‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার আশিক এখন কোথায়
Published: 4th, May 2025 GMT
‘তোমার আগে আর কেউ নেই, তোমার পরেও আর কেউ নেই/ যেখানেই যাই যেদিকে তাকাই, শুধু তুমি শুধু তুমি, আমি আশিক তুমি প্রিয়া’—নব্বই দশকের অন্যতম সুপারহিট সিনেমার গান। এটি আওকাত হোসাইন পরিচালিত ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমার গান। এ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউড পেয়েছিল নতুন চিত্রনায়ক ফয়সালকে। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করলেও ঢালিউড নায়ক হিসেবে এ সিনেমা দিয়েই অভিষেক হয় তাঁর। পরের বছর একই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি বড় পর্দায়। এখন কোথায় আছেন কেমন আছেন তিনি?
পর্দায় ফয়সাল নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর আসল নাম শামিম ইব্রাহিম। তবে শিশুশিল্পী হিসেবে মাস্টার শামিম নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি এখন পরিবার নিয়ে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। ২০১৪ সালে পরিবার নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান এ চিত্রনায়ক। তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে সুখের সংসার তাঁর। চাকরি করছেন দেশটির একটি গ্যাস কোম্পানিতে। হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোর কথা হয় তাঁর সঙ্গে, ‘জানান তিন দশক পর এখনো মানুষজন তাঁর খোঁজ করেন। যা তাঁকে আপ্লুত করে।’
বাংলা চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক ফয়সালের সময়কাল ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪। এই ১৫ বছরে শিশুশিল্পী হিসেবেই পর্দায় বেশি দেখা গেছে তাঁকে। ১৯৭৯ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমায় কয়েক মিনিটের একটা চরিত্রে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘নান্টু ঘটক’, ‘তিনবাহাদুর’, ‘এতিম’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘লালুগুলু’, ‘রেশমি চুড়ি’, ‘সাক্ষী’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘বড় মা’, ‘নসিব’ ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’, নান্টু ঘটক সিনেমায় ‘জন্ম, মৃত্যু আর বিয়া’ এবং ‘পাঙাশ মাছের পেটি’ গানে তাঁর অভিনয় শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল।
অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার গল্প শোনা যাক ফয়সালের ভাষ্যে, ‘বাবা পাকিস্তান আমল থেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় যুক্ত ছিলেন। তাই মাত্র ৯ বছর বয়সেই শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পাই। এই মনে আছে, তখন তো কী করছি, অভিনয় কেন করছি এসব বুঝতাম না।’
কৈশোরে অভিনয় ছেড়ে সংগীতে মনোযোগী হন ফয়সাল। যদিও সংগীতের তালিম নিয়েছিলেন শৈশবেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু একাডেমির হয়ে তবলা বাজাতে লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ পান । এরপর ড্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন অবসকিউর ব্যান্ডে। ব্যান্ডটিতে থাকা অবস্থায় মাইলসের হয়েও কয়েকটি শোতে বাজান তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে বাজান তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাজান নগরবাউলের সঙ্গে। সর্বশেষ দেশ ছাড়ার আগপর্যন্ত ড্রামস বাজান পেন্টাগনে। সংগীত নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই ১৯৯০ সালে ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ জয়ী মৌসুমীর বিপরীতে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন। এরপর ১৯৯৩ সালে নির্মাতা আওকাত হোসাইন তাঁকে প্রথমবার নায়ক হিসেবে ‘আশিক প্রিয়া’ সিনেমায় প্রস্তাব দেন, এ নির্মাতার ‘সাক্ষী’ সিনেমার শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপরের বছর এই পরিচালকের ‘জানের বাজি’ সিনেমা দিয়ে তাঁর ঢালিউড অধ্যায় শেষ হয়। এরপর ২০০৭ সালে একটি মুঠোফোন কোম্পানির পেসার হান্টের বিজ্ঞাপনে সর্বশেষ অভিনয়ে দেখা যায় ফয়সালকে।
আরও পড়ুন৬৫০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, কোথায় আছেন সেই অভিনেতা২৫ মার্চ ২০২৩অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির পাশাপাশি সংগীতের সঙ্গে যুক্ত আছেন ফয়সাল। স্থানীয় একটি রক ব্যান্ডে ড্রামস বাজান তিনি। চলচ্চিত্রের তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইউটিউবের মাধ্যমে খোঁজ রাখেন তিনি। ‘তিন দশক হয়ে গেছে, কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। নাঈমের (চিত্রনায়ক) সঙ্গে আর কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ আছে। ২০২৩ সালে দেশে এসে এফডিসিতে গিয়ে সবাইকে খুব মিস করেছি। তবে তখন আমি কাউকে চিনি না, আমাকেও কেউ না (হাসি)।’ বললেন এক কালের এই ব্যস্ত অভিনেতা, সংগীতশিল্পী।
বাংলাদেশি ব্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে পারফর্ম করলে পুরোনো সতীর্থদের সাক্ষাৎ মিস করেন না তিনি। সময় মিলে গেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন, বাজান। তাঁর ভাষ্যে, ‘দুই দিন আগে মাইলস ডালাসে পারফর্ম করে গেছে। খুব ইচ্ছে ছিল যাওয়ার, কিন্তু পরিবারের একটি দুঃসংবাদে আমার যাওয়া হয়নি। তবে দুই পুত্রকে পাঠিয়েছিলাম।’
শামিম ইব্রাহিম ওরফে ফয়সাল এখনো স্বপ্ন দেখেন অভিনয়ে ফেরার। তবে বাস্তবতাও বোঝেন। মনে করেন, এখন আর ফেরার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ, এই সময়ের নির্মাতাদের কেউ চেনেন না তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমি টাকার জন্য কখনো অভিনয় করিনি। এখনো ইচ্ছে হয়, যদি একটা ভালো চরিত্র পেয়ে অভিনয়ের সুযোগ পেতাম। কিন্তু এই সময়ের কেউ তো আমাকে চেনেন না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফয়স ল
এছাড়াও পড়ুন:
লোকসানে বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ বন্ধ
বগুড়ার ‘মধুবন সিনেপ্লেক্স’ লোকসানের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে সিনেপ্লেক্সটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিনেপ্লেক্সটির স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস রুবেল সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং বন্ধের কারণ জানান।
আরো পড়ুন:
কাজাখস্তানে আফরান নিশোর ‘দম’
আশির দশকের বাংলা সিনেমা ও সিনেমাকেন্দ্রিক সমাজ
রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘‘সিনেপ্লেক্স চালাতে গিয়ে সব মিলিয়ে মাসে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। কিন্তু সেটা তুলতে পারছি না দর্শকদের টানতে পারবে এমন সিনেমার অভাবে। 'তাণ্ডব’ সিনেমার পর আর কোনো ব্যবসা সফল সিনেমা আসেনি। অনেক ছবি মুক্তি পেলেও দর্শকের সাড়া মেলেনি। আমাদের দেশের সিনেমা ঈদ ছাড়া দর্শক টানতে পারছে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিদেশি সিনেমা চালাতে পারলে দর্শক আসত। প্রতিযোগিতায় আমাদের সিনেমাও ভালো চলত। কিন্তু বাইরের সিনেমা আমদানি একেবারে বন্ধ। তাই টানা লোকসান আর সম্ভব নয়। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা আমাদের মতো করে চালাতে দিতে হবে।’’
রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘‘সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আমরা আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমাদের কথা আপনারা শোনেন। আমাদের কথা যদি পছন্দ হয়, ভালো লাগে; তাহলে সেটা গ্রহণ করেন। আমাদের কথা যদি অগ্রহণযোগ্য হয়, আমাদের বলে দেন; এটা হবে না। তাহলে আমরা আমাদের হল একেবারে বন্ধ করে দেব। আর যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলে এটি আমরা আরো সুন্দরভাবে করব এবং আমরা কথা দেব, মধুবনের মতো আরো ২০০ সিনেপ্লেক্স আমরা বাংলাদেশে তৈরি করব।’’
‘মধুবন সিনেপ্লেক্সের’ স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘‘২০১৫ সালে শাকিব খানের ‘লাভ ম্যারেজ’ মুক্তির সময় ভাঙা চেয়ার, ছারপোকার কামড়, গরমের মধ্যেও হলভর্তি দর্শক হয়। এরপর ২০১৬ সালে ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শনের সময় শিক্ষিত শ্রেণির দর্শকের ঢল নামে। এমন পরিবেশেও দর্শকদের আগ্রহ দেখে সিনেপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময় দর্শকদের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়। এরপর ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০২১ সালে বগুড়ার প্রথম সিনেপ্লেক্স হিসেবে যাত্রা শুরু করে মধুবন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মধুবন সিনেপ্লেক্সের জন্য বেলজিয়াম থেকে ‘প্রজেকশন মেশিন’ আনা হয়। আমেরিকা থেকে ‘সাউন্ড সিস্টেম’ এবং মুম্বাই থেকে ‘গ্যালালাইট মেটাল কোডেড পর্দা’ আনা হয়। সেই সিনেপ্লেক্স আজ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।’’
ঢাকা/এনাম/বকুল