চুয়েটে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তি উৎসব
Published: 7th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তি উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর উৎসবের সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।
আগামীকাল প্রথম দিনে সকাল সাড়ে আটটায় কেক কাটা ও আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবটি শুরু হবে। আয়োজনের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ আবদুল মতিন ভূইয়া। এরপর বেলা ১১টায় একটি কারিগরি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মশালায় বক্তা হিসেবে থাকবেন রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো.
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে লাইন অনুসরণকারী রোবট, রোবো ফুটবল এবং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে বাস্তব সমস্যা সমাধান প্রতিযোগিতা।
শনিবার শেষ দিনে রয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনী, ক্যাড সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকশা তৈরি ও দাবা প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।
আয়োজকেরা জানান, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০০–এর অধিক প্রতিযোগী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।
আরও পড়ুনচীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, মিলবে বই কেনারও অর্থ, আইইএলটিসে ৭ হলে আবেদন১১ ঘণ্টা আগেমেকাট্রনিকস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রসঞ্জীত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রযুক্তি ও রোবোটিকস শিক্ষায় তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি, তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতেই আমরা এ উৎসবের আয়োজন করছি। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭০০ এর অধিক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিল্পকারখানার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমের নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জীবজগতের কল্যাণে জগদ্বন্ধু সুন্দর
এক যুগসন্ধিক্ষণে আজ থেকে ১৫৪ বছর আগে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন প্রেমের ঠাকুর প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর। ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন তথা ফরিদপুরবাসী প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের আবির্ভাব উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসব ৫ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ৯ দিনব্যাপী ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।
প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ১২৭৮ সালের ১৬ বৈশাখ (১৮৭১ সালের ২৮ এপ্রিল) পবিত্র সীতানবমী তিথিতে মুর্শিদাবাদ জেলার ডাহাপাড়া গ্রামে আবির্ভূত হন। তাঁর মাতা বামা দেবী, পিতা দীননাথ ন্যায়রত্ন। পিতা দীননাথ ন্যায়রত্ন মুর্শিদাবাদ থেকে প্রভুকে সঙ্গে করে ফরিদপুর শহরের সন্নিকটে ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্রাহ্মণকান্দার অদূরেই গোয়ালচামটে অবস্থিত প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের নিত্য লীলাভূমি শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গন। প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের স্থায়িত্বকাল মাত্র ৫০ বছর। বাংলা ১৩২৮ সনের আশ্বিন মাসের ১ তারিখে তিনি ফরিদপুর শ্রীধাম শ্রীঅঙ্গনে লীলা সংবরণ করেন।
প্রভু সুন্দরের দিব্য জীবনের দুটি দিক রয়েছে। একটি সামাজিক, অপরটি আধ্যাত্মিক। প্রভু সুন্দরের আবির্ভাবের আগে শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এ ধরাধামে আবির্ভূত হয়ে প্রেম ও ভালোবাসার বেদিমূলে মানুষকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর তিরোধানের প্রায় পৌনে তিনশ বছর পর এ দেশে ইংরেজ শাসন শুরু হয়। ফলে মানুষ জড়বাদ ও ভোগবাদিতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বাহ্যিক চাকচিক্য ও জৌলুস তার অন্তর্জগৎকে তমসাচ্ছন্ন করে তোলে। ব্রিটিশ শাসকদের অর্থানুকূল্যে ও নব্য শিক্ষিতদের উগ্র আধুনিকতায় মহাপ্রভুর প্রেম ও ভক্তি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। মানুষ ধর্ম আচরণ ভুলে যায়। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ও অশান্তি গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় ধর্মের এক অচলায়তন। ফলে গোটা হিন্দু সমাজে নেমে আসে এক মহাবিপর্যয়।
ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে হিন্দু নিম্নশ্রেণির বুনা, বাগদী, সাঁওতাল বসবাস করত। বুনা শ্রেণির অধিকাংশ লোকই ছিল অশিক্ষিত ও কুসংস্কারপূর্ণ। অসামাজিক কাজ ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আত্মকলহ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণে তাদের ব্যক্তিজীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দরের স্নেহের পরশে বুনা জাতির মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। বুনাদের সর্দার রজনী বাগদী প্রভুর কৃপালাভে নবজীবন লাভ করেন। প্রভু সুন্দর তাঁকে হরিদাস মোহন্ত নামে বিভূষিত করে হরিসংকীর্তনে প্রবৃত্ত করান। নিম্ন শ্রেণির বুনা জাতির এই অপূর্ব পরিবর্তনের সংবাদে তৎকালীন ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় বাংলা ১৩২২ সনের শ্রাবণ সংখ্যায় ‘জগদ্বন্ধু’ শীর্ষক প্রবন্ধে জগদ্বন্ধু সুন্দরকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর ছিলেন প্রচারবিমুখ। তিনি কোনো বক্তৃতা বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে তাঁর কোনো মহিমা প্রচার করেননি। অথচ ১৮৯১-৯২ খ্রিষ্টাব্দে ‘আবকারী’ নামে পত্রিকায় প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর বুনা জাতিকে ‘মনুষ্যত্ব’ পদবাচ্যে উন্নীত করেছেন মর্মে এক সংবাদ প্রচারিত হয়। ফলে সারা ভারতে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আজও বুনা জাতি মোহন্ত নামে পরিচিত।
এ যুগে সমাজের নিম্নস্তরের হীন-পতিতদের সেবায় নিবেদিত ছিলেন মহীয়সী নারী মাদার তেরেসা। প্রাচীনকালে অস্পৃশ্যতা বর্জন ও হরিজন আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন প্রাণপুরুষ মহাত্মা গান্ধী। প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর এর বহু আগে ফরিদপুরের বুনা-বাগদী, কলকাতার রামবাগানের ডোমপল্লির অসভ্য নর-নারী, সোনাগাছির বারবনিতাদের উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। বুনা-বাগদীদের ‘মোহন্ত’ ও ডোম পল্লিবাসীদের ‘ব্রজনন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
প্রভু সুন্দর কোনো জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিলেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমগ্র মানবগোষ্ঠী একটি জাতি। তার নাম নর জাতি। মানব জাতির ধর্ম মানবতা। আর মানবধর্মের মূল ভিত্তি মনুষ্যত্ব লাভ।
তাঁর শুভ আবির্ভাব উৎসবে আমাদের শপথ হোক– জাতি ও বর্ণভেদ ভুলে গিয়ে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রেখে আমরা সবাইকে মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তুলব।
সুবল চন্দ্র সাহা: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী