আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ানো মানে একধাপ পেছনে যাওয়া
Published: 5th, May 2025 GMT
কয়েক সপ্তাহ ধরে জোরালো জল্পনা-কল্পনা। সেটা হলো, বাংলাদেশ কঠিন শর্তাবলির ভয়ে এবং সেগুলোর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিবেচনায় নিয়ে আইএমএফের বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচি থেকে সরে আসার কথা ভাবছে। কিন্তু আমার মত, এমন সিদ্ধান্ত ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন এবং শুধু তাই নয়, দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য তা ক্ষতিকর। শুধু ঋণের তাৎক্ষণিক খরচের দিকে না তাকিয়ে বরং এই কর্মসূচির কৌশলগত সুবিধাগুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত, করব্যবস্থা, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও বিনিময়হার নীতির মতো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত কাঠামোগত সংস্কারে চাপ তৈরি করার কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে আইএমএফের শর্ত।
এ কথা সত্য, ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির সাপেক্ষে খুব বড় অঙ্ক নয়, এই অর্থও আবার কয়েক ধাপে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই কর্মসূচিকে শুধু আর্থিক লেনদেন হিসেবে দেখা হলে আমরা বৃহত্তর চিত্রটা হারিয়ে ফেলব। আইএমএফের সঙ্গে যুক্ত থাকার মূল উদ্দেশ্য হলো, এর মধ্য দিয়ে নীতিগত শৃঙ্খলা আরোপ ও সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। এর বড় কারণ অভ্যন্তরীণ চাপ ও চাহিদার দুর্বলতা এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার প্রতিরোধ। এই প্রেক্ষাপটে অতীতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের চাপই অনেক সময় সংস্কারে গতি এনেছে। নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপের সঙ্গে ঋণ বিতরণ যুক্ত করে আইএমএফ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যেখানে সরকারগুলো অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ মোকাবিলা করে রাজনৈতিকভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সমস্যা হলো, সরকার যদি আইএমএফের শর্তাবলি ধারণ না করে এবং তারা যদি আইএমএফের সঙ্গে মিলে সংস্কার কর্মসূচি পরিকল্পনায় কার্যকরভাবে অংশ না নেয়, তাহলে এই শর্তগুলো অনেক সময় বাইরের চাপ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। তখন এই শর্তাবলির সেগুলোর প্রতি অভ্যন্তরীণ সমর্থন হারিয়ে যায়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির সফলতা ও ব্যর্থতা-উভয় উদাহরণই আমরা দেখতে পাই।
বাংলাদেশের জন্য এখন আইএমএফ কর্মসূচি থেকে সরে যাওয়ার অর্থ হবে, নীতিনির্ধারকদের চাপমুক্ত স্বস্তির জায়গায় ফিরে যাওয়া এবং যা কিছু কঠিন অথচ প্রয়োজনীয়, সেই সিদ্ধান্তগুলো আবার পেছানো; যে কাজটা অতীতেও বারবার হয়েছে। কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে যাওয়া আগের সরকারের সংরক্ষণমূলক নীতি প্রণয়নেরই পুনরাবৃত্তি, যারা স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা ধরে রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কার এড়িয়ে গেছে, যার পরিণতিতে পরবর্তীকালে আরও কঠিন সংকটে পড়তে হয়েছে।
আইএমএফের ঋণের কিস্তি বিলম্বিত হওয়ার কারণ ইচ্ছাকৃত চাপ নয়, বরং বাস্তব সমস্যা-রাজস্ব আয় কমে যাওয়া, বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না হওয়া, ভর্তুকি হ্রাসে গতি না আসা ও ব্যাংক খাত সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির অভাব। এসব নতুন কিছু নয়, বরং অনেক বছর ধরেই এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আমরা আর নিতে পারি না।
কর্মসূচি থেকে সরে আসার বদলে বাংলাদেশের উচিত হবে, আইএমএফের সঙ্গে আরও গভীর আলোচনায় যুক্ত হওয়া। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবসম্মত ও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্কারের পথরেখা নির্ধারণ করা। সে ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এগোনোর ও আলোচনার সুযোগ আছে। সক্রিয়ভাবে আইএমএফের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশ নিজের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংস্কার কর্মসূচিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পারে; নিশ্চিত করতে পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা।
সবশেষে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ানো অর্থ হলো, একধাপ পেছনে যাওয়া। এতে দেশের অর্থনৈতিক পরিচালনার সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সমস্যা শর্ত নয়, বরং সংস্কারের গতি থেমে যাওয়া; যে কারণে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের উচিত, এই কর্মসূচিতে অটল থাকা। শুধু অর্থের জন্য নয়, বরং উন্মুক্ত, স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে সংস্কারের পথে থাকা উচিত।
সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিষ খাইয়ে এসিড ঢেলে স্কুলছাত্র হত্যায় দুই আসামি গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় স্কুলছাত্র মোহাম্মদ হোসাইনকে বিষ খাইয়ে ও গোপনাঙ্গে এসিড ঢেলে হত্যার অভিযোগে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে চান্দিনায় মামার বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করে বুড়িচং থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের মো. সোলাইমানের ছেলে মো. আলাউদ্দিন ও মো. সাইমুন।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দুই মাস আগে বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের মইনুল হোসেনের মুদি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে গ্রেপ্তার সাইমুনের জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রাম্য সালিশে প্রমাণিত হলে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশ করেন শিকারপুর গ্রামের হোসাইনের বাবা আবু তাহের। এতে আবু তাহেরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে হোসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করে সাইমুন ও আলাউদ্দিন। গত ৩১ মে হোসাইনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে বিষপান করায় এবং গোপনাঙ্গে এসিড ঢেলে ঝলসে দেয় তারা। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত বুধবার তার মৃত্যু হয়।
হোসাইন শিকারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? তারা অনেক কষ্ট দিয়ে আমার ছেলেটাকে হত্যা করেছে। হাসপাতালের আইসিইউতে ছেলেকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেছি।’ তিনি তাঁর ছেলে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে হোসাইনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে সাইমুনের পরিবার। স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
বুড়িচং থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হক জানান, হোসাইন হত্যার ঘটনায় তার মা শাহিনা আক্তার বাদী হয়ে আলাউদ্দিন ও সাইমুনের নামে মামলা করেছেন। গত বুধবার রাতে চান্দিনা থেকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে।