ্রেশনাল শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বিক্ষোভে পিটিআইয়ের অন্তত ১২ কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার জন্য পিটিআই শাহবাজ শরিফ সরকারকে দায়ী করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের পক্ষ থেকে যেসব মন্তব্য আসছে, সেসবের কোনো গুরুত্ব থাকার কথা উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ। গত মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন স্বার্থ ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে’ সম্পর্ক চায়।
আরও পড়ুনপাকিস্তানে ৯ মের বিক্ষোভ: সামরিক আদালতে ২৫ বেসামরিক ব্যক্তির সাজা২১ ডিসেম্বর ২০২৪পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র রানা ইহসান আফজাল বলেন, গ্রেনেল বা গেটজের মতো ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আসা মন্তব্য ‘একজন মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত’ বক্তব্য হিসেবে দেখছে ইসলামাবাদ।
আফজাল আরও বলেন, ‘কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত মন্তব্যে (পাকিস্তান) সরকার সাড়া দেয় না। আমরা নতুন প্রশাসনের (যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্বেগ থাকলে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক সাড়া দিতে পারে।’
গ্রেনেল বা গেটজের মতো ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আসা মন্তব্য ‘একজন মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত’ বক্তব্য হিসেবে দেখছে ইসলামাবাদ।রানা ইহসান আফজাল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্রযুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানি স্বীকার করেন, ইমরান ও তাঁর দলের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সে দেশের প্রবাসী পাকিস্তানি গোষ্ঠীগুলো সাফল্য দেখিয়েছে। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘ইমরান খানের মুক্তির আহ্বান জানাতে তারা দুই দলের নেতাদেরই রাজি করাতে পেরেছে।’
তবে হাডসন ইনস্টিটিউটের এই জ্যেষ্ঠ ফেলো সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে এখনো পাকিস্তান নিম্ন অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে।
বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ, অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তাতে সবজির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সবজির সরবরাহ মোটামুটি থাকলেও দাম থাকে চড়া। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দামও কমতে শুরু করে। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে।
বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে এসব সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম শীতের সবজি বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার বেশ দেরিতেই এসব সবজি বাজারে এসেছে।
দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়াগত কারণে এবার আগাম সবজি একটু দেরিতে চাষ হয়েছে। এ জন্য খেত থেকে সবজি তুলতেও দেরি হয়।
এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরাকৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের টানা বৃষ্টির একটি ভূমিকা ছিল। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।
এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতিশেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে অন্যান্য সময় যেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, সেখানে এবার তা অক্টোবরের শেষে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম না কমার অন্যতম কারণ।
ভিন্ন দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়। এর মধ্যে গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমির এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, চলতি বছর শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিন দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। তবে সেটি সার্বিক চিত্র নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম, এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ কথা। আমাদের তথ্য বলছে, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন শীতের আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয় হয়ে এসেছে। আগাম সবজি যদি কম থাকত, তাহলে দাম আরও চড়া থাকার কথা ছিল।’
বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন,সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু জেলার নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল। এ ছাড়া বগুড়া, যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করেছে তারা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে আবার সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।
করণীয় কীবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ সত্যকে মেনে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজনের বিকল্প নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও ভালো দাম পাবেন।