নেতাকর্মীর উচ্ছ্বাসে ভেসে ঢাকায় খালেদা জিয়া
Published: 7th, May 2025 GMT
চার মাস চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে ছিলেন দুই পুত্রবধূ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তাঁকে বহনকারী কাতার আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমান শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আনুষ্ঠানিকতা সেরে ১১টার কিছু পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে গুলশানের উদ্দেশে রওনা হয়। বিমানবন্দর থেকে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা পর্যন্ত পথে পথে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান লাখো নেতাকর্মী। সড়কের দুই ধারে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীর ভিড় ঠেলে আড়াই ঘণ্টা পর গুলশানের বাসায় পৌঁছায় এ গাড়িবহর। খালেদা জিয়ার এ যেন রাজসিক প্রত্যাবর্তন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালে কারাগারে যাওয়ার পর গত সাত বছরে কোনো জনসমাবেশে সশরীরে অংশ নেননি তিনি। এবার তাঁর দেশে ফেরা ঘিরে কার্যত বিশাল শোডাউন করল বিএনপি। এর মাধ্যমে উজ্জীবিত করা হলো নেতাকর্মীদেরও। যারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
গতকাল সকালে বিমানবন্দরে দলের চেয়ারপারসন ও জিয়া পরিবারের দুই পুত্রবধূকে স্বাগত জানাতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন। দেশনেত্রীর আগমন আমাদের জন্য শুধু আবেগ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ।
বাসায় ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, লন্ডনে চিকিৎসার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ আছেন খালেদা জিয়া। তবে ১৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রার কারণে তিনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিকভাবে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে। এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান এ নেতা।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডনের একটি ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৫ জানুয়ারি থেকে তিনি তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিশেষজ্ঞ দুই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। চার মাস পর গত সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার পর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া, জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শর্মিলা রহমানসহ অন্যদের পৌঁছে দেন তারেক রহমান। মাকে বিদায় জানানোর সময় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মী ও স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় খালেদা জিয়াকে। তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিমানে ওঠেন।
দলের চেয়ারপারসন ও জিয়া পরিবারের দুই পুত্রবধূকে স্বাগত জানাতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমানবন্দরে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও অন্য নেতারা।
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির নেতা ড.
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও এসেছেন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ ১৪ জন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গতকাল খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর পুত্রবধূ ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও দেশে ফিরেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মামলা ও হয়রানির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তাঁর এই ফেরা নিয়েও স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মী উচ্ছ্বসিত। দেশে ফিরে বাবার ধানমন্ডির বাসায় থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন জোবাইদা রহমান। তাঁকে বরণ করে নিতে ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে অবস্থিত তাঁর বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনও প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ফিরেছেন জিয়া পরিবারের ছোট পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’কে প্রস্তুত করা হয় খালেদা জিয়ার জন্য। সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফ ছাড়াও বাসার সামনের সড়কে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের কড়া নিরাপত্তায় দেখা গেছে।
খালেদা জিয়া সাধারণত গাড়ির সামনে না বসলেও এদিন তাঁকে সেখানে আসন নিতে দেখা গেছে। পেছনের আসনে বসেন তাঁর দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে হুইলচেয়ারে চলাচল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এদিন সবাইকে অনেকটা বিস্মিত করে দিয়ে গুলশানে নিজ বাসা ফিরোজায় ঢোকার পর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। দুই পাশে দুই পুত্রবধূ তাঁকে ধরে রাখেন।
ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তাঁর মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা সুলতান সলাহউদ্দিন টুকু, রাজীব আহসান, লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে।
খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য ও প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল থেকেই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর সড়ক থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত জড়ো হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউবা খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরেছিলেন। স্বাগত জানাতে আসা বেশির ভাগ নেতাকর্মীর হাতে জাতীয় পতাকা ও বিএনপিদলীয় পতাকা ছিল। বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনপি নেত্রীও গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এ সময় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পাশাপাশি তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নামে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কারও কারও ব্যানারে খালেদা-তারেকের পাশাপাশি জোবাইদার ছবি স্থান পেয়েছে।
ঢাকা মহানগর-উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যেভাবে নেতাকর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তা দলের প্রতি তাদের আস্থার প্রমাণ।
এদিন শুধু ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীই নন, ঢাকার আশপাশের অনেক জেলা থেকেও নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে আসেন। দূর-দূরান্তের জেলার নেতাকর্মীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। যার ফলে বিমানবন্দর সড়কে দলের নেতাকর্মীর ঢল নামে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের সড়কে যানজট দেখা দেয়।
তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন করতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি বনানী-গুলশানের সড়ক এড়িয়ে নেভি হেডকোয়ার্টারের সড়ক দিয়ে গুলশানে প্রবেশ করে। ওই সড়কেরও দুই ধারে নেতাকর্মী তাঁকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় ছিলেন।
সড়কে যানজট বা বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য বিএনপি এবং দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী কে কোথায় অবস্থান নিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন, তা আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় পৌঁছানোর পথে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলীয় নেতাকর্মীর ভিড় সামলাতে ট্রাফিক পুলিশও তৎপর ছিল। বিএনপি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, নেতাকর্মী যাতে সড়কে অবস্থান না করে ফুটপাতে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান। তবে এক পর্যায়ে নেতাকর্মী ফুটপাত ছেড়ে গাড়িবহরের সঙ্গে ছুটতে থাকেন। লাখো নেতাকর্মীর এই ভিড় আর ফুলেল শুভেচ্ছা সামলে খালেদা জিয়ার গাড়ি ধীরগতিতে গুলশানের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় নেতাকর্মীকে সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীর চাপ সামলাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে দেখা গেছে।
‘খুব শিগগির দেশে ফিরবেন তারেক রহমান’
খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছানোর পর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খুব শিগগির এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যাতে করে তিনিও দেশে ফিরে জাতির নেতৃত্বে যোগ দিতে পারেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কাতার সরকার শুধু আসা-যাওয়ার বিশেষ বিমানই (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) দেয়নি; বিমানের খরচ, ওষুধ এবং চিকিৎসাসেবার সবকিছুই নিশ্চিত করেছে। এই সহায়তার জন্য খালেদা জিয়া কাতার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. জাহিদ বলেন, আজ যিনি খালেদা জিয়াকে তাচ্ছিল্য করেছিলেন, তিনিই আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পক্ষান্তরে, খালেদা জিয়া আজও এখানেই আছেন, জাতির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
জোবাইদা রহমান কত দিন দেশে আছেন এবং তাঁর রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে এ নেতা বলেন, ১৭ বছর পর তিনি এসেছেন। এটা কেবল শুরু না। তারা দেশে আসবেন– এটাই স্বাভাবিক। তাঁর স্বামী-সন্তান এখনও বিদেশে। সময় বলে দেবে, তিনি কত দিন থাকবেন। তবে আবার সেখানে ফিরে গিয়ে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে গতকাল রাতে গুলশানের বাসভবন থেকে অসুস্থ মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে স্কয়ার হাসপাতালে দেখতে যান ডা. জোবাইদা রহমান। সেখান থেকে তিনি বাবার ধানমন্ডির বাসা মাহবুব ভবনে উঠেছেন। বাড়িটি সুসজ্জিত করার পাশাপাশি তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ফিরে দেখা
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুই মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেন বড় ছেলে তারেক রহমান। এখন পর্যন্ত তিনিই সেই দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তবে মুক্ত হলেও রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারাসহ নানা শর্তের বেড়াজালে থাকতে হয়েছে তাঁকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন। এর পর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত র ক রহম ন স ব গত জ ন ত দ ই প ত রবধ র ন ত কর ম ন ত কর ম র র সদস য এ পর ব র র ব এনপ র রহম ন র সরক র র ন ব এনপ র জন য র জন ত ও দল র কম ট র ধ নমন ইসল ম অবস থ র সড়ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের হামলা: ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা
বিমান থেকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।
বিবিসি লিখেছে, এর আগে বুধবার গভীর রাতে ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে মোট ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ছিল গত মাসে পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার জবাব।
হামলার পর ভারতের সামরিক বাহিনীর এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে বলা হয়, ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার কয়েক মুহূর্ত পরই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথ সেনাবাহিনী প্রসংশা করে এক্সে পোস্ট দেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের
পাকিস্তানে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে দিল্লি
পহেলগাম হামলার জন্য দিল্লি দায়ী করছে ইসলামাবাদকে; যদিও তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
গত কয়েক দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকার সাংবাদিকদের ভাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদ-সংলগ্ন এলাকায় ঘুরিয়ে দেখিয়েছে, যেগুলো পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী ভারতীয় হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
পাকিস্তান এই সফরের মাধ্যমে ভারতের দাবিকে খণ্ডন করতে চেয়েছিল, দেখাতে চেয়েছিল এগুলো জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির নয়।
এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার জানান, হামলায় ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে।
ভারত এখনো পাকিস্তানের এই দাবি সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
পাকিস্তান আরো দাবি করেছে, হামলার সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। অবশ্য, এই দাবির বিষয়ে ভারতও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ভারতের হামলার জবাবে শিগগির প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুমকি দিলেও পাকিস্তানের তরফে পাল্টা হামলার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এই অবস্থায় ভারতজুড়ে আজ মঙ্গলবার (৭ মে) বেসামরিক পর্যায়ে যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা মহড়া হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা/রাসেল