এপ্রিলে সড়কে ৫৯৩ দুর্ঘটনা, প্রাণ গেছে ৫৮৮ জনের
Published: 11th, May 2025 GMT
এপ্রিল মাসে সারা দেশে সড়কে ৫৯৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় ৫৮৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ১২৪ জন। এ হিসাব অনুযায়ী এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ১৯ দশমিক ৬ জন।
রোববার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো এপ্রিল মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে নারী ৮৬ (১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ) এবং শিশু ৭৮ (১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ)। এছাড়া ২১৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৪ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৩টি (৩৫ দশমিক ৯১ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৩৪টি (৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৬টি (১২ দশমিক ৮১ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬১টি (১০ দশমিক ২৮ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৯টি (১ দশমিক ৫১ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭৩টি দুর্ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করছে, পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা সব সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। তাই, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে পরিবহন শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা এবং সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় দ র ঘটন র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার নবাবদের ‘দরিয়া-ই-নূর’ কি সোনালী ব্যাংকের ভল্টে আছে
১১৭ বছর ধরে অন্ধকার কুঠুরিতে পড়ে আছে ঢাকার নবাব পরিবারের ১০৯ ধরনের রত্ন। ব্রিটিশ ভারতে যার মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৩৫ টাকা। ভূমি সংস্কার বোর্ডের করা তালিকা বলছে, এসব রত্নের মধ্যে সবচেয়ে দামি বস্তুটি হলো ২৬ ক্যারেটের টেবিল কাটের একটি হিরা। ইতিহাস যাকে দরিয়া-ই-নূর নামে চেনে। ভারতের মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব এবং যুক্তরাজ্য ঘুরে শেষমেশ ঢাকার নবাব পরিবারের মাধ্যমে বাংলায় আসে এই হিরা।
তবে ১৯০৮ সালের পর থেকে ‘কোহিনূর হিরার আত্মীয়’ হিসেবে খ্যাত দরিয়া-ই-নূর হিরার ইতিহাস এক রহস্যের জালে বন্দী। টেবিল কাটের এই হিরার বৈশিষ্ট্য হলো এর ওপরের দিকটি টেবিলের মতো সমতল ও অষ্টভুজাকৃতির।
সরকারি নথি অনুযায়ী, দরিয়া-ই-নূরের বর্তমান অবস্থান হওয়ার কথা সোনালী ব্যাংকের ভল্ট। তবে বাস্তবে এর অস্তিত্ব নিয়ে আছে ঘোর অনিশ্চয়তা। ভল্টে হিরা আছে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। হিরা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকারের ভূমি সংস্কার বোর্ডও।
পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের গেজেট এবং সম্পাদিত ইনডেঞ্চারের শর্তে ১৯০৮ সাল থেকে ঢাকার নবাব এস্টেট বোর্ড অব রেভিনিউয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর সরকারি তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় চলে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বোর্ড অব রেভিনিউ বিলুপ্ত হয়। পরে ১৯৮৯ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভূমি সংস্কার বোর্ড গঠিত হয়। তখন থেকে ঢাকার নবাব এস্টেটের দেখভালের দায়িত্ব ভূমি সংস্কার বোর্ডের কাছে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরিয়া-ই-নূরের মতো এমন হিরা বিশ্বে দুর্লভ। এর মূল্য কেবল অর্থে নয়, আছে ঐতিহাসিক মূল্যও। দরিয়া-ই-নূরের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে চায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ব্যাংকের ভল্ট থেকে হিরার প্যাকেট বের করে তা যাচাইয়ের জন্য রত্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
রাজদরবার থেকে কাল কুঠুরিতে
২০১২ সালে ভারতের ‘দ্য ট্রিবিউন’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক শ্যাম ভাটিয়ার লেখা এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কোহিনূর হিরার মতোই, দরিয়া-ই-নূরও অন্ধ্র প্রদেশের গোলকুন্ডা খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। দরিয়া-ই-নূর অর্থ আলোর নদী।
ডিজিটাল আরকাইভ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অন রেকর্ডের তথ্য বলছে, দরিয়া-ই-নূর হিরা দীপ্তি ও স্বচ্ছতায় অতুলনীয়। এটি মিনা করা সোনার ওপর বসানো প্রথম শ্রেণির বিশুদ্ধ একটি টেবিল কাটের হিরা। এর চারপাশে ১০টি মুক্তাও বসানো আছে। এই তথ্যের সত্যতা মেলে ১৮৫১ সালের ৩১ মে ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’–এ প্রকাশিত দরিয়া-ই-নূরের একটি ছবি থেকে।
ঢাকার নবাব পরিবার নিয়ে গবেষণা করেছেন আহসান মঞ্জিলের সাবেক কিউরেটর মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ২৬ ক্যারেটের হিরাটি দীর্ঘদিন মারাঠা রাজাদের কাছে ছিল। পরে হায়দরাবাদের নবাব সিরাজুল মুলকের পূর্বপুরুষেরা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় হিরাটি কিনে নেন। এরপর পারস্যের সম্রাটদের হাতে এই হিরা চলে যায়। সেখান থেকে পাঞ্জাবের রাজা রণজিৎ সিং হিরাটি দখল করে নেন। ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশরা পাঞ্জাব দখল করলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালীন পাঞ্জাবের রাজা দিলীপ সিংয়ের কোষাগার থেকে কোহিনূর ও দরিয়া-ই-নূরসহ অনেক মূল্যবান জিনিস দখল করে নেয়।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘দখল’ করে নেওয়ার পর দিলীপ সিংয়ের কোষাগারে থাকা রত্নালংকারের বিবরণ পাওয়া যায় ভারতের ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত ওই নিবন্ধ থেকে। নিবন্ধে বলা হয়, ১৮৪০ সালের কিছু নথি বিশ্লেষণ তাঁরা দেখেছেন। এই তালিকা করেন জন লগিন। লগিন রণজিৎ সিংয়ের ছেলে ও উত্তরাধিকারী মহারাজা দিলীপ সিংয়ের অভিভাবক ছিলেন।
জন লগিনের ওই তালিকার শীর্ষে ছিল বিখ্যাত হিরা কোহিনূর। তালিকায় নাম ছিল দরিয়া-ই-নূরেরও। লগিন সে সময় দরিয়া-ই-নূরের মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন ৬৩ হাজার রুপি। হিরাটিকে লন্ডনে নিয়েও যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু ব্রিটিশ রাজপরিবার এতে আগ্রহ না দেখালে দুই বছর পর তা ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
১৮৫১ সালের ১৭ মে ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ’–এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, ১৮৫০ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার সম্মানে আয়োজিত হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত মহা প্রদর্শনীতে কোহিনূরের সঙ্গে দরিয়া-ই-নূরসহ উল্লেখযোগ্য গয়না প্রদর্শনের জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল। পরে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার হ্যামিল্টন অ্যান্ড কোম্পানি ১৮৫২ সালের নভেম্বরে হিরাটির নিলাম করে। সে সময় ঢাকার জমিদার নবাব খাজা আলীমুল্লাহ ৭৫ হাজার টাকায় দরিয়া-ই-নূর কিনে নেন। এরপর থেকে ঢাকার নবাব পরিবারের কাছে ছিল দরিয়া-ই-নূর।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র বলছে, ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহ আর্থিক সংকটে পড়লে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কাছ থেকে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেন। বার্ষিক শতকরা ৩ টাকা সুদে ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। সম্পাদিত বন্ধকি চুক্তি অনুসারে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে হীরকখণ্ড দরিয়া-ই-নূর এবং আরও রত্ন ঋণদাতার কাছে বন্ধক থাকে। সে সময় এই হিরার মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ রুপি। নবারের ঋণ নেওয়া সেই ১৪ লাখ রুপির সুদাসল এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
নিয়ম অনুযায়ী দরিয়া-ই-নূরসহ নবাব পরিবারের ব্যবহৃত ১০৯ ধরনের বন্ধকি রত্ন দেশভাগের আগে ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। সেই থেকে মূলত অন্ধকার কুঠুরিতেই পড়ে আছে বাংলার হিরা দরিয়া-ই-নূর।
দরিয়া-ই-নূর আছে নাকি নেই
নথিপত্রে সোনালী ব্যাংকের ভল্টে নবাব পরিবারের ১০৯ ধরনের রত্ন থাকার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সেগুলোর মধ্যে দরিয়া-ই-নূর আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এত বছরেও সেই সন্দেহের অবসান হয়নি।
জাতীয় জাদুঘরের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে একবার ব্যাংকে থাকা নবাব পরিবারের অংলকারগুলো খুলে দেখার বিষয়ে আলোচনা হয় ভূমি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে। তবে ভল্টে থাকা প্যাকেটে হিরা না পাওয়া গেলে সেই দায় কে নেবে—এমন প্রশ্নের মুখে শেষ পর্যন্ত ওই উদ্যোগ নাকচ করে দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।
দরিয়া-ই-নূর আসলেই ব্যাংকের ভল্টে আছে কিনা—জানতে গত ৫ মে যোগাযোগ করা হয় সোনালী ব্যাংকের সদরঘাট করপোরেট শাখায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে দরিয়া-ই-নূর লেখা একটি প্যাকেট মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল স্থানীয় কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ৬ মে প্রথম আলোকে বলেন, ভল্টে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখার সেফ ডিপোজিটের সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি সিলগালা করা প্যাকেট আছে। তবে প্যাকেটে হিরা আছে কিনা, তা তাঁরা জানেন না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি দরিয়া-ই-নূরের বিষয়ে জানতে ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিনে সোনালী ব্যাকের স্থানীয় কার্যালয়ে যান। তবে অনুমোদন না থাকায় তাঁদের ভল্টে থাকা প্যাকেট দেখানো হয়নি।
৭ মে ভূমি সংস্কার বোর্ডের নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা নওয়াব এস্টেটের একটি সেফ ডিপোজিট ছিল সদরঘাট শাখায়। যেখানে দরিয়া-ই-নূর লেখা সিলগালা করা একটি প্যাকেট ছিল। নিরাপত্তা শঙ্কায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে সেফ ডিপোজিট থেকে ওই প্যাকেট মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা কখনো এই হিরা দেখেননি। হিরা আসলে আছে কিনা তাও তাঁদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাঁদের তথ্য বলছে, ১৯০৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দরিয়া-ই-নূর পরিদর্শন হয়নি। আবার ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে মোট আটবার দরিয়া-ই-নূর পরিদর্শন করা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন তাঁদের কাছে নেই।
ইরানে তাহলে কোন দরিয়া-ই-নূর?
পারস্যের শাসক নাদির শাহ ১৭৩৯ সালে ভারত আক্রমণ করে মুঘলদের কাছ থেকে কোহিনূরের সঙ্গে দরিয়া-ই-নূর হিরাও দখল করে নেন। বিভিন্ন হাত ঘুরে হিরাটি পারস্যের রাজমুকুটে জায়গা করে নেয়। বর্তমানে তা সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরানে সংরক্ষিত আছে।
ব্রিটানিকা ও ইরান প্যারাডাইস ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তেহরানের ইমাম খোমেনি স্কয়ারে সেন্ট্রাল ব্যাংকের ন্যাশনাল জুয়েলারি মিউজিয়ামে দরিয়া-ই-নূর হিরা সংরক্ষিত আছে। গোলাপি এই হিরাও টেবিল কাটের এবং অন্ধ্র প্রদেশের গোলকুন্ডা খনি থেকে পাওয়া গিয়েছিল।
ঢাকার নবাবদের হিরা দরিয়া-ই-নূরও টেবিল কাট এবং অন্ধ্র প্রদেশের গোলকুন্ডা খনি থেকে পাওয়া। সেদিক থেকে মিল থাকলেও বলা হচ্ছে ইরানের দরিয়া-ই-নূর বিশ্বের অন্যতম বড় হীরকখণ্ড। যার ওজন প্রায় ১৮২ ক্যারেট। আর ঢাকার নবাবদের হিরাটি ২৬ ক্যারেটের।
হিরার খোঁজে সরকার
ভূমি সংস্কার বোর্ড বলছে, দরিয়া-ই-নূরের রহস্য সমাধানে আগ্রহী বর্তমান সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের আগ্রহে দরিয়া-ই-নূরের রহস্য উন্মোচনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ওই কমিটি প্যাকেট খুলে দেখবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ৭ মে প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৪৭-এ দেশ ভাগ এরপর ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এত বছরেও ভল্টে থাকা ওই প্যাকেট খুলে দেখা হয়নি। এর জন্য রত্ন বিশারদসহ আরও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সবকিছু সমন্বয় করে আমরা এটা খুলে দেখার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই হিরার বিষয়ে আমাদের উৎসাহ আছে।’
দরিয়া-ই-নূর প্রদর্শনীর দাবি
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোহিনুর হিরা ছিল ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার বিশেষ সম্পত্তি। এই হিরা সর্বপ্রথম জনসমক্ষে দেখা যায় ২০০২ সালে, কুইন মাদারের মৃত্যুর পর তাঁর কফিনের ওপরে। আর স্মিথসোনিয়ান সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোহিনুর হিরা বর্তমানে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের মালিকানাধীন। এটি টাওয়ার অব লন্ডনের জুয়েল হাউসে অন্যান্য ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলের সঙ্গে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
দরিয়া-ই-নূর হিরার সত্য উন্মোচন হলে একইভাবে তা জাদুঘরে প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছেন ইতিহাস গবেষকেরা। সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরিয়া ই নূরের ঐতিহাসিক মূল্য আছে। এটাকে অবশ্যই প্রকাশ্যে আনা উচিত।’
হিরার সঙ্গে থাকা নবাব পরিবারের বাকি রত্নগুলোও প্রকাশ্যে আনার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় জাদুঘরের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, যেকোনো জিনিস যার ঐতিহাসিক মূল্য আছে, জাদুঘর সেটা কাস্টডিয়ান হিসেবে রাখতে পারে। জাদুঘরের উচিত এটা উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেওয়া এবং সেটা যথাযথভাবে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন'দরিয়া-এ নূর' ও নবাব সলিমুল্লাহর দেনার দায়২৯ জানুয়ারি ২০১৮