চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তি উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর উৎসবের সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।

আগামীকাল প্রথম দিনে সকাল সাড়ে আটটায় কেক কাটা ও আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবটি শুরু হবে। আয়োজনের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ আবদুল মতিন ভূইয়া। এরপর বেলা ১১টায় একটি কারিগরি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালায় বক্তা হিসেবে থাকবেন রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো.

রুকনুজ্জামান, ট্রান্সকম লিমিটেডের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহীম, ইলেকটিক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিঠু কুমার ভৌমিক ও বাংলাদেশ স্টিল রোলিং লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল ইসলাম। বেলা তিনটায় মেকাট্রনিকস এবং শিল্প প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে অন্তর্বিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা।

শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে লাইন অনুসরণকারী রোবট, রোবো ফুটবল এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে বাস্তব সমস্যা সমাধান প্রতিযোগিতা।

শনিবার শেষ দিনে রয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনী, ক্যাড সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকশা তৈরি ও দাবা প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।

আয়োজকেরা জানান, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০–এর অধিক প্রতিযোগী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

আরও পড়ুনচীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, মিলবে বই কেনারও অর্থ, আইইএলটিসে ৭ হলে আবেদন১১ ঘণ্টা আগে

মেকাট্রনিকস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রসঞ্জীত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযুক্তি ও রোবোটিকস শিক্ষায় তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি, তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতেই আমরা এ উৎসবের আয়োজন করছি। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭০০ এর অধিক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিল্পকারখানার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ আগ ম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 

শ্রীলঙ্কার মাঠে সেদিন দুপুরটা ছিল অস্বস্তিকর গরমের। এর সঙ্গে যোগ হলো ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দুই লঙ্কান ব্যাটারের তাণ্ডব। দুজনের ভাবভঙ্গিতে যেন ফুটে উঠল না–বলা কথা—‘আমরা থামব না।’ দ্রুত বাউন্ডারি আসছিল, রানের চাকা ঘুরছিল। হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের বোলাররা।

এরপর হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়। দেড় শ রানের অটল জুটি ভেঙে দিয়ে খেলার গল্প বদলে দেন যে ছেলেটি—তিনি নাঈম হাসান।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে নাঈম যেন মাঠে এক ‘ঘূর্ণিঝড়’ বইয়ে দেন। বাংলাদেশের দল হঠাৎ পায় নতুন প্রাণ, নতুন ছন্দ। সেই ম্যাচ ড্র হয়; কিন্তু নাঈমের বোলিংয়ের জাদু থেকে যায় গ্যালারির গুঞ্জনে, ভক্তদের আলোচনায়। এ বছরের জুনে শ্রীলঙ্কার গলে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নাঈম। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার বল করেন তিনি। দেন সবচেয়ে কম রান। 

চট্টগ্রামের আলো–বাতাস গায়ে মেখে বড় হওয়া ছেলে নাঈম। পাড়ার মাঠ থেকে উঠে এসে আপন আলোয় জ্বলে ওঠা অদম্য স্পিনার। স্পটলাইট থেকে দূরে দাঁড়িয়ে নিজের খেলাটাকে নিখুঁত করে তুলতে যাঁরা চেষ্টা করেন—নাঈম তাঁদের একজন। দলে থাকেন, পারফর্ম করেন, আবার নিঃশব্দে সরে যান। আলোচনার কেন্দ্রে তিনি থাকেন না, কিন্তু তাঁর বোলিংয়ের ঘূর্ণি মাঠের বাইরের সব আলো নিজের দিকে টেনে নেয়।

শুরুটা সেই গলির মাঠে

নাঈমের ক্রিকেটে হাতেখড়ি কৈশোরে। টেপ টেনিসের উচ্ছ্বাস, গলির ক্রিকেটের পাগলামি; যেখানেই ব্যাট-বল, সেখানেই ছুটে যাওয়া। খেলাপাগল ছেলেটির ব্যাটে জোর ছিল, বোলিংয়েও তেমন দাপুটে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট থেকে বলের দিকেই বেশি ঝুঁকে গেলেন তিনি।

পাহাড়-সাগর-হ্রদে ঘেরা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফরিদারপাড়া এলাকা। নাঈমের ছোটবেলার পথচলা শুরু হয়েছিল এই এলাকাতেই। তাঁদের বাড়িটি একসময় লোকের কাছে ‘মাহবুব কাউন্সিলরের’ বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের স্রোতে সেই নাম পাল্টে গেছে। এখন মানুষ চেনে ক্রিকেটার ‘নাঈম হাসানের বাড়ি’ হিসেবে।

জাতীয় দলের খেলা হলে ফরিদারপাড়ার মানুষ বসে যান টিভির সামনে। যখন নাঈম বল হাতে এগিয়ে আসেন, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস–উত্তেজনা বেড়ে যায়। দরজা-জানালার ফাঁক দিয়ে শুনতে পাওয়া যায় সম্মিলিত ফিসফাস—‘উইকেট চাই নাঈম, উইকেট চাই’।  নাঈমের ছোট সাফল্য-ব্যর্থতাতেও মানুষের অনুভূতির ছায়া লেগে থাকে এ এলাকায়।

সমুদ্রপাড়ে লেখা ইতিহাস

২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর। চট্টগ্রামের সমুদ্রঘেঁষা সাগরিকা স্টেডিয়ামের সকালটা যেন একটু উজ্জ্বল ছিল সেদিন। নাঈমের চোখে আলো, মনে উত্তেজনা। হয়তো তার চেয়েও বেশি ছিল একধরনের নীরবতা, যেটা বড় দিনে বড় খেলোয়াড়ের মনেই জন্ম নেয়। জাতীয় টেস্ট দলের জার্সিটি প্রথমবার তাঁর গায়ে ওঠে সেদিন। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ২৮৩ দিন। শুরুর দিনেই তিনি ইতিহাস লিখে ফেললেন। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড গড়েন চট্টগ্রামের এই সন্তান। মাঠে তখন উৎসব।

স্টেডিয়াম পেরিয়ে উৎসব শুরু হয় ফরিদারপাড়ার বাড়িতেও। নাঈমের মা মমতাজ বেগম পরে বলেছিলেন, ‘চোখে পানি এসে গিয়েছিল। গর্বে, আনন্দে, বিস্ময়ে।’ টিভিতে  তাঁর ছেলেকে বল করতে দেখে নীরবে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেটা জাতীয় দলে খেলছে।’

হঠাৎ এক তরুণ অফ স্পিনার এসে খেলার রংটাই পাল্টে দিলেন। তুলে নিলেন দিনেশ চান্ডিমালের উইকেট। ঘুরে গেল খেলার মোড়।

সাগরিকা স্টেডিয়াম সেই থেকে নাঈমের কাছে শুধু একটা মাঠ নয়, এটাই তাঁর আত্মবিশ্বাসের ঘর। এখানে পাঁচ উইকেটের পর অন্য ম্যাচে ৬ উইকেটও নিয়েছেন। এই মাঠেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন নিজের ছন্দ, নিজের সত্তা।

তবু আফসোস

নাঈমের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে একধরনের বৈপরীত্য চোখে পড়ে। সাত বছরে তিনি খেলেছেন মাত্র ১৪ টেস্ট। এর মধ্যে চারবার নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। ৬৯ ম্যাচে ২৭৬ উইকেট। ১৮ বার ৫ উইকেট ও ৩ বার নিয়েছেন ১০ উইকেট।

বিপিএলে নাঈমের নামের পাশে আছে ৩০ উইকেট। চিটাগং ভাইকিংস, কুমিল্লা ভিকটোরিয়ানস, ফরচুন বরিশাল, সিলেট থান্ডার্স—এসব দলে খেলে তিনি হয়ে উঠেছেন পরের প্রজন্মের অফস্পিনের প্রতিশ্রুতি।

প্রতিটি ম্যাচেই দেখা যায়—নাঈম নিজের খেলা নিয়ে কতটা মনোযোগী। তিনি নিজের স্পেল নিয়ে ভাবেন, চক্র ভেঙে কীভাবে ব্যাটসম্যানকে ভুল করানো যায়, তা নিয়েই থাকেন।

যে স্পিনার এতটা ধারাবাহিক, তাঁকে আরও বেশি সুযোগ না দেওয়ার আক্ষেপ থেকেই যায়। নাঈমের বাবা মাহবুবুল আলমের চোখের কোণে সেই আক্ষেপ জমে আছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাঈমকে নিয়ে আমাদের গর্ব আছে। কিন্তু সে সুযোগ পায় কম। আরও সুযোগ পেলে নামের পাশে উইকেটের সংখ্যা ভিন্ন হতো।’

নাঈম হাসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইবিতে অভয়ারণ্যের মেহেদি উৎসব
  • জানা গেল রাজামৌলির ছবির নাম, থাকছেন মহেশ বাবু-প্রিয়াঙ্কা
  • দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
  • নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্‌যাপন
  • মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা
  • এক ভাই গুগল, আরেক ভাই মেটায়
  • নবান্নের পিঠায় সুবাসিত রাবি
  • ঘূর্ণির জাদুতে বিশ্বজয় 
  • সফটওয়্যার কোম্পানির টাকায় যক্ষ্মা সম্মেলনে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারুণ্যের উৎসব রোববার