কাউনিয়ায় শিক্ষার্থী-এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ
Published: 14th, May 2025 GMT
রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা।
বুধবার (১৪ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় নিরাপদ সড়কের ৭ দফা দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সচেতন নাগরিক ফোরামের ব্যানারে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত রবিবার (১২ মে) সকালে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ একই পরিবারের তিন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকেই শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ দলমত নির্বিশেষে কাউনিয়ার মীরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন।
সকাল ১০টার দিকে তারা রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এসময় তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন সচেতন নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া মামুন, সদস্য আজাদসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ।
এসময় বিক্ষোভকারীরা জানান, অপ্রশস্ত সড়কে বেপরোয়া যান চলাচলের কারণে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। প্রশাসনের নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা জানান, নিরাপদ সড়কের এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসরক কর্তৃপক্ষের কোন কর্মকর্তা আশায় আন্দোলন চলমান রয়েছে। সকাল দশটা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধ অবস্থান কর্মসূচি সাড়ে ১২টা নাগাদ চলমান রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, দ্রুত নিরাপদ সড়ক ও ফোরলেন রাস্তায় উন্নীতকরণের আশ্বাস না মিললে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। পরবর্তীতে এই আন্দোলন আরো তীব্র হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।
এদিকে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে সড়কে অবস্থান করে আন্দোলন চলমান রাখায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহন এবং ঢাকা রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরিবহনগুলো সড়কের দুধারে আটকা পরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার রংপুরের কাউনিয়ার বেইলি ব্রিজ এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার মিরবাগ রেল গেট এলাকার আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী রুবি বেগম (৩৪), তাদের তিন বছরের শিশু রহমত এবং আশরাফুলের ভাতিজি আনারুল ইসলামের মেয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী সিনহা বেগম (১৬)। সিনহা স্থানীয় মিরবাগ গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এরপর থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী।
ঢাকা/আমিরুল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন ক উন য চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার তিন কৃতী সন্তান আশিকুর রহমান, মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব ও খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। তাদের মধ্যে আশিক শিক্ষায়, ধ্রুব স্বাস্থ্যে এবং গৌরব প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই তিন তরুণ তুর্কি চাকরি জীবনে প্রবেশের পর সমাজের অবহেলিত এবং অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ।
আশিকুর রহমান (২৮) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও মরহুমা আলেয়া খাতুনের সন্তান। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। নিজের সাফল্যের পেছনে বাবা ও ভাইয়ের অবদানের কথা জানিয়েছেন এই যুবক।
আরো পড়ুন:
৪৮তম বিশেষ বিসিএসের প্রিলিমিনারি ১৮ জুলাই
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন
আশিক বলেন, “আমার বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার আর আমাদের ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। তিনি কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। বাবা আর মেজো ভাই সবুজের জন্য আজ আমি এখানে।”
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরপর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিক।
আশিক ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব পাবনা পৌরসভার শালগাড়িয়া কসাইপট্টি মহল্লার মো. হাফিজুর রহমান ও মোছা. নাহিদ খানমের সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা হাফিজুর রহমান পাবনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। মা গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ধ্রুব।
ফাহিম রহমান ধ্রুব ২০১৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ২০২১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। ২০২৩ সালে সেখানে ইন্টার্ন শেষ করেন। ইন্টার্ন চলা অবস্থায় বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন এই যুবক।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ধ্রুব বলেন, “মা-বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ-সাহস আর সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আমার শিক্ষক আর ব্যাচমেটদেরও অবদান রয়েছে। সবার দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় আজ আমি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।”
বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। পাবনা পৌরসভার ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা-মরহুমা গুলশান আরা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।
গৌরবের বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গৌরব ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
গৌরব স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়ালেখার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, “এই সফলতার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন-ভালো করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।”
বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে এই তিন তুর্কী বলেন, সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু ভাবা যাবে না। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস শক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত গড়ে ৪ ঘণ্টা পড়ালেখায় সময় দিতে হবে। নিজের সাবজেক্টের বাইরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আয়ত্বে রাখতে হবে।
তারা বলেন, ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
ভবিষ্যত জীবনে সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এই তিন যুবক। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
ঢাকা/মাসুদ