মোহাম্মদপুরে ‘ছিনতাইয়ের সময়’ ধরা দুইজন, একজনকে পিটিয়ে হত্যা
Published: 16th, May 2025 GMT
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘ছিনতাইয়ের সময়’ দুইজনকে ধরে জনতা পিটুনি দেওয়ার পর হাসপাতালে একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরেকজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি হাউজিং এলাকায় এ ঘটনায় নিহত যুবকের নাম রাকিব (২৮)। আহত মিলন (৩৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, সকালে কয়েকজন যুবক বসিলার ওই আবাসিক এলাকায় দেশি অস্ত্রসহ ছিনতাইয়ে নেমেছিল। এসময় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে দুইজনকে ধরে ফেলেন। বাকিরা পালিয়ে যান। গণপিটুনিতে আহত দুইজনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাকিব নামের একজন মারা যান।
তিনি বলেন, রাকিবের বিরুদ্ধে এর আগে মোহাম্মদপুর থানায় একটি চুরির মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ট য় হত য ম হ ম মদপ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছোটু ও নানাভাইকে স্মরণ
প্রিয় কাউকে স্মরণ করে ১ জুলাই কিছু লেখা আমার জন্য চ্যালেঞ্জের। দিনটি তাঁদের দুজনের স্মৃতির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। তাঁরাও হয়তো এটাই চাইতেন। আমার ছটফটে ছোট ভাই এমন এক জায়গায় গেছে যে তাকে পরপারে পাড়ি জমানো নানাভাইয়ের সঙ্গে একই দিনে স্মরণ করা ছাড়া উপায় নেই।
ছোটু (ফারাজ হোসেন) আর নানাভাই (লতিফুর রহমান)—আজ এই দুজনের কথা স্মরণ করে আমি ভাবছি, নানাভাইয়ের সঙ্গে ২০ বছরের একটা ছেলের কী মিল থাকতে পারে। দেখছি, অনেক মিল। তাঁদের শান্ত উপস্থিতি বাসার সবাই অনুভব করে। তাঁদের আত্মবিশ্বাস নীরবে অবিশ্বাস্য শক্তির জোগান দেয়। ঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার গভীর অনুভূতি ছিল দুজনের। ছিল প্রতিকূলতার মুখে পিছিয়ে না যাওয়ার শক্তি।
ফারাজ আর আমি যখন ছোট্ট, তখন নানাভাই ও নানুমাকে নতুন স্কুলবর্ষ শুরুর আগে একদিন সন্ধ্যায় দেখতে যাই। সে রাতে নানাভাই আমাদের সেন্ট এডমন্ডসের বোর্ডিং স্কুলে তাঁর প্রথম দিনের ঘটনা শোনান। এক শীতের সকালে নতুন শিশুশিক্ষার্থী হিসেবে তিনি শিলংয়ের স্কুলটিতে গিয়েছিলেন। তাঁর এক বছরের বড় একজন শিক্ষার্থী তাঁকে বিরক্ত করা শুরু করেন। নানাভাইয়ের কথায়, ওই শিক্ষার্থী ‘মজা করার অভিনয়’ করছিলেন। তাই নিজেকে ঠিক রাখতে কিছু একটা করতে হয়েছিল তাঁকে। নিজের চেয়ে বড় ছেলেটিকে থামাতে তিনি তাঁকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে প্রতিবাদী শিশুর পরিচয় দেন। কেননা জানতেন, কাউকে উৎপীড়ন করা ঠিক নয়। ঘটনাটি শুনিয়ে তিনি আমাদের শেখাতে চেয়েছেন, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও আমাদের অবশ্যই লড়াই করার শক্তি জোগাতে হবে।
সেই ছোট লতিফুর রহমান পরে ওই একই চেতনায় জীবন কাটিয়েছেন। নিজের, পরিবারের ও প্রিয়জনদের রক্ষায় উঠে দাঁড়িয়েছেন।
একজন তরুণ হিসেবে ফারাজকে নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বৃহত্তর পরিসরে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি হয় সে। নিজের জীবন যখন বিপদাপন্ন, ফারাজ তখন লড়াই, রক্ষা করা ও মন্দ শক্তির কাছে হার না-মানাকে বেছে নিয়েছে।
১ জুলাই নানাভাই ও ছোটুকে স্মরণ করতে হলে তাঁদের একই রকমের ন্যায়নিষ্ঠ মূল্যবোধ আমাদের সমুন্নত রাখা উচিত; যে মূল্যবোধ দুজনই তাঁদের জীবনে ধারণ করেছেন। বিরাট বিপর্যয়, অযাচিত চাপ ও ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভালো কিছু করতে আমাদের অবিচল থাকা উচিত। তাঁদের সম্মানে সেভাবেই দাঁড়ানো উচিত, যা তাঁরা দেখিয়ে গেছেন।
লতিফুর রহমান ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ফারাজ হোসেন সেই ছেলে, যে হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় বীরোচিতভাবে জীবন দিয়েছে। তবে আমার আর আমার পরিবারের কাছে তাঁরা সব সময় একজন নানাভাই আর একজন ছোটু হয়েই থাকবে। নানাভাই আমাদের নানা এবং কারও স্বামী, কারও বাবা; আর ছোটু আমার ভাই এবং কারও ছেলে, কারও নাতি। আমাদের প্রিয় লতিফুর রহমান ও ফারাজ হোসেন ন্যায়ের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন।
আজকের এই দিনে আমরা আমাদের এ দুই অভিভাবক দেবদূতকে একসঙ্গে স্মরণ করি। নানাভাই ও ছোটুকে সত্যিকারভাবে স্মরণ করা হবে যদি আমরা সাহস নিয়ে বাঁচি, যা তাঁরা আমাদের মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন। প্রার্থনা করি, তাঁদের ছড়িয়ে যাওয়া আলো আগের চেয়ে উজ্জ্বল হোক, আর যে শক্তি ও সাহস তাঁরা দিয়ে গেছেন, তা যেন কখনো মলিন না হয়।
সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা।