নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা বন্ধসহ ৭ দাবি সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির
Published: 8th, May 2025 GMT
নারীবিদ্বেষী সব ধরনের প্রচার–প্রচারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। নারীর সমতাবিরোধী, মর্যাদাহানিকর বক্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
অন্য দাবিগুলোর মধ্য রয়েছে, ‘মব’ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা এবং মব সহিংসতার অবসান ঘটনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা বাড়ানোসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অতি সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত, মানবাধিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষানীতি ও তার আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সামছুন নাহার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে নারী যখন সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে চলেছে, তখন নারীর মর্যাদা, অধিকার ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নারীকে অবদমিত করার জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের অপচেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নারী-পুরুষের সমতাবিরোধী গোষ্ঠী রাজনৈতিক সভা–সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন সভা–সমাবেশে, গণপরিসরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমাগত নারীবিদ্বেষী এবং নারীর প্রতি অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীবিরোধী গোষ্ঠীর প্রচার–প্রচারণা নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর অধিকার রক্ষার আন্দোলন কেবল নারীর একার নয়। নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থায় বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে ঐকবদ্ধভাবে এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।
নারীর অধিকার কোনো ব্যক্তি ইস্যু নয় মন্তব্য করে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আমি নারী হয়েও আরেকজন নারীর অধিকার, সম্মান হরণ করতে পারি। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো মানুষের প্রতি হিংসা–বিদ্বেষ তৈরি হওয়া সমাজের জন্য ক্ষতিকর।’
মহিলা পরিষদের সভাপতি অভিযোগ করেন, নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে আর পুরুষকে নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি গোটা দেশের জন্যই খারাপ। তিনি আরও বলেন, ধর্মের মতো পবিত্র বিষয় একান্তই ব্যক্তিগত চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম। ধর্মকে রাজনীতির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই কাম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাগস্বরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার বলেন, গণমাধ্যমে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে, যা নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। এ অবস্থা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। সংবিধান অনুযায়ী নারীদের সব সুযোগ–সুবিধা সমান হতে হবে। সিভিল ল অনুসারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশ পরিচালিত হতে হবে। বিশেষ কোনো ধর্মীয় আইনে দেশ পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনার সামনে রাজপথে জুলাই আহতরা
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র-জনতা। এই অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের আহতরা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে হাসপাতাল থেকে এসে যমুনার সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় জুলাই আহতরাও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে সবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
কারো হাতে ব্যান্ডেজ, কেউ স্টেচারে ভর করে এসেছেন, কেউবা হুইল চেয়ারে, আবার কারো চোখে কর্নিয়ায় সমস্যা। সকলেই যমুনার সামনে অবস্থান করছেন। রাত বারার সাথে সাথে আহতদের দেখা যায় রাস্তায় শুয়ে পড়তে।
আরো পড়ুন:
যমুনার চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান
যেসব স্লোগানে উত্তাল যমুনা
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্র-জনতা। এ অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শুক্রবার (৯মে) দিবাগত রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে এসেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
উল্লেখ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বে রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/সুকান্ত/ফিরোজ