ব্র্যাক পরিচালিত ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩৪ টন উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিক যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যায়। এর একটি বড় অংশ নালা এবং খাল হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে।

সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ বর্জ্যগুলোকে আলাদা করেন এবং এখনো অনেকেই আনুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়ে গেছেন। 

এই সংকট মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামে একটি জাতীয় সংলাপ বুধবার (৭মে) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক, সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএসিইপি) এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস)-এর সহায়তায় পরিচালিত ব্র্যাকের ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের উদ্যোগে এেই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) অতিরিক্ত সচিব এ.

কে.এম. তারিকুল আলম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ এবং বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত সংলাপে অংশ নেন। 

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউডিপি) কর্মসূচি প্রধান ইমামুল আজম শাহী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. ইখতেখারুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) সেক্রেটারিয়েটের প্রধান সমন্বয়ক সংকলিতা সোমের সঞ্চালনায় পরিচালিত প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ধরিত্রী কুমার সরকার ও উপ-সচিব রুবিনা ফেরদৌসী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট (বর্জ্য ও রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা) কাজী সুমন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড ও মার্কেটিংয়ের কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধুরী এবং প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশরাত শবনম বক্তব্য রাখেন।

এ.কে.এম. তারিকুল আলম বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য যেন সমুদ্রে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য নদী ও খালভিত্তিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফল উদাহরণগুলো অনুসরণ করে নিজেদের উপযোগী সামাধান উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা সাফল্য পেতে পারি।

মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পাট ও আলুর স্টার্চের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি টেকসই বিকল্প পণ্যের প্রসারে কাজ চলছে। “প্লিজ প্রকল্পের” মতো উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বর্জ্য পৃথকীকরণে ১৫ শতাংশ সাফল্যা পেয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের হটস্পটগুলোতে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বুশরা নিশাত বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ (প্রায় ৯ কেজি) যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের তুলনায় অনেক কম হলেও, অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার ফলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বর্জ্যের উৎসে সেগুলোকে আলাদা করার প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, গৃহস্থালি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়িয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে ড. লিয়াকত আলী বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা সমাধানে অংশীজনদের সমন্বয় এবং ‘সার্কুলার ইকোনমির’ নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্তমান গতি ধরে রাখা গেলে দীর্ঘমেয়াদে ‘জিরো ওয়েস্ট’ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব, প্রয়োজনীয় লোকবল, বাজেট ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কক্সবাজারের মতো উপকূলীয় শহর যেখানে পর্যটন ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে, সেখানে বর্জ্য সংগ্রহ, এগুলোকে আলাদা করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে এই নীতিমালাকে কার্যকর কর্মপরিকল্পনায় রূপ দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। কক্সবাজারে “প্লিজ প্রকল্পের” আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে পরিচালিত কিছু পরীক্ষামূলক উদ্ভাবন এতে উপস্থাপন করা হয়। প্রোপ্যাড, ডেনিমরিভাইভ, রেপ্রো, ওয়ান্ডার গার্ডেন, ইকোকেয়ার, আর্ট ফর আর্টার এবং ইকোসুন্দর খুলনা-এর মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তারা পরিত্যক্ত নানা উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা জুতা ও পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি পণ্যের মতো নানা ধরণের পণ্য উপস্থাপন করেন। এ সময় অতিথিদের নান্দনিক নকশার ‘কমিউনিটি বিন’ সম্পর্কে জানানো হয় এবং প্রস্তাবিত প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। পৌরসভাগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎসাহিত করাই এই প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য।

প্লিজ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের গৃহস্থালি বর্জ্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের দূষণ উপকূলীয় এলাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীল সমুদ্রনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্লিজ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে বিভিন্ন সেক্টরের সমন্বয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা। প্রকল্পটি কক্সবাজার পৌরসভায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সেক্টরের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল জ প রকল প র পর চ ল ত বর জ য র ক র যকর লক ষ য পর ব শ প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গভীর রাতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোবানিয়া এলাকার প্রবাসী মীর হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ডাকাতদল দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে মীর হোসেনের পরিবারের তিন সদস্যকে জিম্মি করেছে। এরপর তাঁদের বেঁধে মুঠোফোন, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে। ঘরে থাকা এক শিশুর গলায়ও ছুরি ধরেছে ডাকাতদলের এক সদস্য।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মীর হোসেনের স্ত্রী মাসুদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন। গতকাল রাতে বাড়িতে তাঁর অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ছোট মেয়ে ও বড় মেয়ের কন্যাশিশু ছিল। ডাকাতদল হঠাৎ জোরে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢোকে। এরপর তাঁর ছেলে ও মেয়েকে হাত বেঁধে পাশের কক্ষে ফেলে রাখে।

মাসুদা আক্তার বলেন, ‘ডাকাত সদস্যরা আমার ছেলে ও ছোট নাতনির গলায় ছুরি ধরে হত্যার হুমকি দেয়। পরে তারা আমার কানের  দুল, গলার চেইন, মেয়ের কানের দুল, নগদ ৯ হাজার ৫০০ টাকা, তিনটি মুঠোফোন ও একটি হাতঘড়ি নিয়ে যায়। ঘরের ভেতর ছয়জন ডাকাত প্রবেশ করলেও বাইরে আরও কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাতেরা চলে গেলে আমরা একজন আরেকজনের হাতের বাঁধন খুলে পাশের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই।’

ডাকাতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদা আক্তারদের প্রতিবেশী মো. সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী মীর হোসেনের বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখি আলমারি খুলে কাপড়চোপড়সহ জিনিসপত্র সব এলোমেলো করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দরজা ভাঙার কাজে ব্যবহৃত শাবলও ফেলে গেছে ডাকাতেরা। পরিবারের সদস্যরা এখনো আতঙ্কে ভুগছে।’

জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে এখন পর্যন্ত ডাকাতির ঘটনা কেউ জানায়নি। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ