অ্যাথলেট ফুট একধরনের ছত্রাকজনিত বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন, যা মূলত পায়ের তলার চামড়া, দুই আঙুলের মাঝখানে, কোমরের ভাঁজে, মাথার তালুতে হয়। অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব দ্রুত অন্যের মধ্যে ছড়ায়। আক্রান্ত স্থানে অনেক সময় লাল রিংয়ের মতো র‍্যাশ হয় বলে একে রিংওয়ার্মও বলে। আর চিকিত্সাবিজ্ঞানে বলে টেনিয়া পেডিস।

কাদের হয়

অ্যাথলেট বা ক্রীড়াবিদেরা এই সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন বলেই এর নাম হয়েছে অ্যাথলেট ফুট। খেলোয়াড় ছাড়াও যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, স্থূলতায় ভুগছেন, তাঁদের মধ্যে অ্যাথলেট ফুট বেশি দেখা যায়।

কীভাবে হয়

আর্দ্রতা ও গরম পরিবেশে ছত্রাক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

ঘামযুক্ত পা, ভেজা মোজা বা জুতা দীর্ঘক্ষণ পরলে ঝুঁকি বেশি।

পাবলিক শাওয়ার, সুইমিংপুল, জিমে খালি পায়ে হাঁটলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত থাকলে সহজে সংক্রমণ হতে পারে।

আরও পড়ুনগোড়ালি ব্যথা কমাতে যা করতে পারেন৩১ আগস্ট ২০২৩

লক্ষণ কী

পায়ের আঙুলের ফাঁকে লাল বা সাদা হয়ে ফেটে যায় ও ভেজা ভেজা থাকে। সব সময় জ্বালাপোড়া হয়। আক্রান্ত স্থানে ভীষণ চুলকানি থাকে। পায়ে হয় ভীষণ দুর্গন্ধ। কোমরে বা মাথায় এই সমস্যা হলে লাল র‍্যাশ হয়, অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়।

চিকিত্সা কী

চিকিত্সকের পরামর্শে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু বা পাউডার ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় ওষুধ খেতে হতে পারে। চিকিত্সা নিতে হয় এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত।

প্রতিরোধের উপায়

পা সব সময় শুকনা ও পরিষ্কার রাখতে হবে।

ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, যেমন জামা, তোয়ালে, চিরুনি, ব্রাশ অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যাবে না।

না ধোয়া কাপড়, অন্যের ব্যবহৃত জার্সি, জিম ম্যাট, স্পোর্টস সরঞ্জাম ব্যবহার করা যাবে না।

খেলাধুলার পর অবশ্যই গোসল করতে হবে এবং শুকনা তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

সুইমিংপুল, জিম, লকার রুমের মতো জায়গায় খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এসব জায়গায় সব সময় স্লিপার বা স্যান্ডেল পরতে হবে।

প্রতিদিন মোজা ও অন্তর্বাস পরিবর্তন করতে হবে।

পরিবারের অন্য সদস্যদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন আছে কি না, দেখতে হবে ও চিকিত্সা করতে হবে।

ডা.

আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালটেন্ট, ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

আরও পড়ুনফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে যা করতে হবে২২ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন নারীরা, বেশিরভাগ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের

বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সময়টা এখন সবচেয়ে অনুকূল, অন্তত পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। অনেক নারী এখন নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন। তাঁরা এখন আর কেবল স্বামী বা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে ধনী হচ্ছেন না।

গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের (জিইএম) তথ্য অনুযায়ী, এখন বিশ্বজুড়ে ৬৫৮ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি ৮০ লাখ নারী উদ্যোক্তা ও কোম্পানি মালিক আছেন। যদিও পুরুষ উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনো বেশি—৭৭২ মিলিয়ন বা ৭৭ কোটি ২০ লাখ। এ ক্ষেত্রে নারীরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। আশার কথা হলো, নারী উদ্যোক্তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তাঁদের পথচলার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন—এবং পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক নতুন উদ্যোগে হাত দিয়েছেন তাঁরা। খবর ফোর্বস ম্যাগাজিনের

নিজ উদ্যোগে শতকোটিপতি হওয়া শীর্ষ ৫০ জন নারীর তালিকা করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। এই নারীদের প্রায় অর্ধেক—২৪ জনই—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। এরপর আছে উত্তর আমেরিকা, সেখান থেকে আছেন ২০ জন আর ইউরোপের ৬ জন।

দেশভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ১৮ জন; কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যের দুজন করে এবং অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, ইতালি, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের একজন করে।

জিইএমের নারীবিষয়ক প্রতিবেদনের লেখক অ্যামান্ডা এলাম বলছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন। নারীরা এমন সব ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেসব উদ্যোগ বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ করছে; এমন পরিবেশেই বড় কোম্পানিগুলো কাজ করতে চায়।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন।

এই অগ্রযাত্রাকে স্বীকৃতি জানাতে প্রথমবারের মতো ফোর্বস প্রকাশ করেছে ‘বিশ্বের ৫০ জন সবচেয়ে স্ব-উদ্যোগী ধনী নারীর তালিকা’। তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ কোলাজেনের ব্যবসা করেন, কেউ কয়লার খনিতে, কেউ আবার প্রযুক্তি বা ফ্যাশন জগতে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন। ১৩টি দেশ ও ৪টি মহাদেশ থেকে তাঁরা এই তালিকায় উঠে এসেছেন, যদিও এই তালিকায় এখনো আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার নারী নেই।

সব মিলিয়ে এই ৫০ জন নারীর সম্মিলিত সম্পদ ২৭৬ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার—গড় হিসাবে প্রায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৫৫০ কোটি ডলার করে।

তালিকার শীর্ষে আছেন সুইজারল্যান্ডের জাহাজ ব্যবসায়ী রাফায়েলা অ্যাপনটে-ডায়ামান্ট। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। স্বামী জিয়ানলুইজি অ্যাপনটের সঙ্গে মিলে তিনি গড়ে তুলেছেন মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)—বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানি। মাত্র ২ লাখ ডলারের ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।

দ্বিতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ান হেনড্রিক্স—যিনি ছাদ ও বাড়ির বাইরের নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি সাপ্লাইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। তালিকায় থাকা মার্কিন নারীদের মধ্যে আছেন অপরাহ উইনফ্রে, শেরিল স্যান্ডবার্গ প্রমুখ।

এ তালিকায় স্থান পেতে হলে হলে কমপক্ষে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ থাকতে হয়। সেই হিসাবে গুইন শটওয়েল সেলিব্রিটি কিম কার্ডাশিয়ান কিংবা টেইলর সুইফট এখনো সেই মানদণ্ড অর্জন করতে পারেননি।

এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনেরও ১৮ জন নারী আছেন। শীর্ষে আছেন ঝোং হুইজুয়ান, তিনি একসময় রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হানশ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি এখন ফুসফুস ক্যানসার, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের ওষুধ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বার্ষিক আয় প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার।

চীনে নারী উদ্যোক্তারা অনেক আগে থেকেই অগ্রণী। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অধ্যাপক মিং জার চেন লিখেছেন, চীনা সংস্কৃতিতে নারী বরাবরই ক্ষমতার জায়গায় থেকেছেন। এমনকি চীনা ভাষায় ‘স্ত্রী’ আর ‘সমান’ শব্দ দুটি সমার্থক—‘চি’।

প্রযুক্তিতে নারীদের দাপট

তালিকার ৫০ জন নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত আছে প্রযুক্তি খাতে—১৪ জন নারী এই খাতে সফলতা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ঝোউ কুনফেই; তাঁর প্রতিষ্ঠান লেন্স টেকনোলজি এখন অ্যাপল, স্যামসাং ও টেসলার মতো কোম্পানির জন্য টাচস্ক্রিন সরবরাহ করে। একসময় তিনি ছিলেন সাধারণ শ্রমিক। এখন তাঁর কোম্পানির বার্ষিক আয় ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৯৫০ কোটি ডলার।

সবচেয়ে কম বয়সী উদ্যোক্তা হলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলানি পারকিনস (৩৮)। ২০১৩ সালে তিনি ক্যানভা নামের ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেন। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাশিয়ার তাতিয়ানা কিম (৪৯), একসময় ইংরেজি পড়াতেন, এখন দেশটির সবচেয়ে বড় অনলাইন খুচরা প্রতিষ্ঠান ওয়ারইল্ডবেরিস পরিচালনা করেন।

ফোর্বস–এর সংবাদে বলা হয়েছে, নারীরা এগিয়েছে ঠিক; কিন্তু বাস্তবতা হলো, নারী ও পুরুষ ধনীদের মধ্যে ব্যবধান এখনো অনেক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ