বাগেরহাটের মোল্লাহাহাটে গাছ থেকে আম পাড়তে গিয়ে পড়ে রাকিবুল কাজী রাঙ্গা (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৫ মে) বিকেলে উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে প্রতিবেশীর গাছ থেকে আম পেড়ে দিতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে যায় রাঙ্গা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাঙ্গা মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের মহিদুল কাজীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশের মাহাবুব হোসেন ও তামান্না দম্পতির অনুরোধে তাদের গাছ থেকে আম পেড়ে দিতে গাছে উঠেছিল রাঙ্গা। এ সময় হঠাৎ পা ফসকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই রাঙ্গাকে কোদালিয়া বাজারে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে মোল্লাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
আত্মগোপনে থাকা সিরাজগঞ্জ জেলা আ.
রূপগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণ: দগ্ধ ২ নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বাগেরহাটে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাজুতে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’, ‘জাগ্রত জুলাইয়ের’ ছয় দফা ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’ এবং কিছু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশ করেছে ‘জাগ্রত জুলাই’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানায় সংগঠনটি। এর আগে ১ মে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতি’ স্থাপনের বিষয়ে সংগঠনটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। তারা বলেছে, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিচার দাবি করা হয়েছে।
তবে ৩ মে কিছু গণমাধ্যম এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে প্রচার করলে সংগঠনটি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
এ বিষয়ে সোমবার সমাবেশে ‘জাগ্রত জুলাই’–এর সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আশরাফ আল দীন বলেন, ‘এই প্রতিবাদ ছিল নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক ভাষ্য। একে বিকৃত করে নারীবিদ্বেষ হিসেবে উপস্থাপন করা সাংবাদিকতার নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচায়ক।’
সংগঠনের সহসভাপতি কবি আবিদ আজম বলেন, ‘শহীদদের তালিকা নিরূপণ ও আহতদের চিকিৎসায় ব্যর্থ এই সরকার শেখ হাসিনার বিচারও নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই আমরা প্রতীকী ফাঁসির কুশপুত্তলিকা রাজু ভাস্কর্যের নিচে ঝুলিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী, পিশাচ ও ডাইনি— সেই বিবেচনায় প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু একে নারীবিদ্বেষ বলে প্রচার করেছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন খবরের কাগজ।’
আবিদ আজম আরও বলেন, ‘জুলাইতে নারীদের ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামীপন্থী আমলারা এখনো সচিবালয়ে সক্রিয় রয়েছে। আমরা সম্প্রতি আমাদের সদস্য হাসনাতের ওপর হামলার নিন্দা জানাই এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচার দাবি করি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলি।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বোরহান) বলেন, ‘জাগ্রত জুলাই কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠন নয়। আমাদের ১ মের কর্মসূচি ছিল একনায়কতন্ত্রবিরোধী, হেফাজতের ৩ মের কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের কর্মসূচিকে বিকৃত করেছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাফেজ আকরাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের জঙ্গি, নারীবিরোধী বলে প্রচার করা হয়েছিল। অথচ শেখ হাসিনার একমাত্র পরিচয় সে একজন খুনি। আজ নারী নেত্রীদের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী কর্মীরা নারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন কবি জুনমুরাইন, কবি রফিক লিটন, সহসাধারণ সম্পাদক হাসনাইন ইকবাল, নাট্যকার হুসনে মোবারক, কবি তাজ ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজ সাইফুল্লাহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আল নাহিয়ান, কবি রহমান মাজিদ ও সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক কবি লোকমান হোসেন জীবন প্রমুখ।
সমাবেশে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে সংগঠনটি ছয় দফা দাবি ঘোষণা করে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারকারী গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; পিলখানা, শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু; ‘জুলাই বিপ্লব’–এর ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও বিপ্লবকালীন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি প্রদান; আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ; ফ্যাসিবাদের সহযোগী গণমাধ্যমকে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
সংগঠনটি জানায়, তারা তাদের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে।