দেশের ই-কমার্স খাতের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ২০২৫-২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন ৩১ মে হওয়ার কথা থাকলেও আজ বুধবার এক চিঠিতে নির্বাচন স্থগিত করেছে ই-ক্যাবের নির্বাচন বোর্ড। বিষয়টি স্বীকার করে ই-ক্যাবের প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল; কিন্তু আজ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে ই-ক্যাবের কয়েকজন সদস্য ভোটার হতে না পারায় ও নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা কম থাকার অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর আবেদন করেছিলেন। আমরা সে আবেদন আমলে নিইনি, কারণ তাঁদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। কিন্তু তাঁরা পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন স্থগিতের আবেদন করেন। আমরা নতুন তারিখ ঘোষণা করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করব।’

নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে ই-ক্যাবের নির্বাচন বোর্ডের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ২০২৫-২৭ মেয়াদি দ্বিবার্ষিক-বার্ষিক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক গত ৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঘোষিত নির্বাচন তফসিলের সার্বিক কার্যক্রম অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো।’ নির্বাচন স্থগিত সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে নির্বাচন বোর্ডের সদস্য শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ‘টিম ইউনাইটেড’ ও ‘টিম টাইগার’ নামের দুটি প্যানেল ঘোষণা করেছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। নিজেদের প্যানেলের পক্ষে সদস্যদের কাছে প্রচারণাও চালাচ্ছিলেন তাঁরা। আর তাই হঠাৎ করে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ সদস্য ও প্রার্থীরা। এ বিষয়ে টিম টাইগার প্যানেলের প্রার্থী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। মাত্র এক–দুজন সদস্য নির্বাচন পেছানোর দাবি করেছেন। এর আগেও নির্বাচন পেছানো হয়েছে। নির্বাচন স্থগিতের পর নতুন করে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া কতটুকু ভালো হবে, তা আমার জানা নেই। আমরা ই-ক্যাব কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাচন পেছানোর কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তাঁরা জানিয়েছেন, ই-ক্যাব কার্যালয় থেকে কোনো কিছু করা হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

আরও পড়ুনই-ক্যাব নির্বাচনে ‘টিম টাইগার’ প্যানেলের আত্মপ্রকাশ১২ মে ২০২৫

টিম ইউনাইটেড প্যানেলের প্রার্থী মোছা জান্নাতুল হক বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হওয়াটা সদস্য, ভোটার ও প্রার্থী সবার জন্য খুবই হতাশাজনক। দীর্ঘদিন প্রশাসক থাকার কারণে সংগঠনের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন কাজ ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। এর ফলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি  সংগঠনও পিছিয়ে পড়ছে। এর আগেও একবার নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এভাবে চলতে থাকলে ই-ক্যাবের সদস্যদের গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হবে এবং সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে যথা সময়ে নির্বাচন আয়োজন চাই আমরা।’

উল্লেখ্য, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৫০২ জন।

আরও পড়ুনই-ক্যাব নির্বাচনের জন্য প্যানেল ঘোষণা করল ‘টিম ইউনাইটেড’০৯ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন

সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।

কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।

জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।

প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।

এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।

বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।

এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।

আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোবিপ্রবি উপাচার্যের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতবিনিময়
  • এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • জানুয়ারি থেকে বিশেষ বৃত্তি পাবেন জবি শিক্ষার্থীরা
  • অকার্যকর ডেমু ট্রেন কেনায় রেলওয়ের সাবেক মহাপরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন অংশ নিল ভারত
  • তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
  • পুরোনো পথে সরকার, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি
  • এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি
  • তিন জেলার ডিসি প্রত্যাহার