যুবলীগ নেতার হয়ে জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ, বিএনপির তিন নেতাকে ধাওয়া
Published: 11th, May 2025 GMT
বরিশাল নগরীতে জমি দখল করতে গিয়ে জনতার প্রতিরোধের মুখে মহানগর বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের (স্থগিত) পালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা আত্মগোপনে থাকা যুবলীগ নেতার পক্ষে জমি দখল করতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহানগর কলেজ এলাকায় এ ঘটনা হয়। ভুক্তভোগী জমি মালিকের ছেলে মেহেদি হাসান বিএনপির তিনজন ও যুবলীগ নেতার নাম উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন খান ও মাহফুজুর রহমান খান এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের পদ স্থগিত থাকা আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু। অন্যজন হলেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন।
তবে বিএনপির তিনজনই সমকালের কাছে দাবি করেছেন, তারা ঘটনাস্থলে যাননি। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।
মেঘনার বালুমহাল ইজারা বাগাতে এক সেনা সদস্যকে আবাসিক হোটেলে আটকে মারধরের ঘটনায় গত ২৮ মার্চ মঞ্জুর আহ্বায়ক পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল।
মহানগর কলেজ সংলগ্ন হরিপাশার বিলে ১ একর ৪৮ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে খান মামুনের পরিবারের সঙ্গে সংলগ্ন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডেফুলিয়ার বাসিন্দা শওকত হোসেনের মামলা চলছে। খান মামুনের কাছ থেকে বায়নাসূত্রে মালিক দাবি করে এই জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের প্রধান আস্থাভাজন খান মামুন ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন।
শওকত হোসেনের ভাষ্য, খান মামুনের পিতা মরহুম এনামুল হকের সঙ্গে জমি নিয়ে মামলা শুরু হয়। আদালত তাঁর পক্ষে রায় দিলেও খান মামুন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলে রাখেন। ৫ আগস্টের পর তারা জমি দখলমুক্ত করেছেন। কয়েকদিন ধরে মঞ্জুর নেতৃত্বে এই জমি দখলের পাঁয়তারা চলছিল। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অর্ধশতাধিক লোক জড়ো করে বিএনপি নেতারা বালু ফেলা শুরু করেন। তখন আশপাশের লোক সংগঠিত হয়ে ধাওয়া দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি আশিক হাওলাদার বলেন, শওকতের ছেলেও ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত। মামলার জমি দখল নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। শুক্রবার রাতে মহানগর বিএনপির নেতা জসিম উদ্দিন, মাহফুজ ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মঞ্জুর নেতৃত্বে বালু ফেলা শুরু হলে কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া করে।
তবে জসিম উদ্দিনের দাবি, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। শুনেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা বালু ফেলেছেন।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজ দাবি করেন, ওই জমি স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুদের বলে তিনি শুনেছেন। তাঁকে (মাহফুজ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে। একই বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের মঞ্জুও।
এ বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুককে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি।
জেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, জমি দখলচেষ্টায় ভুক্তভোগী পরিবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। দলের কাছে অভিযোগ দিলে হাইকমান্ডে জানানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব এনপ য বল গ ব এনপ র র ব এনপ র জন ত য বল গ
এছাড়াও পড়ুন:
মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাসের সন্তানকে বিক্রি, পরে দাদা-দাদির কাছে দিল পুলিশ
মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাস বয়সী নিজের শিশুপুত্রকে প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক বাবা। গতকাল সোমবার দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরপালং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদা-দাদির জিম্মায় দেয়।
শিশুটির বাবার নাম ইব্রাহীম হাওলাদার। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা শওকত হাওলাদারের ছেলে। পরিবার নিয়ে শহরের চরপালং এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ইব্রাহীম মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এতে পরিবারে দেনা হয়। সেই দেনা পরিশোধে তিনি ছেলেকে প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তারের কাছে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করেন। এরপর পালং মডেল থানার পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় ইব্রাহীম ও তাঁর স্ত্রী শ্রাবণীকে। শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার ও দাদি ঝর্ণা বেগম থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে ইব্রাহীম ও শ্রাবণীকে ছাড়িয়ে নেন।
এ বিষয়ে ইব্রাহীম হাওলাদার বলেন, ‘আমি মাদক সেবন ও বিক্রি করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওই ঋণ পরিশোধের টাকা পরিবারের কাছে চেয়েছিলাম। টাকা না পেয়ে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তাঁর সম্মতি পেয়ে ৩১ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিই।’
শিশুটির দাদা শওকত হাওলাদার বলেন, ‘একজন বাবার সন্তান মাদকসেবী হলে ওই বাবার দুঃখকষ্টের শেষ থাকে না। ওর যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। সে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার নাতিকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর প্রতিবেশীদের কাছে শুনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে নাতিকে উদ্ধার করেছি।’
শিশুটিকে নেওয়া প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন বলেন, তাঁর তিন কন্যাসন্তান। স্ত্রী ছেলেসন্তানের জন্য আকুতি জানাতেন। ইব্রাহীম দম্পতি তাঁদের ছেলেকে লালন-পালনের জন্য ইকবাল হোসেনের কাছে দিতে রাজি হলে তাঁরা কিছু টাকা দিয়ে শিশুটিকে নেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দেন বলে জানান।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শিশুকে তার বাবা-মা বিক্রি করে দিয়েছে—জরুরি সেবা ৯৯৯-এ এমন অভিযোগ পাই। এরপর সন্ধ্যায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে আসি। পরে তাঁদের অভিভাবকেরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। শিশুর বাবা মাদকাসক্ত। তাই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে পরিবার জানিয়েছে। কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা করা হয়নি।’