Samakal:
2025-09-18@03:26:35 GMT

কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি?

Published: 13th, May 2025 GMT

কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. সাঈদ-উর রহমানের একটি বইয়ের নাম ‘অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ’। বইটির প্রকাশকাল নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগ। বইটিতে তিনি সে সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেশের অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রার কথা তুলে ধরেছিলেন। তারপর কেটে গেছে প্রায় ৩০ বছর। কিন্তু এখনও আমাদের দেশের সঠিক গন্তব্য ঠাহর করা যাচ্ছে না। একটি প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়– ‘ভাই, কোন দিকে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি?’ এ প্রশ্নের সঠিক জবাব কারও কাছে আছে বলে মনে হয় না। সবাই ধন্দে পড়ে গেছেন বাংলাদেশ নামে এই জাতি-রাষ্ট্রটির গন্তব্য নিয়ে। 

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি ভোট কারচুপি, ভোটারবিহীন নির্বাচন, আইশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেচ্ছ ব্যবহার-অপব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণসহ এমন কোনো হীনপন্থা নেই, যা গ্রহণ করেননি। শুধু আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ছাড়া দেশের প্রায় সব মানুষ সেই দুঃশাসন থেকে যে কোনো উপায়ে মুক্তি কামনা করছিল প্রতি মুহূর্তে। 

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালের শেষ দিকে মানুষ তেমনি বলত– কবে শেষ হবে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি? আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আন্দোলনে একের পর এক ব্যর্থতায় মানুষ হয়ে পড়েছিল হতাশ। অনেকেরই মনে এই প্রতীতি জন্মেছিল, এই অমানিশার অন্ধকার বোধ হয় কাটবে না। ঠিক এমন সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটায়। আওয়ামী লীগ বাদে গোটা দেশের মানুষ সেই পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়।

এক পর্যায়ে গঠিত হয় ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ সর্বাত্মক সমর্থন জানায় সেই সরকারের প্রতি। এমনকি যখন বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ব্যাপক রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলা হলো, তখন দেশবাসী ও  রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে এক রকম ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিয়েছিল। সবারই ধারণা ছিল, একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার গঠনের দিকে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর ৯ মাস পার হতে চললেও রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো অবয়ব-আকৃতি এখনও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। গঠিত কমিশনগুলোর মিটিং ও সংবাদ ব্রিফিংয়েই সংস্কার ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের জন্য বারবার আহ্বান জানানো হলেও সরকারের আচরণে সামনে এগোনোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

এরই মধ্যে দেশে নতুন রাজনৈতিক মেরূকরণ শুরু হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা শিক্ষার্থীরা সরকারের অংশীদারিত্বসহ সর্বক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপৃত হয়। এরই মধ্যে তারা একটি রাজনৈতিক দলও গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে চাপ দিয়ে দাবি আদায়ের প্রবণতা তাদের পেয়ে বসেছে। অনেকেই নতুন সংগঠনকে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বাই প্রডাক্ট’ হিসেবে দেখছেন। 

দলটির সর্বশেষ সাফল্য হলো সরকারের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করানো। ৮ মে রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনাকে উছিলা করে তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। প্রথমে তারা এ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ঘেরাও করলেও পরে তা শাহবাগ চৌরাস্তায় সরিয়ে নেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। তিন দিনের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকার তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আর পরদিন নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। 

গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল সবার। কিন্তু তখন সরকারের উপদেষ্টারা বলেছিলেন, তেমন চিন্তাভাবনা নেই। এ অবস্থায় রাজনীতির অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করে কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? 

এদিকে শাহবাগ চৌরাস্তার আন্দোলনে আহ্বান জানানো সত্ত্বেও বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এনসিপি ও তদীয় সঙ্গীরা দলটির ওপর বেজায় নাখোশ। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা প্রচারের পর শাহবাগে ‘বিএনপি ভুয়া’ বলে ধ্বনি দেওয়া এবং বিএনপিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে বলে একটি অংশের দাবি জানানোর ঘটনায়। একই সঙ্গে সমাবেশে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হলে এক দল লোকের আপত্তি এবং তা বন্ধ করে দেওয়া জাতীয় ইতিহাসকে মুছে ফেলার ইঙ্গিত কিনা– সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।   
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন, নবগঠিত এনসিপির জন্য পর্যাপ্ত পরিসর তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা কায়দাকানুন করছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির একসময়ের জোট ও ভোটসঙ্গী দলটির মদত রয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর এখন তারা বিএনপির দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যদিও বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার মতো কোনো সুযোগ বা ক্ষমতা এদের নেই, তবে নানা রকম অসংগত চাপে ফেলে দলটিকে পর্যুদস্ত করে রাখা তাদের সম্মিলিত উদ্দেশ্য হতে পারে। 

এদিকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। তাঁর এ উক্তি কি ‘অন্তর্বর্তী’ শাসন প্রলম্বিত করার ইঙ্গিত? উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনমনের প্রশ্ন– বাংলাদেশ সঠিক গন্তব্যে এগিয়ে যেতে পারবে, নাকি পথ হারাবে? 

মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও 
রাজনীতি বিশ্লেষক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ন ষ দ ধ কর র র জন ত ক পর স থ ত সরক র র ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ