চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে পিটিয়ে রক্তাক্তের অভিযোগ
Published: 14th, May 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় আলমগীর মিয়া (২৫) নামে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী যুবককে চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের চকসালং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আলমগীর উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নে রসুলপুর গ্রামের আলতা মিয়ার ছেলে। তিনি কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, গত সোমবার আলমগীর স্থানীয় নয়াবাজার থেকে পথ হারিয়ে টিলাগাঁও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে চলে যান। সেখানে চোর সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য কয়ছর রশীদের উপস্থিতিতে কয়েকজন মিলে খুঁটিতে বেঁধে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তার বাড়ির পাশে তাকে রেখে যায়।
আলমগীরের চাচাতো ভাই আবু রায়হান বলেন, ‘আমার ভাই মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মঙ্গলবার ভোরে আহত অবস্থায় সে বাড়িতে আসে। সে কোথায় ছিল কিছু বলতে পারছে না। শুধু বলছে, তাকে চোর সন্দেহে খুব মারধর করা হয়েছে। সে অনেকবার অনুরোধ করছে তাকে না মারার জন্য, কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি। এমন মেরেছে যে শরীর থেকে রক্ত পড়ছিল। পরবর্তীতে আমরা জেনেছি, ইউপি সদস্য কয়ছর রশীদের উপস্থিতিতে এলাকার কয়েকজন খুব পিটিয়েছে তাকে। সে বাড়ি ঠিকানা যতটুকু পেরেছে, বলেছে। বাবা-চাচার নাম বলেছে, তার পরও সবাই থাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। এ ঘটনায় আমরা কুলাউড়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য কয়ছর রশীদ বলেন, ‘আমি যাওয়ার আগে লোকজন চোর সন্দেহ হয়তো পিটিয়েছে। আমার এলাকায় কিছুদিন আগে ২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এজন্য এলাকাবাসী চোর সন্দেহ করেছে। পরে প্রতিবন্ধী বুঝতে পেরে বাড়িতে পাঠিয়েছি।’
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আপছার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
Untitled Jun 30, 2025 05:16 pm
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দলটির সাম্প্রতিক চীন সফর বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে চীনের সমর্থনের বিষয়টি উঠে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব কেমন দেখা গেছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) দেখেছি।’
পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এর নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর উন্নতি, আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি এবং তাঁর ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর ইতিবাচকতার কথা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে।
এই বৈঠকে লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদানের কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দেশটিকে অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাঁদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।'
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সঙ্গে সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবেশ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির সক্ষমতা, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ, কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা এবং চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগও আলোচ্য সূচিতে ছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল।
চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলেও জানান দলের মহাসচিব।
সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফরে গিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার। আজ তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।