‘তোমার আগে আর কেউ নেই, তোমার পরেও আর কেউ নেই/ যেখানেই যাই যেদিকে তাকাই, শুধু তুমি শুধু তুমি, আমি আশিক তুমি প্রিয়া’—নব্বই দশকের অন্যতম সুপারহিট সিনেমার গান। এটি আওকাত হোসাইন পরিচালিত ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার গান। এ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউড পেয়েছিল নতুন চিত্রনায়ক ফয়সালকে। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও ঢালিউড নায়ক হিসেবে এ সিনেমা দিয়েই অভিষেক হয় তাঁর। পরের বছর একই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি বড় পর্দায়। এখন কোথায় আছেন কেমন আছেন তিনি?

পর্দায় ফয়সাল নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর আসল নাম শামিম ইব্রাহিম। তবে শিশুশিল্পী হিসেবে মাস্টার শামিম নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি এখন পরিবার নিয়ে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। ২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান এ চিত্রনায়ক। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে সুখের সংসার তাঁর। চাকরি করছেন দেশটির একটি গ্যাস কোম্পানিতে। হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোর কথা হয় তাঁর সঙ্গে, ‘জানান তিন দশক পর এখনো মানুষজন তাঁর খোঁজ করেন। যা তাঁকে আপ্লুত করে।’
বাংলা চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক ফয়সালের সময়কাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪। এই ১৫ বছরে শিশুশিল্পী হিসেবেই পর্দায় বেশি দেখা গেছে তাঁকে। ১৯৭৯ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমায় কয়েক মিনিটের একটা চরিত্রে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘নান্টু ঘটক’, ‘তিনবাহাদুর’, ‘এতিম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘লালুগুলু’, ‘রেশমি চুড়ি’, ‘সাক্ষী’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘বড় মা’, ‘নসিব’ ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’, নান্টু ঘটক সিনেমায় ‘জন্ম, মৃত্যু আর বিয়া’ এবং ‘পাঙাশ মাছের পেটি’ গানে তাঁর অভিনয় শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার গল্প শোনা যাক ফয়সালের ভাষ্যে, ‘বাবা পাকিস্তান আমল থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যুক্ত ছিলেন। তাই মাত্র ৯ বছর বয়সেই শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পাই। এই মনে আছে, তখন তো কী করছি, অভিনয় কেন করছি এসব বুঝতাম না।’

আরও পড়ুনমমতাজ কোথায় আছেন, জানেন না কেউ০৪ মার্চ ২০২৫

কৈশোরে অভিনয় ছেড়ে সংগীতে মনোযোগী হন ফয়সাল। যদিও সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন শৈশবেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু একাডেমির হয়ে তবলা বাজাতে লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ পান । এরপর ড্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন অবসকিউর ব্যান্ডে। ব্যান্ডটিতে থাকা অবস্থায় মাইলসের হয়েও কয়েকটি শোতে বাজান তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে বাজান তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাজান নগরবাউলের সঙ্গে। সর্বশেষ দেশ ছাড়ার আগপর্যন্ত ড্রামস বাজান পেন্টাগনে। সংগীত নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই ১৯৯০ সালে ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ জয়ী মৌসুমীর বিপরীতে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন। এরপর ১৯৯৩ সালে নির্মাতা আওকাত হোসাইন তাঁকে প্রথমবার নায়ক হিসেবে ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমায় প্রস্তাব দেন, এ নির্মাতার ‘সাক্ষী’ সিনেমার শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপরের বছর এই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমা দিয়ে তাঁর ঢালিউড অধ্যায় শেষ হয়। এরপর ২০০৭ সালে একটি মুঠোফোন কোম্পানির পেসার হান্টের বিজ্ঞাপনে সর্বশেষ অভিনয়ে দেখা যায় ফয়সালকে।

আরও পড়ুন৬৫০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, কোথায় আছেন সেই অভিনেতা২৫ মার্চ ২০২৩

অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির পাশাপাশি সংগীতের সঙ্গে যুক্ত আছেন ফয়সাল। স্থানীয় একটি রক ব্যান্ডে ড্রামস বাজান তিনি। চলচ্চিত্রের তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইউটিউবের মাধ্যমে খোঁজ রাখেন তিনি। ‘তিন দশক হয়ে গেছে, কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। নাঈমের (চিত্রনায়ক) সঙ্গে আর কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ আছে। ২০২৩ সালে দেশে এসে এফডিসিতে গিয়ে সবাইকে খুব মিস করেছি। তবে তখন আমি কাউকে চিনি না, আমাকেও কেউ না (হাসি)।’ বললেন এক কালের এই ব্যস্ত অভিনেতা, সংগীতশিল্পী।  
বাংলাদেশি ব্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে পারফর্ম করলে পুরোনো সতীর্থদের সাক্ষাৎ মিস করেন না তিনি। সময় মিলে গেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা  করেন, বাজান। তাঁর ভাষ্যে, ‘দুই দিন আগে মাইলস ডালাসে পারফর্ম করে গেছে। খুব ইচ্ছে ছিল যাওয়ার, কিন্তু পরিবারের একটি দুঃসংবাদে আমার যাওয়া হয়নি। তবে দুই পুত্রকে পাঠিয়েছিলাম।’

শামিম ইব্রাহিম ওরফে ফয়সাল এখনো স্বপ্ন দেখেন অভিনয়ে ফেরার। তবে বাস্তবতাও বোঝেন। মনে করেন, এখন আর ফেরার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ, এই সময়ের নির্মাতাদের কেউ চেনেন না তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমি টাকার জন্য কখনো অভিনয় করিনি। এখনো ইচ্ছে হয়, যদি একটা ভালো চরিত্র পেয়ে অভিনয়ের সুযোগ পেতাম। কিন্তু এই সময়ের কেউ তো আমাকে চেনেন না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে তিন বছরের শিশুকে হত্যায় সৎ মায়ের যাবজ্জীবন

নড়াইলের লোহাগড়ায় তিন বছরের এক শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে সৎ মাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার আসামির উপস্থিতে এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ড পাওয়া জোবাইদা বেগম (২৫) উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের সজীব কাজীর স্ত্রী।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সজীব কাজীর সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রী রুপা বেগমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর সজীবের দুই সন্তান পাঁচ বছর বয়সী ছেলে ইয়াসিন কাজী ও তিন বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান রোজা দাদার (আবুল খায়ের) সঙ্গে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে সন্তানদের কথা চিন্তা করে সজীব কাজী দ্বিতীয় বিয়ে করেন জোবাইদা বেগমকে।

আরো পড়ুন:

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা, বাবাসহ ৩ জনের ফাঁসি

দাফনের আড়াই মাস পর কবর থেকে বৃদ্ধের মরদেহ উত্তোলন

২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে রোজাকে তার ভাই ইয়াসিন কাজী মারধর করলে সে কান্না শুরু করে। এরপর সৎ মা জোবাইদা বেগম তাকে ঘরের একটি কক্ষে নিয়ে যান। সে কান্না থামাচ্ছিল না দেখে জোবাইদা তার মুখ চেপে ধরেন, এতে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত রোজার দাদা আবুল খায়ের জোবাইদা বেগমকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বুধবার দুপুরে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।

নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান লিটু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা/শরিফুল/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হুমা কুরেশির ভাই খুন
  • ফ্রিজের বরফ দূর করার ৭টি সহজ উপায়
  • প্রথমে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ, এরপর অনুসরণ করে ডাকাতি
  • এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার
  • এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে ফিরবেন তামিম, থাকবেন মুশফিকুর-মাহমুদউল্লা
  • ‘তুমি কাজ করবে নাকি?’, একটা প্রশ্ন বদলে দিল জীবনের গল্প
  • কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?
  • জন্মের পর হাসপাতালে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, অতঃপর
  • নষ্ট করতে বলার পরও মোবাইল ফোন রেখে দিয়েছিলেন প্রেমিক, সেই ভুলে ফাঁস স্বামী খুনের রহস্য
  • নড়াইলে তিন বছরের শিশুকে হত্যায় সৎ মায়ের যাবজ্জীবন