পরিস্থিতি আরও জটিল করতে আগ্রহী নয় ভারত: ইরানকে জয়শঙ্কর
Published: 8th, May 2025 GMT
সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগছিকে ভারত জানাল, প্রত্যাঘাতের পর পরিস্থিতি আরও জটিল করতে নয়াদিল্লি আগ্রহী নয়। তবে পাকিস্তান সামরিক আক্রমণ করলে ভারত তার যোগ্য জবাব দেবে।
ভারত ও ইরানের ২০তম যৌথ কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে এক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্বাস আরাগছি। গতকাল বুধবার তিনি দিল্লি এসেছেন। বৃহস্পতিবার যৌথ কমিশনের বৈঠকে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে দেওয়া ভাষণে ভারতের এই মনোভাবের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
স্বাগত ভাষণে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এমন একটা সময়ে আপনারা ভারতে এসেছেন, যখন গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া এক ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত জবাব দিতে আমরা ব্যস্ত। জম্মু-কাশ্মীরের ওই হামলা আমাদের বাধ্য করেছে, সীমান্তপারের জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। আমরা লক্ষ্যবস্তু বেছে বেছেই প্রত্যাঘাত করেছি।’
জয়শঙ্কর বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠুক, তা আমরা চাই না। তবে আমাদের ওপর আঘাত এলে নিঃসন্দেহে আমরা তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিহত করব।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আপনারা আমাদের প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পরিস্থিতি সম্যকভাবে জানা আপনাদের জন্য জরুরি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট