আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি
Published: 8th, May 2025 GMT
ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ গণহত্যার কুশীলবদের ক্রমান্বয়ে দেশত্যাগে সহায়তার দায়ে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার এবং আগামী তিনদিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসর আবদুল হামিদকে দেশ থেকে নিরাপদে বাইরে যাওয়ার সুযোগ যারা দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বলতে হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে হামিদকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কে ফোন করেছিল? যদি বলতে না পারেন- এই দায় প্রধানত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার।”
আরো পড়ুন:
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
তিনি বলেন, “এখন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভদ্রতার সঙ্গে বলছি, এরপরে ভদ্রতাও থাকবে না। পরে আমরা বাথরুম পরিষ্কারের ঝাড়ু, স্যান্ডেল নিয়ে রাস্তায় নামব। যদি আমাদের জীবনই চলে যায়, শহীদদের পরিবারের ওপর আবারো গণহত্যা চালানো হয়, তবে ইন্টেরিম সুদ্ধ রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।”
ছাত্রজনতার দাবি না মানা, জুলাই গণহত্যার বিচারে অগ্রগতি না থাকাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ চেয়ে তিনি আরো বলেন, “এখনো চুপ্পুর অপসারণ করা যায়নি, সংবিধান বাতিল করা যায়নি, জুলাই ঘোষণাপত্র হয়নি, ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী নিষিদ্ধ করা যায়নি, গণহত্যার বিচার শুরু করা যায়নি। এসব দাবি নিয়ে সচিবালয়ের দিকে গেলে ছাত্র উপদেষ্টারা বলেন সরকার চাপে পড়ে। ডজন ডজন উপদেষ্টার মাঝে তোমরা মাত্র দুজন। তোমরা আমাদের থামাইতে আসো কেন?”
হাদি বলেন, “তোমরা চেয়ারে থেকে কাজ করতে পারো না। ছাত্র-জনতার একটা দাবিও বাস্তবায়ন করাতে পারিনি- এটা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করো। গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের আগে রাতের আধারে প্রোটোকোল নিয়ে লুকিয়ে পালাতে পারছে, তখন এই চেয়ারে বসে থাকার বৈধতা তোমাদের নেই।”
ছাত্র-জনতার কাতারে আসার আহ্বান জানিয়ে হাদি আরো বলেন, “জুলাইয়ের প্রতি আপনাদের দরদ যদি থেকে থাকে, তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে উপদেষ্টার চেয়ারে লাথি মেরে আমাদের কাতারে চলে আসেন।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনি ডজন খানেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এনেছেন, আমরা সাদুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু আগামী ৩৬ জুলাইয়ের আগে জুলাই গণহত্যার বিচারের জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ আনছেন না? এটা আমরা বুঝি। গণহত্যার বিচারের জন্য যা কিছু করা লাগে, আপনাকে সেটা করতে হবে। না হলে জনরোষ থেকে বাঁচা যাবে না। উন্নয়ন করে যদি কেউ টিকে থাকতে পারত, তবে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাত না।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ষ ট রপত গণঅভ য ত থ ন গণহত য র ব চ র আবদ ল হ ম দ র উপদ ষ ট উপদ ষ ট র পদত য গ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল–ওবেইদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনবন্ধু সুয়ারেজ ও ‘দেহরক্ষী’ দি পলে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির মায়ামি৫ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদ। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। ২০১০–১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারি ছেড়ে আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন সুলেইমান। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
আরও পড়ুনলা লিগায় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ১০ ফুটবলার৬ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন সুলেইমান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগে ২৪ ম্যাচে করেন ২ গোল। এর মধ্যে সুলেইমানের বিখ্যাত গোলটি ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে। ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ”‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে সুলেইমান আল–ওবেইদ ১০০–এর বেশি গোল করে ফিলিস্তিন ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট পরিবারে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন–সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসক, সংগঠক, রেফারি ও ক্লাবের বোর্ড সদস্য।’
তবে গত ২৩ জুলাই পিএএফের এক্সে করা পোস্টের বরাত দিয়ে ফুটবলপ্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গত ৬৬৯ দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৪০০–এর বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। সেই পোস্টে তখন জানানো হয়েছিল, সর্বশেষ ৬৫৬ দিনে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট ৮০০–এর বেশি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হামলায়।
গত ২৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি; তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি।