নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, দাফনের সময় নড়ে উঠলে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে জীবিত বলে জানান চিকিৎসক। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার নিয়ামতপুর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসক রুহুল আমিন অন্তঃসত্ত্বার সিজার করেন। নবজাতকের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের গোপাল চক এলাকার পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগমের (২৮) রক্তক্ষরণ হলে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হন।

ক্লিনিকের মালিক নাজমার গর্ভের সন্তান মারা গেছে জানিয়ে তাদের দ্রুত সিজারের পরামর্শ দেন। অন্যথায় প্রসূতিকে বাঁচানো যাবে না বলে তাড়াহুড়ো শুরু করেন। মেয়েকে বাঁচানোর জন্য সিজারের অনুমতি দেন বাবা-মা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রুহুল আমিন বিকেল ৫টার দিকে তাঁকে অস্ত্রোপচার টেবিলে নেন।

সিজার শেষে রুহুল আমিন নবজাতককে মৃত বলে একটি কার্টনে ভরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে নবজাতকের আত্মীয়স্বজনের কাছে দেওয়ায় জন্য বলেন। ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন। ভুলে প্যাকিং বক্সে অস্ত্রোপচারের কাঁচিও রেখে দেন।

বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যরা দাফনের প্রস্তুতির সময় নবজাতক নড়ে ওঠে বলে তারা জানান। তাদের ভাষ্য, দ্রুত তাকে নিয়ে উপজেলা সদরে এসে থানায় জানালে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেয় পুলিশ। সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক কায়সার রহমান শিশুটি জীবিত রয়েছে বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক ডা.

কায়সার রহমান বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে যখন শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়, তখন তাকে পরীক্ষা করে জীবিত অবস্থায় পাই। তবে সে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা ওজন কম হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছি। কারণ পাঁচ-ছয় মাস বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না। শিশুটির ওজন ছিল ৮০০ গ্রাম।’
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের তাড়াহুড়োর কারণে দ্রুত সিজার করা হয়েছে বলে অভিযোগ মা নাজমা বেগমের। 
তিনি বলেন, ‘সন্তান মারা গেছে বলে আমাদের কাছে তুলে দেয়। দাফনের জন্য নিয়ে গেলে নড়ে ওঠে। আমরা খুব অসহায়, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী পারমিতার দাবি, অন্তঃসত্ত্বা নারীর পরিবারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সিজার করা হয়েছে। নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে দাবি তাদের। আর চিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, ‘সিজারের পর নবজাতক নড়াচড়া না করায় আমরা মৃত ধরে নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে বলে আমি চলে আসি।’

এ ধরনের রোগীর সিজার ক্লিনিকে করা ঠিক হয়নি বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফয়সাল নাহিদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য নবজাতকের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওগ র হ ল আম ন পর ব র র চ ক ৎসক র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি করে এমন কেউ যেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য হতে পারবে না

বিএনপি করে এমন কেউ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য হতে পারবে না— এমন তো কোনো আইন নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নবগঠিত কমিটির দিকে তাকালে এমনটিই মনে হয়। মনে হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু বিএনপি করে, এমন কেউ এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মো. নঈম জাহাঙ্গীরকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৪ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে এ কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে কিছু বিতর্কিত মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে দেশের অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিচার ও বৈষম্য করে যাচ্ছে, যেভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংগঠনকে কুক্ষিগত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আখড়া বানিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে নিঃশেষ করেছে অভিযোগ করে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বলেন, এই সংগঠনের মূল কাজ হলো মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি, তাঁদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মর্যাদা রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ। পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের চিহ্নিতকরণও এর একটি অন্যতম কাজ।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমিটির অধিকাংশই আওয়ামী দোসর বলে দাবি করেন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। তিনি বলেন, এসব সদস্য গত সাড়ে ১৫ বছরে একবারও ফ্যাসিস্টদের ন্যক্কারজনক অন্যায়ের প্রতিবাদ করেননি। আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাইলে বর্তমান কমিটির অনেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতেন বলেও অভিযোগ করেন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ