ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দুদক শক্তিশালী করতে ৪৭ সুপারিশ
Published: 15th, January 2025 GMT
ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাবসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এসব সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কারের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নিয়ে এদিন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুদক ছাড়াও নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন পেশ করেছে।
দুদককে শক্তিশালী করতে আট সদস্যের কমিশনের তৈরি করা সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে সরকার প্রধানের কার্যালয়ে কথা বলছিলেন ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠান কোনো দেশেই এবং বাংলাদেশেও এককভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার উপরে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব নীতিনির্ধারণের কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত রাষ্ট্র এবং সামাজিক পরিবেশ লাগে। পুরো রাষ্ট্র এবং সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হয় এর অবকাঠামোতে।’’
“সেই বিবেচনায় আমরা আমাদের সংবিধানের ২০-এর ২ অনুচ্ছেদে যেটা আছে, সেটার সংশোধন করতে চাই। সেটা হচ্ছে, সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের একটা অঙ্গীকার।”
তার কথায়, “রাষ্ট্র এবং আইনি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা অর্জনে যে ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে, সেটা প্রতিরোধ করতে তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অঙ্গীকার লাগবে। যদিও এর সুযোগ আমাদের সংবিধানে আছে।”
দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কোনো জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী কৌশল নেই। কোনো নীতিমালা নেই। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করছি, কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক কাঠামোতে দুর্নীতি বিরোধী শুধু প্রত্যয়ই না, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে অঙ্গীকারগুলো দরকার, দায়িত্ব এবং কর্তব্য সেটি নির্ধারণ করা।’’
দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ন্যায়পালের গুরুত্ব তুলে ধরেন এই সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি বলেন, “ন্যায়পালের একটা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, যাদের দায়িত্ব হবে এই কৌশলের বাস্তবায়ন বা প্রতিফলনের মূল্যায়ন করা। ধারাবাহিকভাবে, নিয়মিতভাবে।”
দুর্নীতি রুখতে কালো টাকা সাদা করার বৈধতা ‘স্থায়ীভাবে বন্ধ চাইছেন’ ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “এরপর যেটা জোরালোভাবে সুপারিশ করতে চাই, কালো টাকা বৈধতা দেওয়ার বাৎসরিক রীতি আমাদের রাষ্ট্রীয় বা সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বাংলাদেশে, সেটির চিরতরে বন্ধ করতে হবে।”
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের নিয়ে তার ভাষ্য, “আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের সাধ্যমত যাতে মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন করে এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য। সে লক্ষ্যেই অন্যান্য কমিশনের মত যথাযথ গবেষণা এবং জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রম শেষ করেই আমাদের প্রতিবেদন সম্পন্ন করেছি।”
নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা হয় গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি কমিশনের মেয়াদ পরে বাড়ানো হয়। এর মধ্যে চার কমিশন বুধবার প্রতিবেদন দিলো।
এই কমিশনগুলো ওয়েবসাইট খুলে মতামত সংগ্রহ, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, মতবিনিময়, জরিপ ও লিখিতভাবে মতামত সংগ্রহ করেছে। সুপারিশমালা প্রস্তুতে এসব প্রস্তাব ও মতামত পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র র জন য সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
তাইওয়ান ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ ‘চূর্ণ’ করে দেওয়া হবে, হুঁশিয়া
তাইওয়ান ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে সতর্ক করেছে চীন। আজ বুধবার দেশটি সতর্ক করে বলেছে, তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের চেষ্টা হলে তারা তা ‘চূর্ণ’ করে দেবে। জাপান নিকটবর্তী একটি দ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর বেইজিং এমন মন্তব্য করেছে। খবর আলজাজিরার।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র পেং চিনগেন বলেন, “আমাদের রয়েছে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার দৃঢ় ইচ্ছা, শক্ত প্রতিজ্ঞা এবং যথেষ্ট সক্ষমতা।
আমরা সব ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ চূর্ণ করব।’
আরো পড়ুন:
চীন-জাপান উত্তেজনা: জাপানগামী প্রায় ৫ লাখ ফ্লাইট টিকিট বাতিল
চীনকে শান্ত করতে দূত পাঠাচ্ছে জাপান
নিকটবর্তী দ্বীপে জাপানের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পেং এই মন্তব্য করেন।
পেং বলেন, “চীনের তাইওয়ান অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় জাপানের আক্রমণাত্মক অস্ত্র মোতায়েন অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং সামরিক সংঘাত উসকে দিচ্ছে।”
বেইজিং তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এবং দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও বাদ দেয়নি। অন্যদিকে, তাইওয়ান সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণ।
চীন ও জাপানের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয় জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির একটি মন্তব্যকে ঘিরে। চলতি মাসের শুরুতে পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ চালায়, তাহলে তা জাপানের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি এবং জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।”
পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকে কিছুটা বিরোধ থাকলেও, জাপানের কর্মকর্তারা এতদিন প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করাটা এড়িয়ে চলতেন, কারণ এতে বেইজিং আরও ক্ষুব্ধ হতে পারে। তবে জাপানের নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে তাইওয়ানের পক্ষ নেওয়া দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে।
এর মধ্যে গত রবিবার (২৩ নভেম্বর) জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি ঘোষণা করেন, টোকিও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল থেকে ১১০ কিলোমিটার (৬৮ মাইল) দূরে অবস্থিত দেশটির পশ্চিমতম দ্বীপ ইয়োনাগুনিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে।
কোইজুমি বলেন, “ইয়োনাগুনিতে মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের ফলে জাপানের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে এই ইউনিটটি স্থাপন করা আসলে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাপানের পরিকল্পনাকে ‘আঞ্চলিক উত্তেজনা তৈরি এবং সামরিক সংঘাত উস্কে দেওয়ার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
কোইজুমি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন যে, টাইপ-থ্রি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক, যা জাপানে আক্রমণকারী বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে।
তিনি সংবাদিকদের বলেন, “এগুলো অন্য দেশগুলোতে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে নয়। তাই স্পষ্টতই আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে না।”
তাইওয়ান ইয়োনাগুনিতে জাপানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি তাইওয়ান প্রণালীতে নিরাপত্তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তাইওয়ানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া উ বলেন, “অবশ্যই, এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য সহায়ক। কারণ জাপানের তাইওয়ানের প্রতি কোনো আঞ্চলিক পরিকল্পনা বা শত্রুতা নেই।”
বুধবার (২৬ নভেম্বর) তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই চিং-তে জানান, চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে আত্মরক্ষার জন্য দ্বীপটি ৮ বছরের জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলারের সম্পূরক প্রতিরক্ষা বাজেট প্রবর্তন করবে।
ঢাকা/ফিরোজ