নারীবিদ্বেষী সব ধরনের প্রচার–প্রচারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণসহ সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। নারীর সমতাবিরোধী, মর্যাদাহানিকর বক্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

অন্য দাবিগুলোর মধ্য রয়েছে, ‘মব’ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা এবং মব সহিংসতার অবসান ঘটনোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা; গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা বাড়ানোসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অতি সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত, মানবাধিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষানীতি ও তার আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সামছুন নাহার।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে নারী যখন সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে চলেছে, তখন নারীর মর্যাদা, অধিকার ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নারীকে অবদমিত করার জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের অপচেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নারী-পুরুষের সমতাবিরোধী গোষ্ঠী রাজনৈতিক সভা–সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন সভা–সমাবেশে, গণপরিসরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমাগত নারীবিদ্বেষী এবং নারীর প্রতি অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীবিরোধী গোষ্ঠীর প্রচার–প্রচারণা নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর অধিকার রক্ষার আন্দোলন কেবল নারীর একার নয়। নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থায় বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে ঐকবদ্ধভাবে এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।

নারীর অধিকার কোনো ব্যক্তি ইস্যু নয় মন্তব্য করে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আমি নারী হয়েও আরেকজন নারীর অধিকার, সম্মান হরণ করতে পারি। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো মানুষের প্রতি হিংসা–বিদ্বেষ তৈরি হওয়া সমাজের জন্য ক্ষতিকর।’

মহিলা পরিষদের সভাপতি অভিযোগ করেন, নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে আর পুরুষকে নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি গোটা দেশের জন্যই খারাপ। তিনি আরও বলেন, ধর্মের মতো পবিত্র বিষয় একান্তই ব্যক্তিগত চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম। ধর্মকে রাজনীতির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই কাম্য নয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাগস্বরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার বলেন, গণমাধ্যমে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে, যা নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। এ অবস্থা দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। সংবিধান অনুযায়ী নারীদের সব সুযোগ–সুবিধা সমান হতে হবে। সিভিল ল অনুসারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশ পরিচালিত হতে হবে। বিশেষ কোনো ধর্মীয় আইনে দেশ পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যৌথ বাহিনীর অভিযান সারা দেশে গ্রেপ্তার ১৯৪

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৯৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।

এই তথ্য তুলে ধরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটগুলো অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে।

আরো পড়ুন:

আবারো জেলেদের ধরে নিল আরাকান আর্মি

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১

এসব যৌথ অভিযানে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তসহ মোট ১৯৪ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করার তথ্য দিয়েছে আইএসপিআর।

বৃহস্প‌তিবার (৬ নভেম্বর) দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা অপরাধীদের কাছ থেকে ৯টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৭টি পিস্তল ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১৮টি ককটেল, ২৩টি পেট্রোল বোমা, দেশি-বিদেশি মাদকদ্রব্য, দেশি-বিদেশি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটবর্তী সেনা ক্যাম্পে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে
  • নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই: প্রেস সচিব
  • সরকার, রাজনৈতিক দল সবার জন্য সতর্কবার্তা
  • যৌথ বাহিনীর অভিযান সারা দেশে গ্রেপ্তার ১৯৪