বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি হলে শ্রীলঙ্কাকে খুঁজে পাওয়া যেত না
Published: 4th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের মতো নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা হলে শ্রীলঙ্কাকে খুঁজেই পাওয়া যেত না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর গণভবন দখলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনাতেই অনেকে খুঁজে পান শ্রীলঙ্কার স্মৃতি। কয়েক মাস ধরে চলা আন্দোলনের মুখে ২০২২ সালের ১২ জুলাই রাতে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও তাঁর পরিবার দেশ ছেড়ে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে চলে যান।
অর্থনীতির নিরিখে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার। তিনি বলেন, অনেকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে। শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশ এক নয়। এখন আমাদের ১২টা ব্যাংক ফাংশনালি এফেক্টিভ। ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে বাকি ব্যাংকগুলো চলছে খুঁড়িয়ে। বিশ্বের কোনো দেশে এরকম হয়েছে?
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এক-তৃতীয়াংশ ব্যাংক কাজ করে না। বাংলাদেশের তুলনায় অর্থনীতির দিক থেকে শ্রীলঙ্কায় স্বস্তিকর পরিস্থিতি ছিল। সেখানে এত চ্যালেঞ্জ ছিল না। যে সরকারই আসে, তাদের সাপোর্ট করা হতো। বাংলাদেশে তো অনেক চ্যালেঞ্জ। অনেকে আমাদের পছন্দ করে না, বলে– ‘চলে যান’। এর মধ্যেও সরকার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার যদি কাউন্টার পদক্ষেপগুলো না নিত, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিন্তু অকল্পনীয় অবস্থায় চলে যেত। সব ব্যাংক থেকে অর্থ চলে গেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন হয়েছে? আমানতকারীর টাকাসহ নিয়ে গেছে। এখন তো টাকাই নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া হচ্ছে। সরকার পরিকল্পনা করছে, কীভাবে বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারিসহ অন্যদের দেওয়া যায়।
ভ্যাট বাড়ার কারণে মানুষ চাপে পড়ছে, বিষয়টি অনুভব করলেও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এটা করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে যতটা না ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়াচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী বাজেটে ভ্যাটের বিষয়টি সংশোধন করা হবে।
এ ছাড়া চাল, মসুর ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে সরকার আমদানির ব্যবস্থা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, যেভাবে হোক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পণ্যের সরবরাহ সরকার কোনোভাবেই কমতে দেবে না। বৈঠকে সরকারিভাবে চাল, ডাল, সারসহ বেশ কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড স ল হউদ দ ন আহম দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ফেটে যাওয়া পাইপলাইন মেরামত হয়নি, গ্যাস সরবরাহ বন্ধে ভোগান্তি
দুই দিনেও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় পঞ্চবটী-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় ফেটে যাওয়া পাইপলাইন মেরামত করতে পারেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে জেলার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস না থাকায় আবাসিক গ্রাহকের ভোগান্তির পাশাপাশি শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
আরও পড়ুনউড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইনে ফাটল, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ২৩ নভেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে আজ সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে কথা হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমানের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, চারদিকে লোহার পাতের ভারী সুরক্ষাবেষ্টনী দিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ে ২৫ ফুট গভীরে প্রধান পাইপলাইন পাওয়া গেছে। পাইপলাইনের আশপাশের মাটি সরিয়ে অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত মেরামতকাজ শেষ করা হবে। দ্রুততম সময়ে গ্যাস সরবরাহ চালু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আবাসিক গ্রাহকদের রান্নার কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলোয় খাবারের জন্য ভিড় বাড়ছে। অনেকে মাটির চুলা, ইলেকট্রিক চুলা ও সিলিন্ডার চুলায় রান্না সারছেন। ডাইং কারখানাসহ গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলো অচল হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
পঞ্চবটী বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ডাইং কারখানা এমএস ডাইংয়ের উপমহাব্যবস্থাপক কবির হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গ্যাস না থাকায় গত দুই দিনে তাঁদের ডাইংয়ে ২০০ টন, ফিনিশিংয়ে ৪০০ টন, নিটিংয়ে ২০০ টন এবং প্রিন্টে ৪০ টন মাল উৎপাদন কমে গেছে। টার্গেট অনুযায়ী শিডিউল সম্পন্ন করতে না পারলে বায়ারদের নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য রপ্তানিতে সমস্যা হবে। কবির হোসেন বলেন, গ্যাসনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংকটে পড়েছে। কখন গ্যাস আসবে, তা এখনো কেউ জানাতে পারেনি।
গত শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শাসনগাঁও এলাকায় পাইলিংয়ের সময় ২২ ফুট গভীরে থাকা তিতাস গ্যাসের পাইপলাইনে আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে পাইপ ফেটে তীব্র শব্দে গ্যাস বের হতে থাকে।
দুর্ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে জেলার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ।
উড়ালসড়কের প্রকল্প পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ‘মাটি খুঁড়ে তিতাসের গ্যাসের পাইপলাইন পাওয়া গেছে। আমরা সবাই সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি ফেটে যাওয়া পাইলাইন দ্রুত মেরামতের কাজ সম্পন্ন করতে।’