রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালকের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
Published: 6th, May 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাছানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ করার পর একটি রেস্তোরাঁয় তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দাবি, এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাছান প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর (জাহেদুল) বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁরা তাঁর অপসারণের দাবি জানান।
তবে অভিযুক্ত জাহেদুল হাছান বলছেন, তিনি মাত্র চার মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। ২০ দিন পর অবসরে যাবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু অনৈতিক দাবি না মেনে নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেন। প্রায় ৩০ মিনিটের মানববন্ধনে জাহেদুল হাছানের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন পোস্টার–ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধন শেষে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করে জাহেদুল হাছানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনপিসিবিএলের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিম শাহরিয়ার। এ সময় অন্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী ব্যবস্থাপক হালিম সরকার, উপসহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন, টেকনিশিয়ান রমজান আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক জাহেদুল হাছান একজন অযোগ্য মানুষ। তিনি প্রতিষ্ঠানে চরম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিবাদে এনপিসিবিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৮ এপ্রিল থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের কর্মসূচি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাহেদুল হাছান বর্তমানে একাধিক পদ দখল করে রেখেছেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক, এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। এত পদে দায়িত্ব পালনের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তিনি জনবল নিয়োগে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
ফাহিম শাহরিয়ার আরও বলেন, প্রায় এক দশক আগে এনপিসিবিএল গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সার্ভিস রুল প্রকাশ হয়নি। কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন, পদোন্নতি নেই। বেতনবৈষম্য ও সুযোগ–সুবিধা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্পের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪০০ জন দক্ষ জনবলকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু জাহেদুল হাছান তাঁদের অদক্ষ ও অযোগ্য দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স চুক্তি করার হীন চক্রান্ত করেছেন। প্রতিবাদ করায় প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন। তাঁরা অবিলম্বে ওই কর্মকর্তাকে অপসারণ করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জাহেদুল হাছান বলেন, ‘মাত্র চার মাস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রমোশন, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্রেড বৃদ্ধি, সার্ভিস রুলসহ নানা দাবি তুলেছেন। এসব দাবির একটিও পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। সবই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কনস্ট্রাকশন প্ল্যান্টে কাজ করি। এখানে নতুন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা করা কঠিন। এরপরও সম্প্রতি ৪০০ জনের বসার ব্যবস্থা, নামাজের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও অভিযোগ। আগামী ২০ দিন পর অবসরে যাচ্ছি। ধারণা করছি, এসব অভিযোগ আমরা বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ প রকল প র কর মকর ত কর ছ ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন
গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনার বিচার ও সারাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছেন রাবিতে কর্মরত সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তুহিন হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে এবং সারাদেশে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
আরো পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
চটের বিছানা নিয়ে বাগবিতণ্ডা, যুবককে হত্যা
বিক্ষোভ সমাবেশে রাবি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাকিব বলেন, “সাম্প্রতিক যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, এ রকম নৃশংসভাবে সাংবাদিককে হত্যা সর্বশেষ কবে হয়েছে আমার মনে পড়ে না। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আমি বলতে চাই, আপনার কাছ থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা আমরা শুনতে চাই। আপনি এ সংবাদকর্মীদের অভিভাবক, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা আপনার কোনো প্রতিবাদ দেখিনি, এমনকি একটি ফেসবুক পোস্টও না। এভাবে একদম প্রকাশ্যে ও নৃশংসভাবে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যার পরো আপনার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আজ এখানে সমগ্র দেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি। অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং আমরা যারা সাংবাদিক আছি, আমাদের নিরাপত্তাও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি, তাই আমাদের নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।”
বিক্ষোভ সমাবেশে বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, “সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। জুলাই-পরবর্তী সময়েও যদি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। এখন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার কথা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার কথা। কিন্তু আজ দাঁড়িয়েছি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে। সাংবাদিকদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সাংবাদিকরা যেমন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কলম দিয়ে লিখতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে সেই কলমকে অস্ত্রে পরিণত করতে পারে। তাই আমরা সতর্ক করছি—এ ধরনের সাহস যেন আর কেউ না দেখাতে পারে, তার জন্য আমরা ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ বিচার চাই।”
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, “আপনারা গদিতে বসেছেন শুধু এসির হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা এ গদিতে বসেছেন। যদি সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে গদি ছেড়ে দিন। আপনাদের বাইরে বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন, যারা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
রাবি প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের জিসানের সঞ্চালনায় অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী