লাভেলোর শেয়ার অধিগ্রহণ ও ঋণ চুক্তি যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
Published: 4th, May 2025 GMT
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রক্ষিত জামানত এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিকে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
তদন্তের বিষয়টি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও নাভিদ হাসান খান।
আরো পড়ুন:
রেনাটার ৯ মাসে মুনাফা কমেছে ৩০ শতাংশ
বিবিএস কেবলসের ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রক্ষিত জামানত এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তদন্ত পরিচালনা করে দেখা প্রয়োজন।
তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিন জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বেশি কিছু শর্ত বা বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কীভাবে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিমের অতিরিক্ত ১ কোটি ১৫ লাখ সাধারণ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে এবং এক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব কীভাবে করা হয়েছিল সেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
এদিকে, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অতিরিক্ত শেয়ার অধিগ্রহণের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ২৪ এর আইন অনুসারে কোম্পানির সেই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে নিজেদের মধ্যে লেনদেনের কোনো তথ্য যথাযথভাবে প্রকাশ করেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত ব্যাংকের পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০ এর অধীনে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম এবং সংশ্লিষ্ট স্টক ব্রোকারেজ হাউস লাভেলো আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে, ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ।
এদিকে, সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৭ টাকা।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪০.০৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৩৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৮.৫৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। রবিবার (৪ মে) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৮৩.৪০ টাকায়।
ঢাকা/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ক ত র ব পর ত ব এসইস র তদন ত ক জ ম নত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ৬০ কোম্পানির পরিকল্পনা চেয়েছে বিএসইসি
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্তি ৬০টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন নূন্যতম নির্ধারিত সীমার নিচে রয়েছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে হলে কোম্পানিগুলোর কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তি বিধিমালার ওই শর্ত পরিপালন করছে না, যা সিকিউরিটিজ আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এমন পরিস্থিতিতে ৬০টি কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণে কি পরিকল্পনা রয়েছে তা জানতে চেয়েছে কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনা সংগ্রহের বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কোম্পানিগুলো হলো-সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, এপেক্স ফুটওয়্যার, ইস্টেম লুব্রিকেন্টস, এএমসি (প্রাণ), মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জুট স্পিনার্স, দেশ গার্মেন্টস, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সে, রেনউইক রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, এপেক্স স্পিনিং, উসমানিয়া গ্ল্যাস, নর্দন জুট, জিকিউ বলপেন, আনলিমা ইয়ার্ন, লিব্রা ইনফিউশনস, রহিম টেক্সটাইল, হাক্কানি পাল্প, ইউনিলিভার কনজুমার, অ্যামবি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, রহিমা ফুড, ফার্মা এইডস, সমাতা লেদার, ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ অটোকারস, বাংলাদেশ ল্যাম্পস, সামোরিতা হাসপাতাল, মুন্নু অ্যাগ্রো, সোনালী আঁশ, আল-হাজ্জ টেক্সটাইল, রেকিট বেনকিজার, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, ইস্টার্ন কেবলস, শ্যামপুর সুগার, ন্যাশনাল টি, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, আজিজ পাইপস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, জেমিনি সি ফুড, এপেক্স ফুডস, এইচ আর টেক্সটাইল, মেঘনা পেট, মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স, অ্যারামিট, বাটা সু, সাফিকো স্পিনিংস, জিল বাংলা সুগার, স্টাইল ক্রাফ্ট, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ফাইন ফুডস, কে অ্যান্ড কিউ, ওয়াটা কেমিক্যালস, দুলামিয়া কটন, লিন্ডে বাংলাদেশ, বঙ্গজ, এপেক্স ট্যানারি, প্রিমিয়ার ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ঢাকা ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের নাম পরিবর্তনে ডিএসইর সম্মতি
৬০ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চিত্র
বর্তমানে ১১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে, ১৫টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার নিচে, ২১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকার নিচে এবং বাকি ১৩টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত থাকতে ৬৪টি কোম্পানিকে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের মানদণ্ড মেনে চলতে একইভাবে চিঠি দিয়েছিল বিএসইসি। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি সেই নির্দেশ পরিপালন করেনি। এরই ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত বিএসইসি কোম্পানিগুলো বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নূন্যতম পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানিগুলোকে মূল বোর্ড থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্ম বা এটিবি প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে, কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতিটি কোম্পানিকে তাদের জমা দেওয়া রোডম্যাপের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হবে এবং কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাদের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। যদি কোনো কোম্পানি এসএমই প্ল্যাটফর্মের জন্য যোগ্য না হয়, তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করা হবে। এ তালিকায় কিছু বহুজাতিক কোম্পানি তালিকায় রয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভের কারণে এ শর্ত পরিপালন করা সহজ হবে।
বিএসইসি মনে করে, এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম থাকায় শেয়ারের লেনদেনে অস্বাভাবিকতা ও কারসাজির ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু বিনিয়োগকারী অস্বচ্ছ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শেয়ার কারসাজিতে লিপ্ত হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলছে। তাই বাজারে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন কিভাবে বাড়িয়ে ন্যুনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে কমিশন। এটি একটি তাগাদা। যদি কোনো কোম্পানি নতুন মূলধন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করা হবে।”
ঢাকা/এনটি/এসবি