ছয় নারী উদ্যোক্তা পেলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মাননা
Published: 11th, May 2025 GMT
২৫ বছর আগে ৫ হাজার টাকার মূলধন নিয়ে রাঙামাটিতে পাহাড়ি নারীদের জন্য তাঁতের তৈরি পোশাকের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মে রাখাইন বার্মিজ স্টোর’ গড়ে তোলেন ছেনছেন রাখাইন নামের এক নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে পিনন, খাদি, ব্লাউজ, খামি উৎপাদন ও বিপণন করে প্রতিষ্ঠানটি। ছেনছেন রাখাইনের প্রতিষ্ঠানটিসহ মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলার’ সমাপনী দিনে আজ রোববার বিকেলে এসব উদ্যোক্তার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
আয়োজকেরা জানান, ৩৯ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তার মধ্য থেকে মোট ছয়জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এসব উদ্যোক্তা ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের নারী উদ্যোক্তা রোজি আহমেদের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’। প্রতিষ্ঠানটি কোকো ফাইবার (নারিকেলের খোসা থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তন্তু) কাপড় ও তুলা দিয়ে ১৩ ধরনের পাখির বাসা, বিড়ালের ঘড়, সফট টয়, পেট টয়সহ নানা সামগ্রী তৈরি করে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপের দেশ জার্মানি, গ্রিস ও বেলজিয়ামেও তাদের পণ্য রপ্তানি করছে। সম্মাননা পাওয়া আরেক নারী উদ্যোক্তা ফরিদপুরের লাম ক্রিয়েশনের স্বত্বাধিকারী সাবেকুন নাহার। পাট, সুতা, ছন ও কচুরিপানা দিয়ে তিনি তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের মাদুর, ঝুড়ি ও ব্যাগ। সিলেটের রোজিনা আলিমের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মিনার কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস’ তৈরি করছে মোমবাতি, নারিকেল তেল, শর্ষের তেল, আগরবাতি, বোরিক পাউডার, মশার কয়েল, গ্লিসারিন, ভ্যাসলিনসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য। ঢাকার সাভারের আয়েশা বেগমের প্রতিষ্ঠান ‘মুসলিম জুয়েলারি ওয়ার্কশপ’ তৈরি করছে রুপা, তামা ও পিতলের নানা ধরনের অলংকার। মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রাও অর্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীর নারী উদ্যোক্তা হোসনে আরার প্রতিষ্ঠান ‘আকলিমা সেবা ক্লিনিক ও নার্সিং হোম’। ২০০৪ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর গৃহিণী থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। নারীর স্বাস্থ্যসেবায় ও সামাজিক সেবায় ভূমিকা রাখায় এশিয়া স্বপ্নপুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে কবি সুফিয়া কামাল স্বর্ণপদকও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, দেশের উন্নয়নে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা জরুরি। নারী উদ্যোক্তাদের একটি নিয়মিত মঞ্চ দেওয়ার জন্য এ ধরনের মেলা প্রতিবছর আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা জানান, চার দিনের নারী উদ্যোক্তা মেলায় প্রায় ৬০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, এ ধরনের মেলা নারী উদ্যোক্তাদের দূরদর্শিতা, দায়িত্বশীলতা ও স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মানসিকতা বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো.
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ছয় নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে এবারের মেলায় অংশগ্রহণের জন্য ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৩ থেকে ৭ আগস্ট) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেনে শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি ১ লাখ টাকা।
শনিবার (৯ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (৩৫.৩৫) পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক (১৬.৬৫) পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ কমে ২ হাজার ৯৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক (০.১৮) পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৭০ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) (৪১.২৫) পয়েন্ট বা ৪.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩৫ পয়েন্টে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে কাজ করবে এডিবি ও বিএসইসি
লভ্যাংশ দেবে না আইসিবির ৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ড
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, দর কমেছে ২২৭টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৮টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই (৯.৩৬) পয়েন্ট বা ০.০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক (০.৩২) শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক (০.০৯) শতাংশ কমে ৯ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৮৫ শতাংশ বেড়ে ৯৫৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.৩১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ২৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, দর কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
ঢাকা/এনটি/ইভা