পাকিস্তানের জন্য আইএমএফের ঋণ সহায়তা আটকাতে ব্যর্থ হলো ভারত
Published: 10th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) বাধা দেওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের জন্য ঋণ অনুমোদন ঠেকাতে পারেনি ভারত। শুক্রবার আইএমএফ পাকিস্তানের জন্য দুটি প্রধান অর্থায়ন ব্যবস্থা অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে ডন অনলাইন।
পাকিস্তানের জন্য আইএমএফের এই দুটি অর্থায়ন ব্যবস্থা হচ্ছে-চলমান বর্ধিত তহবিল সুবিধার অধীনে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান এবং জলবায়ু সম্পর্কিত উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করার লক্ষ্যে একটি নতুন স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব সুবিধা (আরএসএফ)।
এই অনুমোদনের ফলে পাকিস্তানের জন্য মোট ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের তহবিল উন্মুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আরএসএফ প্রোগ্রামের অধীনে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্চ মাসে আইএমএফ এই নতুন জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থার বিষয়ে পাকিস্তানের সাথে একটি কর্মী-স্তরের চুক্তিতে পৌঁছায়। পাশাপাশি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুমোদিত ৩৭ মাসের ৭ বিলিয়ন ডলারের ইএফএফ প্রোগ্রামের প্রথম পর্যালোচনাও করা হয়েছিল।
শুক্রবারের আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় ভারত ভোটদানে বিরত ছিল। সিদ্ধান্তের আগে, ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছিলেন। তারা অভিযোগ করেছিলেন যে, বৈশ্বিক তহবিলের অপব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক অর্থায়নের জন্য পাকিস্তানের যোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আইএমএফ-এ তার প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাকিস্তানের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
বোর্ড আলোচনার পরে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাইজেল ক্লার্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সত্ত্বেও পাকিস্তান সমষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ক স ত ন র জন য অন ম দ তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে: আইএমএফের বিবৃতি
অর্থনীতিতে এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো হলো দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
আইএমএফ বলেছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
আইএমএফ আজ সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব কথা বলা হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করেছে। এই দলের নেতৃত্ব দেন ক্রিস পাপাজর্জিও। সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিনিধিদলটি।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সমস্যা মোকাবিলায় সাহসী নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা যায়। ঝুঁকিও এখনো প্রবল। বিশেষ করে যদি নীতি প্রণয়নে বিলম্ব হয় কিংবা অপর্যাপ্ত নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকবে।
আইএমএফ মনে করে, মধ্য মেয়াদে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, যুব বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে বাড়াবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। তবে দুর্বল কর রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের মূলধন ঘাটতির কারণে এখনো আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। কারণ, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে উৎপাদনে বিঘ্ন হয়। অন্যদিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। যাতে সহজ, ন্যায্য ও কার্যকর রাজস্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধান করা যায়। এসব নীতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
ব্যাংক খাত সংস্কার জরুরি
ব্যাংক খাত নিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে মূলধন ঘাটতি, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, আইনি কাঠামোয় পুনর্গঠন এবং অর্থের উৎস নির্ধারণ করা থাকবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ মান পর্যালোচনা প্রয়োজন। ব্যাংক পরিচালনা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আইএমএফের সহায়তা কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা আলোচনা ভবিষ্যতেও চলবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য টেকসই সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়াসে আইএমএফ অংশীদার হিসেবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আইএমএফের দলটি সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রমুখ।