রোহিত শর্মা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ভারতের টেস্ট অধিনায়কের পদ ফাঁকা। এই জায়গায় সহজ নাম হতে পারত সহ-অধিনায়ক জাসপ্রিত বুমরাহ। ভারপ্রাপ্ত  হিসেবে যখনই দায়িত্ব পেয়েছেন নিজের নেতৃত্বের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। তবে ওয়ার্কলোড বিবেচনায় ডানহাতি পেসারকে অধিনায়ক হিসেবে ভাবছে না ভারত। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে শুভমান গিল। 

বিসিসিআই সূত্র জানায়, আগামী জুনে ইংল্যান্ড সফরের আগেই নতুন অধিনায়কের নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে। ২০ জুন লিডসের হেডিংলিতে শুরু হতে যাওয়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজ দিয়েই শুরু হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। সেখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় গিলের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দিতে চায় নির্বাচকরা।

যদিও টেস্ট কিংবা ওয়ানডে ফরম্যাটে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নেই গিলের, তবে ২০২৪ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া আইপিএল দল গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার।

অন্যদিকে, অভিজ্ঞ পেসার জাসপ্রিত বুমরাহকে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনায় না রাখার পেছনে রয়েছে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি। সম্প্রতি পিঠের চোট থেকে ফেরা বুমরাহকে সিরিজের কিছু ম্যাচে বিশ্রাম দিতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছিলেন তিনি।

২৫ বছর বয়সী গিল ২০২০ সালে মেলবোর্নে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩২টি টেস্ট খেলেছেন। তার মোট সংগ্রহ ১৮৯৩ রান, গড় ৩৫.

০৫। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফ-সেঞ্চুরি। এই মাসের শেষদিকে ইংল্যান্ড সফরের জন্য দল ঘোষণা করবে জিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক প্যানেল। সব ঠিক থাকলে, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে শুভমান গিলের হাত ধরে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ভমন গ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী

জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।

একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।

এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ