ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাবসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এসব সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে এদিন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুদক ছাড়াও নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে।

দুদককে শক্তিশালী করতে আট সদস্যের কমিশনের তৈরি করা সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে সরকার প্রধানের কার্যালয়ে কথা বলছিলেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠান কোনো দেশেই এবং বাংলাদেশেও এককভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার উপরে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব নীতিনির্ধারণের কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত রাষ্ট্র এবং সামাজিক পরিবেশ লাগে। পুরো রাষ্ট্র এবং সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হয় এর অবকাঠামোতে।’’

“সেই বিবেচনায় আমরা আমাদের সংবিধানের ২০-এর ২ অনুচ্ছেদে যেটা আছে, সেটার সংশোধন করতে চাই। সেটা হচ্ছে, সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের একটা অঙ্গীকার।”

তার কথায়, “রাষ্ট্র এবং আইনি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা অর্জনে যে ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে, সেটা প্রতিরোধ করতে তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অঙ্গীকার লাগবে। যদিও এর সুযোগ আমাদের সংবিধানে আছে।”

দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কোনো জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী কৌশল নেই। কোনো নীতিমালা নেই। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করছি, কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক কাঠামোতে দুর্নীতি বিরোধী শুধু প্রত্যয়ই না, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে অঙ্গীকারগুলো দরকার, দায়িত্ব এবং কর্তব্য সেটি নির্ধারণ করা।’’

দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ন্যায়পালের গুরুত্ব তুলে ধরেন এই সংস্কার কমিশনের প্রধান।

তিনি বলেন, “ন্যায়পালের একটা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, যাদের দায়িত্ব হবে এই কৌশলের বাস্তবায়ন বা প্রতিফলনের মূল্যায়ন করা। ধারাবাহিকভাবে, নিয়মিতভাবে।”

দুর্নীতি রুখতে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা ‘স্থায়ীভাবে বন্ধ চাইছেন’ ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এরপর যেটা জোরালোভাবে সুপারিশ করতে চাই, কালো টাকা বৈধতা দেওয়ার বাৎসরিক রীতি আমাদের রাষ্ট্রীয় বা সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বাংলাদেশে, সেটির চিরতরে বন্ধ করতে হবে।”

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের নিয়ে তার ভাষ্য, “আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের সাধ্যমত যাতে মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন করে এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য। সে লক্ষ্যেই অন্যান্য কমিশনের মত যথাযথ গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রম শেষ করেই আমাদের প্রতিবেদন সম্পন্ন করেছি।”

নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর।

এরপর গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি কমিশনের মেয়াদ পরে বাড়ানো হয়। এর মধ্যে চার কমিশন বুধবার প্রতিবেদন দিলো।

এই কমিশনগুলো ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র র জন য সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

একটি দল ভোটের প্রয়োজনে আ.লীগের নাম মুখে নেয় না: সালাউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “দেশে এমন একটি রাজনৈতিক দল আছে, যারা ভোটের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের নামও মুখে নেয় না।”

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মসূচির ষষ্ঠ দিনের এ আয়োজনে অংশ নেন ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “একটি রক্তস্নাত পথ অতিক্রম করে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি। অতীতের বেদনাবিধুর সংগ্রাম ভুললে চলবে না; আওয়ামী লীগের কুকীর্তিও ভুলে গেলে চলবে না। অথচ, একটি দল তাদের ভোটের জন্য এসব কথা মুখেও নিতে চায় না।”

গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিলকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই গণতান্ত্রিক লক্ষ্যেই তফসিলকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সংলাপ, আলোচন ও সহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।”

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, “যারা পিআর ভোট কিংবা গণভোটের দাবি তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিল, তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষ শক্তি।”

বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাকেই সবচেয়ে বড় অর্জন মনে করে বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আহমেদ।

সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমেই বিজয় অর্জিত হয়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ বলে ‘নো পিআর নো ইলেকশন’; কেউ বলে, ‘আগে গণভোট’; আবার কেউ বলে, ২০২৯ সালে নির্বাচন হওয়া উচিত। এরা নাকি গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি! তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা। বিএনপির গণতন্ত্র হলো গণমানুষের গণতন্ত্র।

তিনি জানান, বিএনপি সব শ্রেণির মানুষের রাজনীতি করে। ধর্মীয় বিভাজন নয়, নাগরিক পরিচয়ই হবে সবার মূল পরিচয়—এ নীতিতেই দল বিশ্বাসী।

বেআইনি গ্রেপ্তারের ভয় থেকে মানুষ মুক্ত হবে, এ আশা ব্যক্ত করে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা ইমাম-মুয়াজ্জিন সম্মেলনেও বলেছি; এখনো বলছি, অন্যায়ের বিচার অবশ্যই হবে।”

ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের রাজনীতি হবে মেধা, যোগ্যতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।

উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসর উদ্দীন নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমানসহ অন্য নেতাকর্মীরা। 

বিকেলে একই মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

ঢাকা/মোহাম্মদ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ