পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাছানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ করার পর একটি রেস্তোরাঁয় তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেন।

বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দাবি, এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল হাছান প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর (জাহেদুল) বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাঁরা তাঁর অপসারণের দাবি জানান।

তবে অভিযুক্ত জাহেদুল হাছান বলছেন, তিনি মাত্র চার মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। ২০ দিন পর অবসরে যাবেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু অনৈতিক দাবি না মেনে নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেন। প্রায় ৩০ মিনিটের মানববন্ধনে জাহেদুল হাছানের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন পোস্টার–ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধন শেষে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করে জাহেদুল হাছানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনপিসিবিএলের জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিম শাহরিয়ার। এ সময় অন্যদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী ব্যবস্থাপক হালিম সরকার, উপসহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন, টেকনিশিয়ান রমজান আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক জাহেদুল হাছান একজন অযোগ্য মানুষ। তিনি প্রতিষ্ঠানে চরম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিবাদে এনপিসিবিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৮ এপ্রিল থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের কর্মসূচি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাহেদুল হাছান বর্তমানে একাধিক পদ দখল করে রেখেছেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক, এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। এত পদে দায়িত্ব পালনের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তিনি জনবল নিয়োগে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

ফাহিম শাহরিয়ার আরও বলেন, প্রায় এক দশক আগে এনপিসিবিএল গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সার্ভিস রুল প্রকাশ হয়নি। কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন, পদোন্নতি নেই। বেতনবৈষম্য ও সুযোগ–সুবিধা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্পের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৪০০ জন দক্ষ জনবলকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু জাহেদুল হাছান তাঁদের অদক্ষ ও অযোগ্য দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স চুক্তি করার হীন চক্রান্ত করেছেন। প্রতিবাদ করায় প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন। তাঁরা অবিলম্বে ওই কর্মকর্তাকে অপসারণ করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।

জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জাহেদুল হাছান বলেন, ‘মাত্র চার মাস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রমোশন, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্রেড বৃদ্ধি, সার্ভিস রুলসহ নানা দাবি তুলেছেন। এসব দাবির একটিও পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। সবই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কনস্ট্রাকশন প্ল্যান্টে কাজ করি। এখানে নতুন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার ব্যবস্থা করা কঠিন। এরপরও সম্প্রতি ৪০০ জনের বসার ব্যবস্থা, নামাজের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও অভিযোগ। আগামী ২০ দিন পর অবসরে যাচ্ছি। ধারণা করছি, এসব অভিযোগ আমরা বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবস থ প রকল প র কর মকর ত কর ছ ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ‘অবশ্য পালনীয়’ ১২টি নির্দেশনা জারির এক দিন পর হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।

রোববার রাতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি রোধকল্পে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে আগে জারি করা নির্দেশনা অবশ্যই পালনের অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় কঠোরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো প্রথমে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় যায়। এরপর সেখান থেকে টেকেরঘাট এলাকায় গিয়ে বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা।

সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই দিন বিকেলে হাওরপাড়ে এক মতবিনিময় সভায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসাসহ পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের দাবি জানান এলাকাবাসী। তাঁরা বলেন, মূল হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের প্রবেশ বন্ধ করতে পারলে সমস্যা অনেক কমে আসবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে হাওরের জয়পুর এলাকায় হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।

এর আগে গত বুধবার বিপর্যয় থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচানোর দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয় হাওর অঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে। প্রথম আলোতে ১২ জুন ‘অস্তিত্ব সংকটে টাঙ্গুয়ার হাওর: শূন্য হচ্ছে প্রকৃতির ভান্ডার’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুনটাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা২১ জুন ২০২৫

জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা
হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানগুলোকে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার, স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ, প্লাস্টিক পণ্য বর্জন, দূর থেকে পাখি ও প্রাণীর পর্যক্ষেণ করা, ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিতরণ থাকতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, হাওরে উচ্চশব্দে গান-বাজনা করা বা শোনা যাবে না। হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক–জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য ফেলা যাবে না। মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না। পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ডিজারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। গাছকাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ করা যাবে না। মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না।

আরও পড়ুনবিপর্যয় থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন, ৬ দফা দাবি১৮ জুন ২০২৫

জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এ হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। এ হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

টাঙ্গুয়ার হাওর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, রূপে-গুণে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। তাই প্রতিবছর এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। তবে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনসহ নানা কারণে এখন হাওরে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে। এখন আগের মতো গাছ, মাছ ও পাখি নেই। জীববৈচিত্র্য রয়েছে হুমকির মুখে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকসু নির্বাচনের দাবি বিপ্লবী ছাত্রসমাজের
  • লাল পতাকা দেখিয়ে দুই দফা ট্রেন আটকালেন এলাকাবাসী, স্টেশন চালুর দাবি
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
  • হামলায় শিক্ষার্থীর পা কেটে ফেলার ঘটনায় বিক্ষোভ
  • ধর্ষকদের শাস্তি দাবিতে শাবিতে মানববন্ধন
  • মর্গ্যান স্কুলের ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে শাবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন