যশোরে নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৬৭ নেতা-কর্মীর অব্যাহতি
Published: 5th, May 2025 GMT
যশোরে বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটি মামলা থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৬৭ নেতা-কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকেলে মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা এ আদেশ দেন।
মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াতের তৎকালীন আমির আবদুর রশিদ, জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির গোলাম রসুল, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম, গোলাম রেজা, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যুবদলের তৎকালীন সভাপতি এহসানুল হক, রিপন চৌধুরী, তৎকালীন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন, জামায়াত নেতা নূর ই আলী আল মামুন ও বিএনপি নেতা আবদুল সালাম আজাদ।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে সদর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই রফিকুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, জামায়াত-বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীরা শহরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (আরএন) সড়কে নাশকতার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছেন। তাৎক্ষণিক পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে শাকিল হোসেন ও সিরাজুল ইসলামকে আটক করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় দুটি পেট্রলবোমা, অবিস্ফোরিত ছয়টি ককটেল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ ও কয়েকটি লাঠি। এ ঘটনায় সদর পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন টিএসআই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জামায়াত-বিএনপির ৫১ নেতা-কর্মীকে আসামি করে নাশকতার পরিকল্পনা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এ মামলার তদন্ত শেষে এসআই সোয়েব উদ্দিন আহম্মেদ বিস্ফোরক ও নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকায় জামায়াত-বিএনপির ৬৭ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে আলাদা অভিযোগপত্র জমা দেন। পরবর্তী সময়ে মামলার বিস্ফোরকের অংশ জেলা ও দায়রা জজ এবং নাশকতার পরিকল্পার অংশ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার জুডিশিয়াল আদালতে বিচারাধীন এ মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। আসামিরা আইনজীবীর মাধ্যমে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, এই মামলার অব্যাহতি থেকে বোঝা যায়, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিচারব্যবস্থা কেমন ছিল। এখন বিচারব্যবস্থা স্বাধীন বলেই বিচারক মামলার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকায় মামলা থেকে সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বিগত সরকার এভাবে বিরোধীদলীয় নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। এই মামলা থেকে নেতা-কর্মীরা অব্যাহতি পাওয়ায় তাঁরা খুশি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তৎক ল ন ব এনপ র ন শকত র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।
পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।
গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় আজ জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।
এ মামলায় আজ কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে চঞ্চল কারাগারে। বাকি চারজন পলাতক।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।