উপকূলীয় জনপদ শ্যামনগরে সুপেয় পানির দাবিতে ম্যারাথন
Published: 16th, May 2025 GMT
উপকূলীয় জনপদ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুপেয় পানির দাবিতে ব্যতিক্রমধর্মী এক ম্যারাথন হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল আটটার দিকে ম্যারাথন শ্যামনগরের গ্যারেজ বাজার থেকে শুরু হয়ে বুড়িগোয়ালিনীর আকাশনীলা ইকো ট্যুরিজম চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
শ্যামনগর শরুব ইয়ুথ টিমের আয়োজনে ‘রান ফর ওয়াটার’ শীর্ষক এই ম্যারাথনে ১০২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, তরুণ-তরুণী ও পরিবেশকর্মী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা ‘সরকারি সেবার আওতায় সুপেয় পানি চাই’ দাবি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ম্যারাথনে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন মো.
অনুষ্ঠান শেষে আকাশনীলা চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হয়। বক্তব্য দেন তনুশ্রী মণ্ডল, এস এম রাশিদুল ইসলাম, মাসুদ রানা, অর্পিতা মণ্ডল, হালিমা খাতুন, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, রাজীব বৈদ্য, হাবিবুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, নিরাপদ পানির দাবি মানুষের একটি মৌলিক মানবাধিকার। পানির অপর নাম জীবন। অথচ উপকূলীয় মানুষ যুগ যুগ ধরে খাওয়ার পানি থেকে বঞ্চিত। তাঁরা তাঁদের চাহিদামতো খাওয়ার পানি পান না। এ জন্য খাওয়ার পানি তাঁদের হিসাব করে খেতে হয়। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শ্যামনগর শরুব ইয়ুথ টিমের পরিচালক এস এম জান্নাতুল নাঈম বলেন, উপকূলীয় এই অঞ্চলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিরাপদ পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় নারীদের কয়েক কিলোমিটার হেঁটে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য তাঁদের দিনের একটা বড় সময় ব্যয় করতে হয়। আবার অনেকে পানি কিনে খান। এ সংকট তুলে ধরতেই এই ব্যতিক্রমী ম্যারাথনের আয়োজন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাঁকড়া চাষে বদলে যাচ্ছে উপকূলের নারীর জীবন
সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর। এ উপজেলার কোনো কোনো এলাকার রাস্তার দুই ধারে বিস্তৃত জলরাশি। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন তেমনই এক এলাকা। এ ইউনিয়নের কোনো কোনো এলাকায় আছে একের পর এক জলাশয়। এসব জলাশয় পার হতে গেলে চোখে পড়ে ভাসমান হাজার হাজার কালো ছিদ্রযুক্ত বাক্সের সারি। সেসব বাক্সে চাষ হয় কাঁকড়া। স্থানীয় লোকজন কাঁকড়া চাষের স্থানটিকে বলেন ‘কাঁকড়া পয়েন্ট’।
২২ সেপ্টেম্বর বুড়িগোয়ালিনীর পূর্ব দুর্গাবাটী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে কাঁকড়া পয়েন্ট। সেখানে কাজ করছেন নারী–পুরুষ। জলাশয়ের ওপারে টংঘর।
চলাচলের জন্য জলাশয়ের মাঝামাঝি স্থানে বাঁশ, কাঠ ও টিনের ছাউনি দেওয়া সেতু তৈরি করা হয়েছে। কাঁকড়া চাষের একটি প্রতিষ্ঠানের সেতুতে নেমে দেখা যায়, পাঁচজন কাজ করছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী। পুরুষ দুজন সুপারভাইজার, আর নারীরা ‘চেকার’। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, চেকারের কাজ হচ্ছে তিন ঘণ্টা পরপর বাক্স খুলে দেখা—কাঁকড়ার জন্য বাক্সের পানি ও পরিবেশ ঠিক আছে কি না।
তাঁরা চার দিন পরপর বাক্সের কাঁকড়াগুলোকে খাবার হিসেবে তেলাপিয়া মাছ টুকরা টুকরা করে দেন। এই প্রক্রিয়ায় সফট শেল বা নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষ হয়। আর এই চাষ ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার বিপুলসংখ্যক নারীর। কাঁকড়াচাষি ও বিশেষজ্ঞরা জানান, কাঁকড়া পয়েন্টে কাজ করা ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশই নারী। মূলত ‘চেকার’ হিসেবেই তাঁরা কাজ করেন।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস: মৎস্যসম্পদের মধ্যে চিংড়ির পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় কাঁকড়া। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে। কাঁকড়ার প্রায় ৯৮ শতাংশই রপ্তানি হয় চীনসহ ১৭টি দেশে।কাঁকড়াজীবী নারীদের মতো গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় শ্রম দিয়ে অবদান রাখা নারীদের কথা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আজ ১৫ অক্টোবর বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস।
পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) রেসিলিয়েন্ট হোমস্টিড অ্যান্ড লাইভলিহুড সাপোর্ট টু দ্য ভালনারেবল কোস্টাল পিপল অব বাংলাদেশ (আরএইচএল) সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক শেখ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাতক্ষীরায় এখন সবচেয়ে বেশি কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। শুধু শ্যামনগর উপজেলায় কাঁকড়া খামার আছে। সেসব খামারে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি কাজ করেন। নারীরাই চালাচ্ছেন ছোট খামারগুলো। তিনি বলেন, ‘কাঁকড়া চাষে নারীদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বেশি। উপার্জনের অর্থ তাঁরা সন্তানের লেখাপড়া, স্বাস্থ্যে বেশি খরচ করেন। কয়েকটি পরিবারে দেখেছি, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করার ফলে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়েছে।’
বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দূর্গাবাটী গ্রামের তোতা এন্টারপ্রাইজে চাষের কাঁকড়া