শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কারে এডিবির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 6th, May 2025 GMT
অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সংকটপূর্ণ সময়ে শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এডিবির ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ইতালির মিলানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভায় ভাষণ প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু সহনশীলতা এবং আঞ্চলিক সংযোগের ওপর জোর দেন। আজ মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
মিলানে অনুষ্ঠিত এ সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে অর্থ উপদেষ্টা ড.
অর্থ উপদেষ্টা এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা ও অন্যান্য সম্মানিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকটপূর্ণ সময়ে শুধু অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদী সহনশীলতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এডিবির ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
উপদেষ্টা চারটি প্রধান খাতে এডিবির সঙ্গে উন্নততর সহযোগিতার আহ্বান জানান-
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি-অবকাঠামো, ই-গভর্ন্যান্স ও ডিজিটাল শিক্ষা সম্প্রসারণে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়; জলবায়ু কার্যক্রম- নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি এবং উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য বেশি পরিমাণে ছাড়যুক্ত অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে; আঞ্চলিক সংযোগ- দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য, শক্তি ও পরিষেবা ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়; টেকসই অর্থায়ন- ঋণ টেকসইতা বজায় রেখে উন্নয়ন চাহিদা পূরণের জন্য ছাড়যুক্ত তহবিল ও উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
তিনি আরও বলেন, আজকের সংকটকে আগামীর সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হলে আমাদের সাহসী চিন্তাধারা, গভীর অংশীদারিত্ব ও সম্মিলিত সংকল্পের প্রয়োজন। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া, আগামীর প্রস্তুতি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। গত পাঁচ দশকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে আনুমানিক ৩.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে, যা মূলত দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের মূল উন্নয়ন অগ্রাধিকারের প্রতি- যেমন জলবায়ু সহনশীলতা, মানবিক সহায়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি- সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কৌশল অনুসারে, এফসিডিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাণিজ্য, জলবায়ু অর্থায়ন, এসএমই উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রশাসন এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সবুজ বিনিয়োগ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, নদী পুণরুদ্ধার, বেসরকারি খাত, কারিগরি সহায়তা, পয়:নিষ্কশন ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা এবং যৌথ গবেষণায় সহায়াতার আহ্বান জানায়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের ৭০ কোটি ডলারের প্রকল্প চালু
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চালু হলো ‘ইনক্লুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)’ এবং ‘হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহ্যান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)’ প্রকল্প। ৭০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প দুটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
এ উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক। এতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশপাশে বসবাস করা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মৌলিক সেবা ও সুযোগ নিশ্চিতে পূর্বের অভিজ্ঞতা, বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সমাধান এবং লক্ষ্য নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অনেক প্রকল্পই দেশে চালু আছে। প্রতিবছর দুই–তিন শ কোটি ডলারের সহায়তার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে জটিল প্রকল্প ছিল। কিন্তু আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অর্থই হলো সব চ্যালেঞ্জ ইতিমধ্যে মোকাবিলা করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করা এবং উদ্দেশ্য অর্জন করা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।
১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ আট বছরের সংকটে রোহিঙ্গা জনগণ যেমন সহনশীলতা দেখিয়েছে, তেমনি স্থানীয় জনগণও অসাধারণ সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। তবে এই সংকট সেবা, অবকাঠামো এবং সামাজিক জীবনে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে বিশ্বব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে আছে।
স্বল্পমেয়াদি জরুরি সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বিশ্বব্যাংকের লক্ষ্য জানিয়ে জ্যঁ পেম বলেন, এই প্রচেষ্টায় সরকারের নেতৃত্ব, জাতিসংঘ সংস্থা, এনজিও এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অপরিহার্য। জাতীয় ও স্থানীয় কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা অনেক দিন ধরে এ দুটি প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কারণ, গত বছর থেকেই অর্থসংকট দেখা দিয়েছে। সামনে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান