ময়মনসিংহে প্রায় অর্ধশত রেলক্রসিং অরক্ষিত। এসব স্থানে কোনো গেটকিপার না থাকায় এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। এ ছাড়া রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনার কারণেও ট্রেনে কাটা পড়ছে অসতর্ক মানুষ।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার তথ্যমতে, গত এক বছরে অরক্ষিত ৪৪ রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। একাধিকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাট। যে কারণে অসতর্ক অবস্থায় প্রায়ই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মরছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, জামালপুর-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম চারটি রেলপথে ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে প্রতিদিন ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ের আওতায় ৩২টি রেলক্রসিং রয়েছে সুরক্ষিত। এসব রেলক্রসিংয়ে রয়েছে নিয়মিত গেটকিপার। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠেছে আরও ৪৪টি রেলক্রসিং। এসব রেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটকিপার। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ।
নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রেললাইনে জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। রেললাইনের ওপর বসছে কাঁচাবাজার। কয়েক দিন আগে সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় দোকানের বাঁশের খুঁটির আঘাতে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে মারা যান এক যাত্রী। এভাবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর পরও বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট।
রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে তাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। সম্প্রতি রেলের জমি উদ্ধার করতে এসে ভূসম্পত্তির লোকজন এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে। এ ছাড়া যেসব দখলদার রেলওয়ের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন, তারাও দখল ছাড়তে রাজি হন না। 
রেললাইন ঘেঁষে অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলায় অসতর্ক অবস্থায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে আঘাত পেয়ে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হন জামালপুরের আহাদুল ইসলাম শিপন নামে এক যাত্রী।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, রেললাইন ঘেঁষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব কারণে ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গত এক বছরে ৪৯ জন ট্রেন কাটা পড়ে মারা গেছে। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোস্তাফিজুর 
রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র রেলক্রসিং চালু হয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ছে মানুষ। অনেকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পিছু হটতে হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক স্ত্রীকে খুনের পর মেয়েকে দলিল বুঝিয়ে দিয়ে আত্মহনন

ময়মনসিংহ নগরীতে প্রাক্তন স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রাকিবুল করিম (৫০) নামে এক ব্যক্তি। আত্মহত্যার আগে তিনি জমিজমার দলিলপত্র তার মেয়েকে বুঝিয়ে দেন বলে জানান ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন। 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোরে নগরের গুলকীবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। মরদেহ দুইটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত রওশন আক্তার (৪২) গুলকীবাড়ি এলাকার ওই বাসায় মেয়েকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন। তার বাবার বাড়ি নেত্রোকোণা সদরের রাজুর বাজার এলাকায়।  রাকিবুল করিম (৫০) ময়মনসিংহ নগরের সেনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন।  

আরো পড়ুন:

জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গঠন: প্রধান উপদেষ্টা

শৌচাগারে মিলল গৃহবধূর বস্তাবন্দি লাশ

পুলিশ জানায়, রাকিবুল ও রওশন দম্পতির দুই মেয়ে। তাদের বড় মেয়ে ঢাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ছোট মেয়ে ময়মনসিংহ নগরের ক্যান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। রওশন গুলকীবাড়ি এলাকার একটি বাসায় ছোট মেয়েকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন। পারিবারিক কলহের জেরে মাস তিনেক আগে রাকিবুল ও রওশন আক্তারের ডির্ভোস হয়। 

আজ মঙ্গলবার ভোরে রওশন আক্তার যে বাসায় ভাড়া থাকেন সে বাসায় প্রবেশ করেন রাবিবুল। তিনি রওশন আক্তারকে ছুরিকাঘাত করেন। মাকে ছুরিকাঘাত করতে দেখে ছোট মেয়ে রোজা আক্তার ভয়ে অন্য একটি কক্ষে আশ্রয় নেয়। রওশন আক্তারকে হত্যার পর রাকিবুল নিজে বাসার অপর একটি কক্ষে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুইটি মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত রওশন আক্তারের ভাতিজা ইকবাল হোসেন শাওন বলেন, ‍“পারিবারিক কলহের জেরে দুইজনের ডিভোর্স হয়েছিল। সকালে রওশন আক্তারের ভাড়া বাসায় ঢুকে রাকিবুল তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে তিনি মেয়েকে বেঁধে রেখে অন্য একটি রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে নেত্রকোণা থেকে এসে মরদেহ দেখতে পাই।”

বাড়িটির দায়িত্বে থাকা রকিবুল ইসলাম লিটন বলেন, “১০-১২ বছর আগে বাসাটি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন রওশন আক্তার ও তার মেয়েরা। তার বড় মেয়ে ঢাকায় থাকত। তাদের চালচলন ভালোই ছিল। হঠাৎ এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি।”

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গত ২৪ জুন ওমান থেকে দেশে আসেন রাকিবুল করিম। তিনমাস আগে স্ত্রী কর্তৃক তিনি তালাকপ্রাপ্ত হন। আজ বাসায় ঢুকে প্রথমে স্ত্রীকে হত্যা করেন রাবিবুল। এরপর নিজের জমিজমার দলিলপত্র মেয়েকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেন।”

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না আমরা খতিয়ে দেখছি।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাদের বাড়িতে কেবলই কান্না
  • ‘অহন এই ডিপকল হইছে, মনে অয় পানির কষ্ট কিছুডা দূর অইব’
  • ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • ঘরে ঢুকে প্রাক্তন স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, পরে আত্মহত্যা
  • নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর সাবেক স্বামীর আত্মহত্যা
  • সাবেক স্ত্রীকে খুনের পর মেয়েকে দলিল বুঝিয়ে দিয়ে আত্মহনন
  • পাকুন্দিয়ায় নৌকা ডুবি, নিহত ১ নিখোঁজ ২
  • ঈশ্বরগঞ্জে কমিটি গঠন
  • ঢাকা ও ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে সব ধরনের অনলাইন জিডি
  • ঢাকা-ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি