ট্রেনে কাটা পড়ে এক বছরে ৪৯ জনের মৃত্যু
Published: 12th, January 2025 GMT
ময়মনসিংহে প্রায় অর্ধশত রেলক্রসিং অরক্ষিত। এসব স্থানে কোনো গেটকিপার না থাকায় এক বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। এ ছাড়া রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনার কারণেও ট্রেনে কাটা পড়ছে অসতর্ক মানুষ।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার তথ্যমতে, গত এক বছরে অরক্ষিত ৪৪ রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ৪৯ জন। একাধিকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাট। যে কারণে অসতর্ক অবস্থায় প্রায়ই ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মরছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, জামালপুর-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম চারটি রেলপথে ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন থেকে আন্তঃনগর ও লোকাল মিলে প্রতিদিন ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলওয়ের আওতায় ৩২টি রেলক্রসিং রয়েছে সুরক্ষিত। এসব রেলক্রসিংয়ে রয়েছে নিয়মিত গেটকিপার। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠেছে আরও ৪৪টি রেলক্রসিং। এসব রেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটকিপার। এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ।
নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, রেললাইনে জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। রেললাইনের ওপর বসছে কাঁচাবাজার। কয়েক দিন আগে সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় দোকানের বাঁশের খুঁটির আঘাতে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে মারা যান এক যাত্রী। এভাবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর পরও বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট।
রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও নানা কারণে তাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। সম্প্রতি রেলের জমি উদ্ধার করতে এসে ভূসম্পত্তির লোকজন এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে। এ ছাড়া যেসব দখলদার রেলওয়ের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন, তারাও দখল ছাড়তে রাজি হন না।
রেললাইন ঘেঁষে অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলায় অসতর্ক অবস্থায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে আঘাত পেয়ে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হন জামালপুরের আহাদুল ইসলাম শিপন নামে এক যাত্রী।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, রেললাইন ঘেঁষে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব কারণে ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গত এক বছরে ৪৯ জন ট্রেন কাটা পড়ে মারা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোস্তাফিজুর
রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র রেলক্রসিং চালু হয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ছে মানুষ। অনেকবার এসব রেলক্রসিং বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পিছু হটতে হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ
৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করেছেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। আর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা বিকেল পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন। এর মধ্যে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নিলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন স্টেশন বাজার রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহী থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা দাবি করেন, প্রথমবার লিখিত পরীক্ষায় বসতে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য মাত্র দুই মাস সময় দেওয়া বৈষম্যমূলক। এত কম সময়ে ১ হাজার ১০০ নম্বরের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘সময় চাই, সময় চাই, যৌক্তিক সময় চাই’, ‘এক দুই তিন চার, পিএসসি স্বৈরাচার’, ‘সবাই পায় ছয় মাস, আমরা কেন দুই মাস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আকতার বলেন, ‘প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর লিখিতের জন্য মাত্র দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এটা অযৌক্তিক। আমরা শুধু যৌক্তিক সময় চাই।’
মেহেদি হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে যৌক্তিক সময়ের দাবিতে আন্দোলন করছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পরীক্ষার্থীরা আমাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে। তবু পিএসসির অবস্থান একই রয়ে গেছে। আমরা চাই, পরীক্ষার সময় পেছানো হোক, যাতে সবাই সমানভাবে প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিকে ‘অবাস্তব ও বৈষম্যমূলক’ উল্লেখ করে তিন ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পরীক্ষার্থীরা। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এর ফলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী তিস্তা ও মহুয়া এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের চলাচল বিঘ্নিত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার বিকেলে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আব্দুল জব্বার মোড়ে আসেন। পরে তারা আব্দুল জব্বার মোড় সংলগ্ন রেললাইনের ওপর অবস্থান করেন।
৪৭ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রেলপথ অবরোধ