প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৌরসভা ও সাধারণ মানুষের সমন
Published: 7th, May 2025 GMT
ব্র্যাক পরিচালিত ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩৪ টন উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিক যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যায়। এর একটি বড় অংশ নালা এবং খাল হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে।
সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ বর্জ্যগুলোকে আলাদা করেন এবং এখনো অনেকেই আনুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার বাইরে রয়ে গেছেন।
এই সংকট মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামে একটি জাতীয় সংলাপ বুধবার (৭মে) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক, সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএসিইপি) এবং ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস)-এর সহায়তায় পরিচালিত ব্র্যাকের ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের উদ্যোগে এেই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) অতিরিক্ত সচিব এ.
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউডিপি) কর্মসূচি প্রধান ইমামুল আজম শাহী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মো. ইখতেখারুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স (বিএসএ) সেক্রেটারিয়েটের প্রধান সমন্বয়ক সংকলিতা সোমের সঞ্চালনায় পরিচালিত প্যানেল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ধরিত্রী কুমার সরকার ও উপ-সচিব রুবিনা ফেরদৌসী, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট (বর্জ্য ও রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা) কাজী সুমন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড ও মার্কেটিংয়ের কান্ট্রি হেড বিটপী দাশ চৌধুরী এবং প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশরাত শবনম বক্তব্য রাখেন।
এ.কে.এম. তারিকুল আলম বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য যেন সমুদ্রে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য নদী ও খালভিত্তিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফল উদাহরণগুলো অনুসরণ করে নিজেদের উপযোগী সামাধান উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা সাফল্য পেতে পারি।
মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, প্লাস্টিক দূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পাট ও আলুর স্টার্চের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি টেকসই বিকল্প পণ্যের প্রসারে কাজ চলছে। “প্লিজ প্রকল্পের” মতো উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বর্জ্য পৃথকীকরণে ১৫ শতাংশ সাফল্যা পেয়েছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের হটস্পটগুলোতে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বুশরা নিশাত বলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ (প্রায় ৯ কেজি) যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের তুলনায় অনেক কম হলেও, অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার ফলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বর্জ্যের উৎসে সেগুলোকে আলাদা করার প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, গৃহস্থালি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়িয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে ড. লিয়াকত আলী বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা সমাধানে অংশীজনদের সমন্বয় এবং ‘সার্কুলার ইকোনমির’ নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্তমান গতি ধরে রাখা গেলে দীর্ঘমেয়াদে ‘জিরো ওয়েস্ট’ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব, প্রয়োজনীয় লোকবল, বাজেট ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কক্সবাজারের মতো উপকূলীয় শহর যেখানে পর্যটন ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ রয়েছে, সেখানে বর্জ্য সংগ্রহ, এগুলোকে আলাদা করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে এই নীতিমালাকে কার্যকর কর্মপরিকল্পনায় রূপ দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। কক্সবাজারে “প্লিজ প্রকল্পের” আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে পরিচালিত কিছু পরীক্ষামূলক উদ্ভাবন এতে উপস্থাপন করা হয়। প্রোপ্যাড, ডেনিমরিভাইভ, রেপ্রো, ওয়ান্ডার গার্ডেন, ইকোকেয়ার, আর্ট ফর আর্টার এবং ইকোসুন্দর খুলনা-এর মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তারা পরিত্যক্ত নানা উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা জুতা ও পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি পণ্যের মতো নানা ধরণের পণ্য উপস্থাপন করেন। এ সময় অতিথিদের নান্দনিক নকশার ‘কমিউনিটি বিন’ সম্পর্কে জানানো হয় এবং প্রস্তাবিত প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। পৌরসভাগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎসাহিত করাই এই প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য।
প্লিজ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের গৃহস্থালি বর্জ্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের দূষণ উপকূলীয় এলাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীল সমুদ্রনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্লিজ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজারে বিভিন্ন সেক্টরের সমন্বয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা। প্রকল্পটি কক্সবাজার পৌরসভায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সেক্টরের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল জ প রকল প র পর চ ল ত বর জ য র ক র যকর লক ষ য পর ব শ প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।
২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।
এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।