সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বউ বাজার শান্তিনগর এলাকায় একটি কুন প্রস্তুতকারি কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বোধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল আনুমানিক ৭টায় ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, নূর আলমের মালিকানাধীন কুন কারখানায় লাগা আগুন পরে পাশের চারটি গার্মেন্ট ওয়েস্টেজের গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে মন্ডলপাড়া ও হাজিগঞ্জ  ফায়ার সার্ভিসের ৬টি  ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু বলে জানানো হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

তবে শুরুর দিকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসে। এসময় দ্রুত পানি ফুড়িয়ে গেলে আগুন নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হয় বলে জানান স্থানিয়রা । পরে আগুনের তীব্রতা দেখে ফায়ার সার্ভিসকে পুনরায় জানানো হলে  আরো পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও  কাজ করছে। তারা বিভিন্নভাবে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করছে।

শরীফ হোসেন নামে এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, সকাল সাতটার দিকে নূর আলমের মালিকানাধীন একটি কুন কারাখানা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে সেটি পাশের গার্মেন্ট ওয়েস্টেজের চারটি গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে কারখানা ও গোডাউনগুলো সম্পুর্ন পুড়ে যায়।

তবে আগুন লাগার শুরুর দিকে কুন কারখানার কিছু মালামাল অক্ষত উদ্ধার করা হয় বলে জানান শরীফ। আলমগীর নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যাবসায়ি জানান, গোডাউনে গার্মেন্ট ওয়েস্টেজ এলডি পলিথিন ছিলো। আগুনে সব পুড়ে গেছে।

গোডাউনে তার পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিলো বলে দাবি করেন এই ব্যাবসায়ী। এছাড়াও মুসলিম, বাবুল, হাশেম নামে আরো তিন জন ব্যাবসয়ীর তিনটি ওয়েস্টেজ গোডাউন আগুনে সম্পুর্ন পুড়ে গেছে বলে জানা যায়। তবে তাদের সাথে কথা না হওয়ায় ক্ষতির পরিমানটি জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করতে গিয়ে স্থানীয় দুজন স্বেচ্ছাসেবী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে একজনের নাম জিহাদ। অপরজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আমরা সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাই। খবর পাওয়ার সাথে  সাথে  হাজীগঞ্জ ও মন্ডলপাড়া ফায়ার স্টেশন থেকে ছয়টি ইউনিট ঘটনস্থলে পাঠাই।

ঘটনাস্থলে এসে আমরা দেখেছি, রেজিন,প্যাকিংবক্স,কুনিং এবং ক্যামিকেলসহ বিভিন্ন উপাদান এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে ছিলো। সেই সাথে আগুনের ভয়াবহতা ছিলো অনেক। আমাদের ছয়টা ইউনিট দ্রুত আগুন নির্বাপনের চেষ্টা করেছি। শুরুতে পানির অনেক সংকট ছিলো।

পরে স্থানিয়দের সহায়তায় বিভিন্নভাবে পানির ব্যাবস্থা করি। সাড়ে নয়টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয়রা আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। যার ফলে আসেপাশে বাড়ি ও কিছু প্রতিষ্ঠানকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি।

কয়টি প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানানা, এখনো পর্যন্ত আমরা সেটি নিশ্চিত হতে পারিনি। সেই সাথে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টিও প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নিশ্চিত করতে পারেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটিও তদন্ত করে জানানো যাবে বলে জানান তিনি।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ইউন ট ঘটন খবর প

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।

জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’

২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’

তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ