কৃষকলীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব আশরাফ সিদ্দিকী বিটুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কৃষকলীগ নেত্রী ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম এবং শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব আশরাফ সিদ্দিকী বিটুকে রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
আরো পড়ুন:
এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে রিভলবারসহ যুবক গ্রেপ্তার
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিল দখল করে পুকুর খনন মৎস্য খামার তৈরির মচ্ছব
দখলদারদের খপ্পরে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নান্দাইল উপজেলার বলদা বিল। প্রভাবশালীরা বিলের খাস জায়গা দখল করে সেখানে বড় বড় মৎস্য খামার তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে বিল বলে আর কিছুই থাকবে না।
নান্দাইল উপজেলার উত্তরে সদর ইউনিয়নে বলদা বিলের অবস্থান। এ বিলের দক্ষিণে কাটলীপাড়া ও দাতারাটিয়া গ্রাম। উত্তরে দক্ষিণ রসুলপুর, উত্তর রসুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলী গ্রাম। পশ্চিমে দাতারাটিয়া ও দত্তগ্রাম, পূর্বে কাটলীপাড়া গ্রাম।
আগে বলদা বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। প্রতিবছর বিলে মাছ ধরার ‘হাইত’ উৎসব হতো। সময়ের বিবর্তনে পলি পড়ে বিলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এখন আর বিলে তেমন পানি থাকে না, মাছও পাওয়া যায় না খুব একটা। এ সুযোগে বিলের খাসজমি দখল করে মাছ চাষের পুকুর তৈরি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে মুক্ত জলাশয়ে মাছের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন আরও কমে যাবে। তা ছাড়া মাছ ধরা এবং বিক্রি করে সংসার চালানো পরিবারগুলো পেশা বদল করতে বাধ্য হবে।
স্থানীয়রা জানান, জলাশয়টি ভরাট হওয়ার পর থেকেই এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মাছ ধরে যারা সংসার চালাতেন তারা মাছ ধরতে না পেরে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। আবার পানির অভাবে চাষাবাদে ঠিকমতো সেচও দিতে পারছেন না কৃষক। এই পরিস্থিতি বিল দখল করে পুকুর খনন করলে আরও সংকট তৈরি হবে। দখল রোধে কর্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, চারপাশের গ্রামগুলো বিল থেকে অনেক দূরে। পার থেকে যতটুকু দেখা যায়, তাতে খাল বাদে কোথাও পানির অস্তিত্ব নেই। বিলের দুই দিকে দুটি ভেকু (খননযন্ত্র) মৎস্য খামারের জন্য মাটি খনন করতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বিলটির আয়তন প্রায় ২০০ একর। তাতে খাসজমির পরিমাণ হবে ৮০ থেকে ৯০ একর। আগে বেশি পানি থাকার কারণে বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। শুকনো মৌসুমেও এখানে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব হতো না। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, বিলটি ভরাট হয়ে গভীরতা হারাচ্ছে। ফলে কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমে বিলের জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে কেউ কেউ মাছ চাষের জন্য নিজেদের জমির পাশাপাশি বিলের খাসজমি দখল করে বড় বড় পুকুর খনন শুরু করেছেন। তাদের দাবি, প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন লোক এ ধরনের মৎস্য খামার তৈরির সঙ্গে জড়িত। এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে বিলটির অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খামার গড়ে তোলার কারণে বিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটিও বন্ধ হওয়ার পথে।
বিলে ঘাস কাটতে আসা কাটলীপাড়া গ্রামের সেকান্দর আলী জানান, অনেক দিন আগে থেকেই বিলে মৎস্য খামার তৈরি শুরু হয়েছে। সবাই নিজেদের জমিতে খামার তৈরি করছেন বলে প্রচার করলেও কেউ কেউ বিলের খাসজমিও দখল করে নিচ্ছেন। তবে জড়িতদের নাম-পরিচয় বলতে রাজি হননি তিনি। বিল পারে হাঁসের পাল নিয়ে আসা সুজন মিয়া বলেন, ‘বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সবাই পুকুর তৈরি করছে।’
দখলদারদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় ভূমি অফিসের সহায়তায় বিলের খাসজমি নিজেদের নামে লিখে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিলে মৎস্য খামার তৈরি করছেন কাটলীপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কনু মেম্বার। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আগে তাঁর বাপদাদার নামে বিলে থাকা ৬৩ কাঠা জমিতে একটি এবং পরে তাদের খরিদ করা ৭২ কাঠা জমিতে আরেকটি মৎস্য খামার দিয়েছেন তারা। বিলের ১ শতাংশ জমিও দখল করেননি বলে দাবি তাঁর। কারা দখল করছেন, তাও জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।
হাসনাত মাহমুদ তালহা জানান, তিনি তাদের পৈতৃক জমিতেই খামার করেছেন। বিলের কোনো জমি দখল করেননি। তবে এ-সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় না প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি।
নান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আজিজুল হকের ভাষ্য, এরশাদ সরকার আমলে কেউ কেউ বিলের
খাসজমি নিজেদের নামে কাগজপত্র করে দখল করেছেন বলে শুনেছেন তিনি। তবে এখন আর এমনটি হচ্ছে না।
নান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, আগে অনেকেই কাগজপত্র করে বিলের জমি দখলে নিয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর তিনি সরেজমিন দেখে মৎস্য খামার মালিকদের জমির মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসার জন্য বলেছেন। তারা এলে দলিলপত্র যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।